রাতারগুলের হিজল-করচ নিধন

0
224
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক:হিজলগাছের গোড়ায় কাদামাটির স্তূপমাটি সরাতেই দেখা গেল, সদ্য কেটে নেওয়া একটি গাছের গোড়াএভাবে এক-দুটি নয়, সিলেটে পর্যটকদের প্রিয় জলা-বন খ্যাত রাতারগুলে বন-ঝোপের আড়ালে শতাধিক কাটা গাছের গোড়ায় কাদামাটির প্রলেপ দেওয়াগাছ কাটা আড়াল করতে অভিনব এ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে একটি চক্র
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচগাছ উজাড়ে এ প্রবণতা বন্ধ না হলে অচিরেই জলা-বন ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্রসোয়াম্প ফরেস্ট’ (জলা-বন) হওয়ায় ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগচারদিক নদী ও হাওরবেষ্টিত এ বনে বেশির ভাগই প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওটা হিজল-করচগাছ
শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে বহুপথ দিয়ে রাতারগুলে প্রবেশ করা যায়প্রায় ৩৩১ একর আয়তনের পুরো এলাকা এ সময় অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েএই সুযোগে নির্বিচারে গাছ কাটা শুরু হয়েছে বলে আশপাশের এলাকাবাসী জানিয়েছেনগাছ কাটতে এ কৌশল অবলম্বনের কারণ সম্পর্কে সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় চার দশক ধরে রাতারগুল সংরক্ষিত থাকলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অনেকটা অজানা ছিল
গত বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসে প্রথম আলোয় রাতারগুলের একটি আলোকচিত্র নতুন করে পরিচিত করে তোলেসিলেটের সুন্দরবনহিসেবে প্রচার পেলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পর্যটকদের ভিড় বাড়েবর্ষাকাল শেষে পর্যটকদের ভিড় না থাকার সুবাদে এ কৌশলে এক-দুটি করে গাছের গোড়ায় মাটির প্রলেপ পড়ছে আর উজাড় হচ্ছে বনসিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা হয়ে রাতারগুলে প্রবেশমুখের (বর্ষায় এ দুই পথে রাতারগুলে ঢোকা যায়) দুই এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের হিসাবে ফাল্গুন মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক গাছ কেটে গোড়ায় মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে
এ কৌশলকে গাছ কাটা ঢাকার অভিনব একটি কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেদওয়ানগোয়াইনঘাটের চিরিঙ্গি এলাকা হয়ে ঘন বনের ভেতর ঢুকলে শতাধিক হিজল ও করচগাছের গোড়ায় মাটির প্রলেপ দেখার কথা জানিয়েছেন মেউয়ারকান্দির একাধিক বাসিন্দাবাইরের কোনো সংঘবদ্ধ গাছ চোর চক্র এ কাজ করছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেটের একদল পরিদর্শকও অভিনব কৌশলে গাছ কাটার বিষয়টি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিমগত ১০ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে কয়েকজন তরুণ বনে ঘুরছেনসংরক্ষিত হওয়ায় দেখভালের জন্য রাতারগুলে
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) তত্ত্বাবধানে একজন বিট কর্মকর্তা ও চারজন বনপ্রহরী রয়েছেনওই বিটের আশপাশ থেকেও গাছ কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বনপ্রহরীরাতবে গাছ কাটা ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে এ বিষয়ে তাঁরা কথা বলতে চাননিসিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল বাশার মিয়া জানান, হিজল-করচগাছের তেমন বাজারমূল্য নেইগাছ কাটা হলেও এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারেসংরক্ষিত বনে এ রকম হলে তো অবশ্যই ক্ষতির মুখে পড়তে হবেএ ব্যাপারে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে

 

 

 

৬ মার্চ/নিউজরুম

শেয়ার করুন