ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় অবস্থান করছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গতকাল মঙ্গলবারসব রেকর্ড অতিক্রম করে এক হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।পরিস্থিতিএমন হয়েছে যে এখন অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনের অতিরিক্তডলার রয়েছে। কারও কারও সংরক্ষণ সীমাও অতিক্রম করছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককেনিয়ম অনুসারে ডলার কিনতে হচ্ছে।
মুদ্রাবাজারে ডলারের তেমন চাহিদা নেই।টাকা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। মূল্যমান খোয়াচ্ছে মার্কিন ডলার। টাকাশক্তিশালী হলে প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্তহয়। মধ্য মেয়াদে এই দুই পক্ষই নিরুৎসাহিত হয়। যে কারণে বাংলাদেশের মতোদেশগুলোতে ডলারের মূল্যমান ধরে রাখার একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয়ব্যাংক। বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটা প্রচ্ছন্নতৎপরতা থাকে ডলারের মূল্য ধরে রাখার।
কিছুদিন আগেও এ পরিস্থিতি ছিল না।তখন ডলারের জন্য হাহাকার ছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করতে ডলার জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতেহচ্ছিল রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নানাবুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইডিবির কাছ থেকে শেষমেশ একটা বড় সহায়তামেলে। আগে ১০০ কোটি ডলারে একটা ঋণসুবিধার ব্যবস্থা ছিল। এখন তা ২৫০ কোটিতেউন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে যে পরিমাণ অর্থ জ্বালানি কিনতে ব্যয় হবে, আইডিবিতা পরিশোধ করবে। আর ছয় থেকে নয় মাসভিত্তিতে সেগুলোকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আবারসমসাময়িক সময়ে সার্বিক বৈদেশিক বিনিময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকেও সরকার ১০০ কোটি ডলার ঋণনেয়। যার একটি কিস্তির অর্থ জমা হয়েছে, আজ বুধবার আরও একটা কিস্তির ১৩কোটি ৯০ লাখ ডলার রিজার্ভে যোগ হবে।
কিন্তু এরই মধ্যে উল্টো পথে ঘুরছেচাকা। কেউ আর ডলার চায় না। যে সময়টা ডলারের জন্য হাহাকার ছিল, তখনআন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছিল হুহু করে। এখন পণ্যমূল্য কমে গেছে।তখন একই সঙ্গে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পচালুর একটা তোড়জোড় পড়ে গিয়েছিল। এর চাপ গিয়ে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রাররিজার্ভে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের চাহিদাওবাড়ে। যার জোগান দিতেও বেশি আমদানি করতে হয় বিপিসিকে। এখন তার পরিমাণ নাকমলেও বৃদ্ধির হার নেই।
সব মিলিয়ে সার্বিক আমদানি ব্যয় কমেছে। ব্যয়কমেছে দুভাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে যাওয়ায় আমদানি কমেছে, আবার পরিমাণেও কমেছে আমদানি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আমদানিও এখননেই। সামগ্রিক মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। কমেছে খাদ্যসহ অন্যান্যআমদানি। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে (সিঅ্যান্ডএফ) আগের বছরের একই সময়ে তুলনায়আমদানি ব্যয় কমেছে ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
কিন্তু রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিরয়েছে (জুলাই-জানুয়ারি) ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। শুধু জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে প্রবাসী-আয়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবৃদ্ধিরহার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্সএসেছে ১১৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।
এ পরিস্থিতিতে চলতি হিসাবে বাংলাদেশঅনেকখানি এগিয়ে গেছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে যা হয়েছে ৮৫ কোটি ডলার। এসবকারণেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিজার্ভ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল রিজার্ভহয় এক হাজার ৪১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত দুই মাসে রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলার করেবেড়েছে। ৭ জানুয়ারি রিজার্ভ বেড়ে এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার অতিক্রমকরেছিল। তারও আগে ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ এক হাজার ২০০ কোটি ডলারঅতিক্রম করেছিল।
এ পরিস্থিতিতে ডলারের চাহিদা না থাকায় মুদ্রাবাজারেপ্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৭৮ দশমিক ৮০ টাকা থেকে ৭৮ দশমিক ৮২ টাকা দরে। একবছর ব্যবধানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দর ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগেরমহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী ছাইদুর রহমান রিজার্ভ বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখকরেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, আমদানিকারকেরা নগদে পরিশোধের (সাইট এলসি)চেয়ে বাকিতে আমদানি (ডেফার্ড এলসি) করায় ব্যয় পরে গিয়ে পরিশোধ করতেহবে। ফলে রিজার্ভে তা জমেছে। দ্বিতীয়ত, আইডিবির কাছ থেকে বিপিসির ঋণেরকিস্তি-সহায়তায় মূল্য পরিশোধ করতে হবে আগামী এপ্রিল, মে ও জুনে মাসে। ফলেএই অর্থও জমেছে রিজার্ভে।
ছাইদুর রহমানের ধারণা, আগামী এপ্রিল থেকে জুনপর্যন্ত সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার বড় একটা চাহিদা তৈরি হবে। এর মধ্যেআমদানির ধীরগতিও কেটে যাবে। তখন আবার ডলার-টাকার মান পুনর্নির্ধারিত হবে।
৬ মার্চ/নিউজরুম