ঢাকা: ’৭১ এর মাবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রতিকৃতি চাদেঁ দেখা যাওয়ার গুজব ছড়ানোকে বেদাত এবং ফেৎনা বলে অবিহিত করেছেন আলেম ও ইসলাম গবেষকরা। এ ছাড়াও এ ধরনের মিথ্যা যে ছড়ায় তাকে মুনাফিক বলা হয়েছে। ধর্মকে পুজি করে কম্পিউটারে এডিট করা এসব ছবি তৈরি করে মানুষের মধ্যে ছড়ানোর অপরাধে ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ থেকে জামায়াত কর্মীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ব্যাবসায়ী জহিরুল সোমবার সকালে ফোনে জানান, ২৮ তারিখ দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার ট্রাইবুনালে সাঈদীর ফাসিঁর আদেশ হওয়ার পর, সেরাতেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের মোবাইলেও এ ধরনের ছবি দেখা যায়। কে ছবি তুলেছে জিজ্ঞাসা করলে, কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
জামায়াত-শিবির কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ ছবি বিশ্বাস না করলে গুনাহ হবে বলেও প্রচার করে তারা।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চাদেঁর মাঝে সাঈদীর মুখওয়ালা ছবি দেখা গেছে।
কম্পিউটার দক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম মকবুল এ বিষয়ে বলেন, ফটোশপ বা মাইক্রোসফট পিকচার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে এসব ছবি এডিট করা হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যেই এ ধরনের ছবি এডিট করা হয়।
ইসলামকে ব্যাবহার করে এ ধরনের গুজব ছড়ানোয় জামায়াত শিবিরের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আলেমরা জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা কোনক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ধরনের গুজবে বিশ্বাস করা ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুফতি অব্দুল্লাহ আল মারুফ সোমবার সকালে বলেন, কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী এ ধরনের কোন সম্ভাবনা নেই। ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার ঘটনা স্পষ্ট বেদাত। এছাড়াও ধরনের ফেৎনা ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি বলেন, চন্দ্র এবং সূর্যের আবর্তনের গতিপথ সম্পর্কে কোরআন ও হাদীসে স্পষ্ট বলা আছে । এ ব্যাপারে বোখারি শরীফের ১০৬০ নং হাদীসের উল্লেখ করেন তিনি।
আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, এই হাদীসে রয়েছে, “মহানবী হযরত মোহাম্মদ(সা.) এর শিশুপুত্র ইব্রাহিম যেদিন ইন্তেকাল করেছিলেন ঘটনাক্রমে সেদিন ছিল সূর্যগ্রহণ। মহানবীর পুত্র বিয়োগের কারণে সূর্যে গ্রহণ লেগেছে বলে সে সময় লোকেরা বলাবলি শুরু করলো । রসূল (সা) এসব গুজব আর কুসংস্কারকে প্রত্যাখান করে বলেছিলেন, আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের দুটি নিদর্শন হলো চাঁদ ও সূর্য। এ দুটি আল্লাহর অনেক নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মওত ও হায়াতের জন্যে কখনো চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ হয় না।”
আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, এটি একটি বেদাতি কথা যে, চাঁদে সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে।। চাঁদে কোন মানুষের চেহারা দেখা যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আল্লাহতো চাঁদকে আয়না বানায়নি যে সেখানে কারো মুখ দেখা যাবে।
যারা মাইকে বা লোক থেকে লোকে এসব ফেৎনা প্রচার করে তারা গুনাহগার।
তিনি আরো বলেন, “চাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ-তা-আলা কোরআনেও স্পষ্ট বলেছেন। যারা সেই চাঁদকে বিকৃত করে এ ধরনের গুজব ছড়ায় এবং ধার্মিকদের বিভ্রান্ত করে তারা অবশ্যই ধর্ম ব্যাবসায়ী।” ইমামদের এসব গুজবের প্রতি সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহারকারী রাহুল তালুকদার বলেন, ২৮ অক্টোবর রাত থেকেই এ ধরনের প্রচারণা চালায় জামায়াত শিবির। ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন ব্লগে এ ধরনের ছবি আপলোড করা হয়েছে জামায়াত শিবিরের তৈরি কিছু পেজ এবং গ্রুপে। তবে এ ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষকেই টার্গেট করে তারা।
এদিকে গত ৪ দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ গুজবের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ‘চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখা গেছে, সেই সাঈদীকে সরকার ফাসিঁর আদেশ দিয়েছে’ রোববার এ গুজব প্রচার করে বগুড়ায় মুসল্লীদের ক্ষিপ্ত করে তোলে জামায়াত শিবির। এবং পুলিশ ফাড়িতে হামলা চালায়।
এছাড়াও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কুড়িগ্রাম ও ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাত শিবির সহিংসতা সৃষ্টি করতে এ গুজবকে প্রচার করছে।
এদিকে ইন্টারনেটে এমন অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে রোববার সুনামগঞ্জে জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামের এক যুবককে এবং নাশকতার অভিযোগে আক্কাস আলী (৩৫) এক জামায়াতকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এলাকার ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র থেকে ল্যাপটপসহ জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়।”
এছাড়াও সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার প্রচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের সালটিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মারুফ আহমেদকে খুঁজছে পুলিশ।
স্থানীয়রা ও গফরগাঁও থানা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গফরগাঁও উপজেলার পৌর এলাকার আলতাফ হোসেন ডিগ্রি কলেজের সামনে রোববার দুপুরে লোক জড়ো করে স্থানীয় সালটিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মারুফ আহমেদ মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে প্রচার করতে থাকেন।
এ ধরনের মিথ্যা রটানোর ব্যাপারে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর আলিয়া মাদ্রাসার আলেম মাকসুদুর রহমান সোমবার সকালে ফোনে বলেন, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, “নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে মিথ্যাবাদী। আর নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্নে অবস্থান করবে। নাঊযুবিল্লাহ!”
মার্চ ০৪, ২০১৩