সরকার পতনের লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

0
136
Print Friendly, PDF & Email

ডেস্ক রিপোর্ট: সরকার পতনের লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপিএবার নেতা-কর্মীদের সবাইকে একযোগে মাঠে নামাতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই তদারকি শুরু করছেন
দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলনের মাঠে শক্ত ভূমিকা রাখতে গত কয়েক দিনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ডেকে খালেদা জিয়া প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেনতিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলাদা কথা বলেছেন
সর্বশেষ গত রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের বৈঠক হয়েছেওই বৈঠকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে
দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, কয়েক দিন ধরে সারা দেশে যে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তা সামাল দিতে পারেনি সরকারজনগণের জানমাল রক্ষায় প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছেএই অবস্থায় সরকার পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে আছেতাই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে রাজপথে কঠোর অবস্থান নিতে পারলে সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও ছাত্রদলের নেতাদের ডেকে কথা বলেছেনএ সময় খালেদা জিয়া মঙ্গলবারের হরতালে ঢাকায় নেতা-কর্মীদের দায়সারা অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে অসন্তোষ প্রকাশ করেনতিনি ঢাকার দুই প্রভাবশালী নেতার কাছে এর কারণ জানতে চানএকই সঙ্গে সামনের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন
একই সূত্র জানায়, এরপর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের তিন নেতার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন খালেদা জিয়াআলেম-ওলামাদের রাজপথে সক্রিয় রাখতে ইসলামী ঐক্যজোটকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনিএতে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা দেওয়ার আশ্বাসও দেন বিরোধীদলীয় নেতাবৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন বিএনপির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এ সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় নাএখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামতে হবে
এরপর গত রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠক হয়সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সব কর্মসূচি ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়বৈঠকে জোটের শরিকেরা হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধরনের কঠোর কর্মসূচির প্রস্তাব করেনআজকের হরতাল শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে
এক দফার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকার যে নগ্নতায় নেমে এসেছে, তাতে সরকারের পদত্যাগ করানো ছাড়া বিকল্প নেইআমরা সবাই এ সিদ্ধান্তে একমত হয়েছি
নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট দুই বছর ধরে আন্দোলন করছেদাবি আদায়ে আগামী জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে বড় ধরনের গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল বিএনপিরদলটির নেতাদের ধারণা ছিল, আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে একপর্যায়ে সরকার তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবেকিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রায় নিয়ে শাহবাগের আন্দোলন এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ে দেশজুড়ে সহিংসতার পর রাজনীতির মোড় ঘুরে যায়
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তাঁরা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে পাশ কাটাতে সরকার শাহবাগের আন্দোলনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে রাজনৈতিক নানা কলাকৌশল গ্রহণ করেছেএতে তত্ত্বাবধায়কের দাবিটি চাপা পড়ে যায়এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়কের আশা বাদ দিয়ে এখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন তা স্বীকার করেনতিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বিদ্যমান সংকটের সমাধান দিতে পারছে না বলে সরকার পুলিশকে ব্যবহার করছেসভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে নামানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারছেএ অবস্থায় বিরোধী দলের কাছে সরকার পতন আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই
তাহলে কি বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের দাবি বাদ দিয়েছে? জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের পতন হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে
বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতকে সামাল দেওয়ার পর সরকার বিএনপিকে কোণঠাসা করার তপরতা শুরু করবেদলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক রহমানের দুর্নীতিসংক্রান্ত কয়েকটি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হতে পারেএর আগে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো টেনে নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হবেসরকারের এ পরিকল্পনা সফল হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি চাপা পড়ে যাবেএ কারণে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেই খালেদা জিয়া আন্দোলনের ব্যাপারে কঠোর হন বলে জানা গেছে
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা দিলে বিকেল থেকে সারা দেশে জামায়াত-শিবির সহিংসতা শুরু করেওই রাতেই খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর থেকে চিকিসা শেষে দেশে ফেরেনততক্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেখালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেনপরদিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে সরকারকে গণহত্যাবন্ধের আহ্বান জানিয়ে এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার হরতালের ডাক দেন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার পতনের লক্ষ্যে চলতি মাসেই ধারাবাহিক কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হতে পারেবিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন কঠিন ও চূড়ান্ত প্রতিরোধে সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া মানুষের আর কোনো গত্যন্তর নেইআর ফিরে দেখার কিছু নেই

 

৭ মার্চ/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন