শিক্ষা ডেস্ক: মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা একগুচ্ছ ছবিতে মুখ গুঁজে আছে একদল কিশোর।ছবিগুলোকে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও ফলাফলের ভিত্তিতে দুই সারিতেসাজাতে ব্যস্ত।
ছবিগুলো তারা নিজেরাই জোগাড় করেছে। নিজেরাই একটি বোর্ডেক্লিপ দিয়ে সেঁটে তৈরি করছে পরিবেশের পরিবর্তিত মানচিত্র। এ কাজ করতে গিয়েওরা হাতেকলমে শিখে ফেলছে জলবায়ুর পাঠ। এটি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলেরসমাজবিজ্ঞান বিষয়ের একটি শ্রেণীকক্ষ।
শ্রেণীকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীরাসারিবদ্ধভাবে তাদের জুতাগুলো সাজিয়ে রেখেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অন্যশ্রেণীকক্ষের জানালার কাচ ভাঙা থাকলেও এই কক্ষের একটি কাচও ভাঙা নেই।মেঝেতে কার্পেট বিছানো, আর দেয়ালে সাজানো তথ্যভিত্তিক বিভিন্ন মানচিত্র।পুরো কক্ষটি সামাজিক বিজ্ঞানের কয়েক শ উপকরণে ঠাসা। এগুলোর সবইশিক্ষার্থীরা করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাপরিবেশ-সচেতন হয়ে উঠছে।
ভিন্নধর্মী এই শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেছেন রাজশাহীকলেজিয়েট স্কুলের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা এই বিশেষায়িতশ্রেণীকক্ষের নাম দিয়েছেন ‘সমাজবিজ্ঞান ও পরিবেশ গবেষণাগার’। এই কাজেনিয়োজিত রয়েছেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ, ফাহিমা ফারুক, সুফিয়া পারভীন ওনাহিদ ইয়াসমিন।
সম্প্রতি ওই গবেষণাগারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণীকক্ষের একপাশে শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের উপকরণ যেমন: গরুরগাড়ি, জৈব কীটনাশক, দেশীয় ফলমূল, গাছ ইত্যাদি। অন্য পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছেপরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ যেমন: পলিথিন, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, তামাকইত্যাদি। কৃষকের প্রত্যাশা শিরোনামে একটি বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। এতে কৃষিতেঅর্জিত সাফল্যের ওপর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন স্থানপেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছে পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন দিবসেরতালিকা। এই গবেষণাগারে বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরপাঠদান করা হয়। তাদের কাজের বড় একটি মাধ্যম হচ্ছে বিষয়ভিত্তিক মানচিত্রতৈরি করা। এ রকম একটি মানচিত্র বানানো হয়েছে খনিজ পদার্থের ওপর। এটা দেখেসহজেই বোঝা যাবে, উত্তর আমেরিকার কোথায় কোন খনিজ পদার্থ রয়েছে। সোনার খনিএলাকায় লাগানো হয়েছে সোনালি রং, কয়লাখনির জায়গায় কালো রং, তামার জায়গাতামাটে রং। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একটি অপরিকল্পিত নগরের কী পরিণতি হতেপারে, তার একটি মডেলও তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীশাওন আখতার বলে, ‘এই গবেষণাগারে কাজ করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি, সমাজটাকীভাবে গড়ে উঠছে ও বিকশিত হয়েছে। শুধু বই পড়ে এটা বোঝা যায় না। প্রতিসপ্তাহে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমরা সেখানে কাজ করি।’ শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমশাহ জানান, এখানে আসলে উপকরণভিত্তিক একটা সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষার পরিবেশতৈরি করা হয়েছে। শিক্ষকের অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী শিক্ষার্থীরাই দলগতভাবেউপকরণ জোগাড় করে। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এগুলো সাজায়। তিনি আরও জানান, ক্লাসে যারা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী বলে পরিচিত, এখানে কাজ করতে এসে তারা আরপিছিয়ে থাকছে না।
৪ মার্চ/নিউজরুম