হুমায়ূন আহমেদের শেষ কবিতা

0
250
Print Friendly, PDF & Email

হুমায়ূন আহমেদকে কাছ থেকে দেখিনি কখনোতবু তাঁর গল্প-উপন্যাস পড়ে আর নাটক দেখে মনের গহিনে বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তির সঙ্গে গড়ে তুলেছিলাম এক অলৌকিক যোগাযোগগত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা গিয়েছিলামকানাডায় ফিরে আসি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিসঙ্গে কবি ইকবাল হাসানজানালেন, টরন্টো পৌঁছেই তিনি নিউইয়র্ক যাবেন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতেউদ্দেশ্য, হুমায়ূন আহমেদকে উসর্গ করা তাঁর ও সমকাল-এর সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের বই পৌঁছে দেওয়া
হুমায়ূন আহমেদ তখন নিউইয়র্কে চিকিসাধীনইচ্ছে করলেই দেখা করা সম্ভব নয়তাই ইকবাল হাসানের সঙ্গে যাওয়ার সুযোগটি ছাড়লাম নাহুমায়ূন আহমেদের সাক্ষা পেতে মুক্তধারার বিশ্বজি সাহার স্ত্রী রুমা সাহা সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেনজানা গেল, তিনি কেমো নিচ্ছেন হাসপাতালেতিনি যেদিন কেমো নেন, সাধারণত সেদিন হাসপাতালে থেকে পরদিন বাসায় ফেরেনতবে আমরা সন্ধ্যার দিকে কিছুক্ষণের জন্য হাসপাতালে গিয়ে দেখা করতে পারি
বেলভিউ হাসপাতালকেবিনে বিছানায় আধশোয়া হুমায়ূন আহমেদপাশের চেয়ারে স্ত্রী শাওনমাঝখানে দাবার কোটে নিমগ্ন তাঁর চোখএকপাশে ল্যাপটপকোনো উত্তেজনা নেইচোখমুখে নেই কষ্টের কোনো ছাপ বা ব্যথার কাতরতাকেমোর কারণে চেহারায় কালো দাগ পড়েছেএদিক-ওদিক নল, গায়ে হাসপাতালের গাউন
ইকবাল হাসানকে দেখে খুশি হলেনএকটু উঠে বসে বিছানা দেখিয়ে বললেন, ইকবাল আসো, এখানে বসোরুমা আর আমি একটু দূরে চেয়ারে বসলামকত কথা! কথার মাঝখানে কৌতুক, কারও কারও সমালোচনা, হাসাহাসিসন্ধ্যাটি বদলে গেল এক আশ্চর্য ঘরোয়া আড্ডায়মূল কথক হুমায়ূন আহমেদতিনি অসম্ভব প্রাণোজ্জ্বল, যেন কোনো কষ্টই স্পর্শ করছে নাহঠা প্রশ্ন, চা খাবে তোমরা? বলেই হেসে উঠে বললেন, ও আচ্ছা, এখানে চা খাওয়াব কীভাবে? তার চেয়ে বরং কবির আগমন উপলক্ষে একটা কবিতা পড়ে শোনাইতারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বললেন, কী বলো?
হলুদ খামে ভরা কবিতাটি পাশেই রাখা ছিলহাসপাতালের কেবিনে বসেও যে তিনি লেখালেখি করেন, সে গল্পও শোনালেনএকদিন মগ্ন হয়ে লিখতে লিখতে অঝোর ধারায় কাঁদছেনএক বিদেশি হঠা তাঁর কেবিনে এসে হতবাকপ্রশ্ন করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? তিনি বললেন, আই উইশ টু বি অ্যান অথার ইন মাই কান্ট্রিআমি আমার চরিত্রদের খুব ভালোবাসিওদের দুঃখে আমি কাঁদি
এরপর হলুদ খামের ভেতর থেকে বের করে আনলেন কাগজটিবললেন, এটি আসলে একটি গানইচ্ছা আছে, সত্য সাহার ছেলেকে দিয়ে সুর করাব
হুমায়ূন আহমেদ পড়ে শোনালেন মাকে নিয়ে লেখা তাঁর কবিতাটিপুরো দৃশ্যটি আমি ভিডিও করলামআজ হঠা এত দিন পর সেই ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, ‘বেদনা কী ভাষায় রে মর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে

 

শেয়ার করুন