স্পোর্টস ডেস্ক:‘শ্রীলঙ্কা’ নামটাই তাঁর মনে একটা অনুরণন তোলে। সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরিররেকর্ড গড়ে এখানেই শুরু টেস্ট ক্যারিয়ার। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেরএকটি ম্যাচ খেলতেই সেবার শ্রীলঙ্কা আসা। এর পর শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটিদ্বিপাক্ষিক সিরিজেই ছিলেন। সেঞ্চুরি আছে আরেকটি। ক্যারিয়ার গড় যেখানে২২.৬০, শ্রীলঙ্কায় খেলা ৭ টেস্টে গড় ৩৯.৯২। এবার প্রথমে দলেই ছিলেন না।হয়তো শ্রীলঙ্কা বলেই পাকেচক্রে ঠিকই জায়গা পেয়ে গেছেন শেষ মুহূর্তে।শ্রীলঙ্কায় আগের চারটি টেস্ট সফরের স্মৃতিচারণার সঙ্গে এবারের প্রত্যাশারকথাও শুনুন মোহাম্মদ আশরাফুলের মুখেই
২০০১: এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
মোহাম্মদ আশরাফুল: ২৬ ও ১১৪
সেবারআমরা পাকিস্তানে একটা ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কায় এসেছিলাম। পাকিস্তানে থাকতেইবোর্ড প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে বলে দিয়েছিলেন, ‘পরের টেস্টেতুমি খেলবে।’ কিন্তু ম্যাচের আগের দিন নেটে আমাকে অনেক পরে ব্যাটিং করতেদিল। পরে জানলাম, আমাকে নেওয়া হয়েছে বোলার হিসেবে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ৯০ রানে অলআউট হয়ে গেল। আমি সর্বোচ্চ ২৬ করলাম। যখন ব্যাটিং করছিলাম, উইকেটের পেছন থেকে সাঙ্গাকারা বারবার বলছিল, ‘তুমি কি টিমের হাইয়েস্টস্কোরার হতে চাও নাকি?’ আরেকটা জিনিস মনে আছে, আমি এসএসসির (সিংহলিজস্পোর্টস ক্লাব) স্কোরবোর্ডটা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না। ২৬ রান যে করেছি, সেটিপরে জেনেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে ডিজে ভাই (অধিনায়ক নাঈমুর রহমান) আমাকে ব্যাটিংঅর্ডারে তুলে দিলেন। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, রান করব। কারণ প্রথম ইনিংসেমুরালিকে খেলতে আমার সমস্যা হয়নি। ওয়াহিদ স্যারের ক্যাম্পে সাগর নামে একজনবোলার ছিল, ও উল্টা মারতে পারত। আমি তাই মুরালির দুসরা বা লেগ স্পিনারেরগুগলি বুঝতে পারতাম। লাঞ্চের সময় আমি ৬৮ রানে অপরাজিত। সবাই বলল, সেঞ্চুরিকরতে হবে। আমার মনে হচ্ছিল, আমি পারব। মনে আছে, স্লিপ থেকে জয়াসুরিয়াবারবার মুরালিকে বলছিল দুসরা মারতে। আর মুরালি বলছিল, মারছি তো, কিন্তু কাজহচ্ছে না। সেঞ্চুরির পর বুঝতে পারছিলাম না, কী করব!
২০০২: আশরাফুল
২ ইনিংস, ৭৬ রান, গড় ৩৮
সেবারপ্রথম টেস্টে আমাকে খেলানো হয়নি। দ্বিতীয় টেস্টে খেলেছিলাম। প্রথম ইনিংসেভালো করিনি, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলাম ৭৫। সেই দলে খেলে অনেক মজা পেয়েছিলাম।তখন দলে আকরাম ভাই, বুলবুল ভাই, মনি ভাইরা ছিলেন। উনাদের খেলা দেখে দেখেবড় হয়েছি। উনারা আইসিসি ট্রফি জিতিয়েছিলেন বলেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাসপেয়েছি। আমি ছিলাম দলে সবচেয়ে ছোট। সবাই আমাকে খুব আদর করতেন। আমিও খুবউপভোগ করতাম। শ্রীলঙ্কায় হোটেলে ওঠার সময় ঢোলটোল বাজিয়ে আমাদের অভ্যর্থনাজানানো হতো। আমি ওদের সঙ্গে নাচতাম। সত্যি কথা বললে, তখনই ন্যাশনাল টিমেখেলে সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি। আগের বছর সেঞ্চুরি করেছিলাম বলে শ্রীলঙ্কায়যেখানেই গেছি, লোকজনের খুব মনোযোগ পেয়েছি।
২০০৫: আশরাফুল
৪ ইনিংস, ৮৫ রান, গড় ২১.২৫
এইট্যুরের বেশি কিছু মনে পড়ছে না। সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) ক্যাপ্টেনছিলেন, ডেভ হোয়াটমোর কোচ—এটা মনে আছে। শাহরিয়ার নাফীসের ডেব্যু হয়েছিল, ওএকটা ফিফটি মেরেছিল। আর কিছু কেন যেন মনে করতে পারছি না।
২০০৭: আশরাফুল
৬ ইনিংস, ২১৮ রান, গড় ৪৩.৬০
অধিনায়কহিসেবে আমার প্রথম ট্যুর। সেটা ছিল তিন টেস্টের সিরিজ। তিন টেস্টেই আমরাবাজেভাবে হেরেছিলাম। তবে সিরিজ শুরুর আগেই আমার বিশ্বাস ছিল, অন্তত একটাসেঞ্চুরি করবই। দ্বিতীয় টেস্টে করেও ছিলাম। তবে ওই সিরিজটির কথা ভাবলেনিজের সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি মনে পড়ে সাঙ্গাকারার কথা। প্রথম টেস্টে পুলমারতে গিয়ে আউট হওয়ার পর পরের দুই টেস্টে ও প্রথম ৫০-৬০ রানের মধ্যে কোনোপুলই মারেনি। শর্ট বল পেলেই বসে পড়েছে। ওই দুই টেস্টেই ও ডাবল সেঞ্চুরিকরেছিল। টেস্টে ভালো করতে না পারলেও ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচের মধ্যেদুটিতেই আমাদের ভালো সুযোগ ছিল। কিন্তু ব্যাটিংটা ভালো করতে পারিনি বলেআমরা সেই সুযোগটা নিতে পারিনি। আমি নিজেও ভালো করিনি (৪, ২৯ ও ২০)।
এবার কী হবে
এরআগে যতবার শ্রীলঙ্কায় এসেছি, ওদের চারজন প্লেয়ার আমাদের খুব ভুগিয়েছে।মুরালি-ভাস-জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারা। জয়াসুরিয়া-অরবিন্দ ডি সিলভারাও ভালোখেলেছে, তবে ওই চারজনই বেশি জ্বালিয়েছে। আরেকটা বাঁহাতি ওপেনার ছিল, কী যেননাম…কী যেন নাম….ও হ্যাঁ, ভ্যানডর্টও আমাদের সঙ্গে খুব ভালো করত। তবেমূল ছিল ওই চারজনই। এবার ওদের তিনজনই নেই। এখনকার দলেও ভালো ভালো খেলোয়াড়আছে। তবে তেমন ভয় পাওয়ার মতো কেউ নেই। এবার তাই আমাদের জন্য ভালো সুযোগ।শ্রীলঙ্কায় আমরা কখনো কিছু জিতিনি। টেস্ট ম্যাচ জেতা হয়তো এবারও কঠিন, কারণসে জন্য ২০টি উইকেট নিতে হবে। তবে অন্তত একটি টেস্ট ড্র করা খুবই সম্ভব।ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আমি আরও বেশি আশাবাদী। হ্যাঁ, সাকিব নেই, কিন্তু ওকেছাড়াই তো আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে কী চাই, সেটি না-ইবলি। তবে দুই টেস্টে অন্তত একটা সেঞ্চুরি তো আশা করিই।
শ্রীলঙ্কার যা সবচেয়ে ভালো লাগে
আন্ডারনাইনটিন দিয়ে শুরু করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়েশ্রীলঙ্কায় প্রায় সাত-আটবার এসেছি। এই দেশটাকে আমার খুব ভালো লাগে। লোকজনখুব ভালো। সবচেয়ে ভালো লাগে এরা খেলাটাকে খেলা হিসেবেই দেখে। মনে আছে, একবার লাসিথ মালিঙ্গাকে নিয়ে ক্রিসকেটে (কলম্বোর) খেতে গেছি। লোকজন ওর চেয়েবেশি আমাকেই ‘হাই-হ্যালো’ করছে। শ্রীলঙ্কানরাও ক্রিকেট ভালোবাসে। তবে ওরাভারত-পাকিস্তান বা আমাদের দেশের মতো ক্রিকেটারদের নিয়ে পাগলামি করে না। মনেকরে, খেলাটা ওদের কাজ। এদিক থেকে এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা একেবারেই ব্যতিক্রম।বরং ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমি মিল খুঁজে পাই। আমার মনে হয়, একারণেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা অনেক ভালো খেলে। কারণ, ওদের ওপর চাপটা কম।
৭ মার্চ/নিউজরুম