আশরাফুল ও ‘শ্রীলঙ্কা’

0
136
Print Friendly, PDF & Email

স্পোর্টস ডেস্ক:শ্রীলঙ্কানামটাই তাঁর মনে একটা অনুরণন তোলেসবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরিররেকর্ড গড়ে এখানেই শুরু টেস্ট ক্যারিয়ারএশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরএকটি ম্যাচ খেলতেই সেবার শ্রীলঙ্কা আসাএর পর শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটিদ্বিপাক্ষিক সিরিজেই ছিলেনসেঞ্চুরি আছে আরেকটিক্যারিয়ার গড় যেখানে২২.৬০, শ্রীলঙ্কায় খেলা ৭ টেস্টে গড় ৩৯.৯২এবার প্রথমে দলেই ছিলেন নাহয়তো শ্রীলঙ্কা বলেই পাকেচক্রে ঠিকই জায়গা পেয়ে গেছেন শেষ মুহূর্তেশ্রীলঙ্কায় আগের চারটি টেস্ট সফরের স্মৃতিচারণার সঙ্গে এবারের প্রত্যাশারকথাও শুনুন মোহাম্মদ আশরাফুলের মুখেই

২০০১: এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
মোহাম্মদ আশরাফুল: ২৬ ও ১১৪
সেবারআমরা পাকিস্তানে একটা ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কায় এসেছিলামপাকিস্তানে থাকতেইবোর্ড প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে বলে দিয়েছিলেন, ‘পরের টেস্টেতুমি খেলবেকিন্তু ম্যাচের আগের দিন নেটে আমাকে অনেক পরে ব্যাটিং করতেদিলপরে জানলাম, আমাকে নেওয়া হয়েছে বোলার হিসেবেপ্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ৯০ রানে অলআউট হয়ে গেলআমি সর্বোচ্চ ২৬ করলামযখন ব্যাটিং করছিলাম, উইকেটের পেছন থেকে সাঙ্গাকারা বারবার বলছিল, ‘তুমি কি টিমের হাইয়েস্টস্কোরার হতে চাও নাকি?’ আরেকটা জিনিস মনে আছে, আমি এসএসসির (সিংহলিজস্পোর্টস ক্লাব) স্কোরবোর্ডটা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না২৬ রান যে করেছি, সেটিপরে জেনেছিদ্বিতীয় ইনিংসে ডিজে ভাই (অধিনায়ক নাঈমুর রহমান) আমাকে ব্যাটিংঅর্ডারে তুলে দিলেনআমার আত্মবিশ্বাস ছিল, রান করবকারণ প্রথম ইনিংসেমুরালিকে খেলতে আমার সমস্যা হয়নিওয়াহিদ স্যারের ক্যাম্পে সাগর নামে একজনবোলার ছিল, ও উল্টা মারতে পারতআমি তাই মুরালির দুসরা বা লেগ স্পিনারেরগুগলি বুঝতে পারতামলাঞ্চের সময় আমি ৬৮ রানে অপরাজিতসবাই বলল, সেঞ্চুরিকরতে হবেআমার মনে হচ্ছিল, আমি পারবমনে আছে, স্লিপ থেকে জয়াসুরিয়াবারবার মুরালিকে বলছিল দুসরা মারতেআর মুরালি বলছিল, মারছি তো, কিন্তু কাজহচ্ছে নাসেঞ্চুরির পর বুঝতে পারছিলাম না, কী করব!

২০০২: আশরাফুল
২ ইনিংস, ৭৬ রান, গড় ৩৮
সেবারপ্রথম টেস্টে আমাকে খেলানো হয়নিদ্বিতীয় টেস্টে খেলেছিলামপ্রথম ইনিংসেভালো করিনি, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলাম ৭৫সেই দলে খেলে অনেক মজা পেয়েছিলামতখন দলে আকরাম ভাই, বুলবুল ভাই, মনি ভাইরা ছিলেনউনাদের খেলা দেখে দেখেবড় হয়েছিউনারা আইসিসি ট্রফি জিতিয়েছিলেন বলেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাসপেয়েছিআমি ছিলাম দলে সবচেয়ে ছোটসবাই আমাকে খুব আদর করতেনআমিও খুবউপভোগ করতামশ্রীলঙ্কায় হোটেলে ওঠার সময় ঢোলটোল বাজিয়ে আমাদের অভ্যর্থনাজানানো হতোআমি ওদের সঙ্গে নাচতামসত্যি কথা বললে, তখনই ন্যাশনাল টিমেখেলে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছিআগের বছর সেঞ্চুরি করেছিলাম বলে শ্রীলঙ্কায়যেখানেই গেছি, লোকজনের খুব মনোযোগ পেয়েছি

২০০৫: আশরাফুল
৪ ইনিংস, ৮৫ রান, গড় ২১.২৫
এইট্যুরের বেশি কিছু মনে পড়ছে নাসুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) ক্যাপ্টেনছিলেন, ডেভ হোয়াটমোর কোচএটা মনে আছেশাহরিয়ার নাফীসের ডেব্যু হয়েছিল, একটা ফিফটি মেরেছিলআর কিছু কেন যেন মনে করতে পারছি না

২০০৭: আশরাফুল
৬ ইনিংস, ২১৮ রান, গড় ৪৩.৬০
অধিনায়কহিসেবে আমার প্রথম ট্যুরসেটা ছিল তিন টেস্টের সিরিজতিন টেস্টেই আমরাবাজেভাবে হেরেছিলামতবে সিরিজ শুরুর আগেই আমার বিশ্বাস ছিল, অন্তত একটাসেঞ্চুরি করবইদ্বিতীয় টেস্টে করেও ছিলামতবে ওই সিরিজটির কথা ভাবলেনিজের সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি মনে পড়ে সাঙ্গাকারার কথাপ্রথম টেস্টে পুলমারতে গিয়ে আউট হওয়ার পর পরের দুই টেস্টে ও প্রথম ৫০-৬০ রানের মধ্যে কোনোপুলই মারেনিশর্ট বল পেলেই বসে পড়েছেওই দুই টেস্টেই ও ডাবল সেঞ্চুরিকরেছিলটেস্টে ভালো করতে না পারলেও ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচের মধ্যেদুটিতেই আমাদের ভালো সুযোগ ছিলকিন্তু ব্যাটিংটা ভালো করতে পারিনি বলেআমরা সেই সুযোগটা নিতে পারিনিআমি নিজেও ভালো করিনি (৪, ২৯ ও ২০)

এবার কী হবে
এরআগে যতবার শ্রীলঙ্কায় এসেছি, ওদের চারজন প্লেয়ার আমাদের খুব ভুগিয়েছেমুরালি-ভাস-জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারাজয়াসুরিয়া-অরবিন্দ ডি সিলভারাও ভালোখেলেছে, তবে ওই চারজনই বেশি জ্বালিয়েছেআরেকটা বাঁহাতি ওপেনার ছিল, কী যেননাম…কী যেন নাম….ও হ্যাঁ, ভ্যানডর্টও আমাদের সঙ্গে খুব ভালো করততবেমূল ছিল ওই চারজনইএবার ওদের তিনজনই নেইএখনকার দলেও ভালো ভালো খেলোয়াড়আছেতবে তেমন ভয় পাওয়ার মতো কেউ নেইএবার তাই আমাদের জন্য ভালো সুযোগশ্রীলঙ্কায় আমরা কখনো কিছু জিতিনিটেস্ট ম্যাচ জেতা হয়তো এবারও কঠিন, কারণসে জন্য ২০টি উইকেট নিতে হবেতবে অন্তত একটি টেস্ট ড্র করা খুবই সম্ভবওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আমি আরও বেশি আশাবাদীহ্যাঁ, সাকিব নেই, কিন্তু ওকেছাড়াই তো আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিব্যক্তিগতভাবে কী চাই, সেটি না-ইবলিতবে দুই টেস্টে অন্তত একটা সেঞ্চুরি তো আশা করিই

শ্রীলঙ্কার যা সবচেয়ে ভালো লাগে
আন্ডারনাইনটিন দিয়ে শুরু করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়েশ্রীলঙ্কায় প্রায় সাত-আটবার এসেছিএই দেশটাকে আমার খুব ভালো লাগেলোকজনখুব ভালোসবচেয়ে ভালো লাগে এরা খেলাটাকে খেলা হিসেবেই দেখেমনে আছে, একবার লাসিথ মালিঙ্গাকে নিয়ে ক্রিসকেটে (কলম্বোর) খেতে গেছিলোকজন ওর চেয়েবেশি আমাকেই হাই-হ্যালোকরছেশ্রীলঙ্কানরাও ক্রিকেট ভালোবাসেতবে ওরাভারত-পাকিস্তান বা আমাদের দেশের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে পাগলামি করে নামনেকরে, খেলাটা ওদের কাজএদিক থেকে এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা একেবারেই ব্যতিক্রমবরং ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমি মিল খুঁজে পাইআমার মনে হয়, কারণেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা অনেক ভালো খেলেকারণ, ওদের ওপর চাপটা কম

 

৭ মার্চ/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন