‘ডক্টর অব লজ’ পেলেন,রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি

0
129
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা: ভারত ও বাংলাদেশের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খেলার মাঠে ৪৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।

এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছান।
তাকে অভ্যর্থনা জানান, রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য মো. জিল্লুর রহমান এবং উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ‍কাছ থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে প্রণব মুখার্জি ভারত ও বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, ব্যবসা, ভিসা সহজীকরণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে পারে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “আমাকে সমাবর্তন বক্তা এবং সম্মাননা ডিগ্রি প্রদান করায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ভারত ও বাংলাদেশকে একযোগে উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবেই যে, আমাদের প্রবৃদ্ধি যেন আমাদের দুই দেশের জনগণের আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।”

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা উভয়েই একই বাধা মোকাবেলা করছি।  যেমন শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের একই শত্রু। সে হলো- দারিদ্র্য।”

তিনি “অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার শক্তি সর্বাধিক করতে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন” বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “একটি অগ্রগতির দেশ হিসেবে উঠে আসতে বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগাবার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।”

প্রণব মুখার্জি বলেন, “স্থল ও জল সম্পদের শক্তি ছাড়া  বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান এমনই একটা অবস্থায় আছে, যা একটা আশীর্বাদ। তা লাভজনকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন।”

এসময় তিনি সার্কের উদগাতা হিসেবে বাংলাদেশের নাম করেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণা বাংলাদেশেই জন্মলাভ করে।”

ভারত ও বাংলাদেশ এশিয় অঞ্চলে নেতৃত্ব দিতে পারে জানিয়ে প্রণব মুখার্জি আরও বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশ আমাদের এ অঞ্চলে ও এর বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর সমন্বয় করতে নেতৃত্ব দিতে পারে।”

সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে প্রণব মুখার্জি ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জাদুঘর পরিদর্শন ও পরিদর্শক বইয়ে সই করবেন।

সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

সাড়ে ৭টায় শুরু হবে `বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা` প্রদান অনুষ্ঠান। সেখানে সাইটেশন পড়বেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা।

অনুষ্ঠানে দুই দেশের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করবেন প্রণব মুখার্জি।

অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়।

সফরের শেষদিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে যাবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেখানে পতাকা উড়িয়ে ভারতীয় ঋণে কেনা ট্রেনের ইঞ্জিন ও ওয়াগন উদ্বোধন করবেন।

এরপর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টারমাক থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওয়ানা হবেন শ্বশুরের আদিনিবাস নড়াইলের উদ্দেশে।

ফার্স্ট লেডি এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন। নড়াইলের ভদ্রবিলায় মন্দির পরিদর্শন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

পরে নড়াইল থেকে যাবেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি পরিদর্শন ও চারা রোপন করবেন প্রণব মুখার্জি।

দুপুর দেড়টায় নড়াইল থেকে যাবেন টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমসে। সেখানে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে কুমুদিনী লাইব্রেরি, কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন তিনি।

ভারতেশ্বরী হোমস পরিদর্শন এবং সেখানে হোমসের ছাত্রীদের অংশগ্রহণে ডিসপ্লেও উপভোগ করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

মধ্যাহ্নভোজের পর তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা টাঙ্গাইল থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন।

এসময় দুই দেশের প্রতিনিধিদলের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা ছাড়বেন তিনি।

বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পাঞ্জাবি ও ফার্স্টলেডি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়কে শাড়ি উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া উপহার থাকছে প্রণবের পরিবারের সদস্যদের জন্যও।  রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানও তাদের উপহারসামগ্রী দেবেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, প্রায় চার দশক পর ভারতের কোনো রাষ্ট্রপতি ঢাকায় আসলেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি। প্রণব মুখার্জি এমন এক সময় বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

 মার্চ ০৪, ২০১৩

শেয়ার করুন