ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: দেশের চলমান সহিংস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি গোটা অর্থনীতির ওপরই নেতিবাচকপ্রভাব ফেলছে। হরতাল ও খুনোখুনিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য।
এসবকথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন(এফবিসিসিআই)। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিরসনে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানজানিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠনটি।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবারঅর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে এক সৌজন্য বৈঠকে এফবিসিসিআইয়েরনেতারা এসব কথা বলেন। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদেরনেতৃত্বে সংগঠনটির প্রায় সব পরিচালক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘খুবই বিপদের মধ্যে আছি। জিম্মি হয়ে পড়েছি আমরা। এ থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।’
দলগতভাবেব্যবসায়ীদের যে যার আদর্শ থাকতে পারে উল্লেখ করে কাজী আকরাম বলেন, ‘দুইদলকেই আমরা শ্রদ্ধাভক্তি করি। কারণ, যেকোনো ব্যক্তির তুলনায় রাজনীতিবিদেরাবেশি দেশপ্রেমিক।’
কাজী আকরাম আরও বলেন, এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনীতিহওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। বিদেশিরা আসছে, কিন্তু তারাভালো কিছু দেখছে না। হরতাল, খুনখারাবি ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এঅবস্থার পরিবর্তন জরুরি। পরিবর্তনের জন্যই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বলেতিনি মনে করেন।
পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশেওকাজী আকরাম বলেন, ‘আপনাকেও কাজ করতে হবে। মুখ ঘুরিয়ে রাখলে চলবে না। আমরাচাই শান্তি, দেশের উন্নতি।’
এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনআইন করে হরতাল বন্ধ করার পরামর্শ দেন। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আইন করে বন্ধ করতে না পারলে গণভোটের আয়োজন করুন।’
হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কয় দিনে যে তাণ্ডব দেখলাম! কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিষয়ে শেষ পর্যন্ত তোসবাই আইনের কাছেই গেলেন। মাঝখানে অনভিপ্রেত তাণ্ডব হয়ে গেল।’
বৈঠকেঅর্থমন্ত্রী কথা বলেন দেশের অর্থনীতিসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। কিছুসমস্যা থাকা সত্ত্বেও অর্থবছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিরহার ৭ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাম্প্রতিকপরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নৈরাজ্য নয়, নৈরাজ্যেরপ্রচেষ্টা। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।’
সংবাদমাধ্যম যতটা প্রচার করছে, দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি তত খারাপ নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। তিনিবলেন, এত যে গোলমালের কথা বলা হচ্ছে, তা হয়েছে মূলত ১৫টি জেলায়। এর মধ্যেসাতটি জেলায় বেশি হয়েছে। অর্থাৎ, দেশের কিছু এলাকায় অস্থিতিশীলতা থাকলেওপুরো দেশ ঠিক রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময়ই একটা কথা বলি। এদেশে হরতাল চলবে না। অর্থনীতি এত বড় হচ্ছে যে হরতাল থাকা অসম্ভব।’ ব্যাংকসহগোটা আর্থিক খাতের ওপর আস্থা না হারাতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেনঅর্থমন্ত্রী।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বলেন, হল-মার্ককেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকগুলো বিপদে রয়েছে, ব্যাবসায়ীরাও বিপদে। সুদের হারএকক অঙ্কে নামিয়ে না আনলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবেন না বলে তিনি মনেকরেন। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিমআলী, পরিচালক সেলিম ওসমান, আবদুল হক প্রমুখ সুদের হার কমানোর প্রসঙ্গে কথাবলেন। তবে অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো কথা বলেননি।
কয়লা উত্তোলনপ্রসঙ্গ: অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের বর্তমান মেয়াদেই কয়লা উত্তোলনেরসিদ্ধান্ত হবে। তিনি মনে করেন, উন্মুক্ত পদ্ধতি ছাড়া বেশি কয়লা উত্তোলন করাযাবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে বেশ কিছুমানুষের ঘরবাড়ি স্থানান্তর করতে হবে। উত্তোলন পদ্ধতি উন্মুক্ত না হলে ২০থেকে ২৫ শতাংশ কয়লা কম উত্তোলন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্যাস-সংকট ওবিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বড়আকারের বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা, যাতে কয়লা ব্যবহার করা হবে।
এরই মধ্যেআড়াই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেদুটি চুক্তি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
৭ মার্চ/নিউজরুম