ঢাকা: প্রথম দু’দিন জোটসঙ্গী মৌলবাদী দল জামায়াত ইসলামির ডাকে, শেষ দিন বিএনপির। ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তিন দিনের সৌহার্দ্য-সফরের সব ক’দিনই হরতালের ডাক দিয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী জোট। এমনকী, প্রণববাবুর সঙ্গে সৌজন্য-সাক্ষাতের কর্মসূচিও খালেদা খারিজ করে দিয়েছিলেন নিজেদের ডাকা হরতালকে কারণ হিসেবে খাড়া করে।
প্রণববাবু কী ভাবে নিচ্ছেন বেগম জিয়ার এই আচরণকে? গত রাতে (মঙ্গলবার) বিশেষ বিমান ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’-এর সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই প্রণববাবুর কপালে ভাঁজ। একটু আগেই বলছিলেন শ্বশুরবাড়ির কথা, শিলাইদহ, নড়াইল বা টাঙ্গাইলে মানুষের সঙ্গে কথাবার্তায় উঠে আসা নানা প্রসঙ্গের কথা। তারপরই খালেদার আচরণ নিয়ে প্রশ্নে যেন ধাক্কা খেলেন রাষ্ট্রপতি। মুখে বললেন, “আমি তো তাঁকে সময় দিয়েছিলাম। কেন এলেন না, তা তিনিই বলতে পারেন!” চেয়ার ছেড়ে উঠেই পড়েন প্রণববাবু। উড়ে আসে প্রশ্ন, এটা কি অসৌজন্য নয়? আর কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। কিন্তু তাঁর অভিব্যক্তিই জবাব হয়ে উঠেছে অনেক প্রশ্নের। তিনি ভয়ানক ক্ষুব্ধ খালেদার আচরণে।
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বা ঢাকার সাংসদ, বামপন্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রণববাবু। কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী, আর এক বামপন্থী নেতা হাসানুল হক ইনু-সহ আরও অনেকের সঙ্গেও। সকলের কাছেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান, এই যে লাগাতার হরতাল, হিংসা, প্রাণহানি কোথায় চলেছে বাংলাদেশ?
এরশাদ ছাড়া সকলেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, শাহবাগ আন্দোলনের কথা। মেনন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কথা ছিল, অথচ শাসকদের আপসে আজও হয়ে ওঠেনি, শাহবাগ তাকেই দাবি হিসেবে তুলে ধরেছে। ইনু বলেছেন, একাত্তরেও স্বাধীনতার দাবিকে ইসলামের সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, আজও হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, সে দিনের মতোই বাংলাদেশের মানুষ এবারও জিতবেন। বাংলাদেশ মৌলবাদীদের রেয়াত করেনি। চেয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী রাজাকাররা মানবতা-বিরোধী অপরাধের শাস্তি পাক। সরকার সে ব্যবস্থা করেছে। তাই খাপ্পা মৌলবাদীরা। কিন্তু তরুণরা এগিয়ে এসেছেন, তাই কেউ সুবিধে করতে পারবে না।
এই সঙ্কটকে হাতিয়ার করে সেনাবাহিনী কি ফের বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করতে পারে? আওয়ামী লিগ সেই আশঙ্কার কথা বলছেন। কিন্তু বাকি নেতারা ভাবছেন, সেনাবাহিনী আর ক্ষমতা দখলে আগ্রহী নয়। মানুষের সমর্থন যে ভাবে রাজাকারদের বিচারের পক্ষে সংহত হয়েছে, সেনারা তাকে মর্যাদাই দেয়।
কিন্তু খালেদার এই আচরণ? গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেই খালেদা আন্দোলনের বিরোধিতা করে মৌলবাদীদের পাশে দাঁড়ান। তথ্যমন্ত্রী ইনুর মতে, জামায়াতের নেতারা জেলে। তাই খালেদা মৌলবাদী শক্তির আমিরের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এখন শাহবাগ-বিরোধীদের মসিহা। এই আন্দোলনকে ভারতের সৃষ্টি বলেও প্রচার করছেন খালেদা। ইসলাম বিপন্ন এমন ধ্বনিও তুলেছেন। মেনন বা ইনুর মতে, এই পরিস্থিতিতে প্রণববাবুর সঙ্গে সৌজন্য-সাক্ষাৎ খারিজ করা ছাড়া খালেদার উপায় ছিল না। এতে বোঝা যাচ্ছে, মৌলবাদীদের নেতৃত্ব দিতে তিনি ব্যক্তিগত সম্পকর্কে বলি দিতেও রাজি।
মার্চ ০৭, ২০১৩
আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে।