কৃষি ডেস্ক: টানা হরতালের প্রভাব পড়েছে নরসিংদী ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সবজির বাজারে।ক্রেতার অভাবে সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। হরতালের কারণে কয়েক দিন জেলার বাইরে থেকে পাইকারেরা হাটে আসতে না পারায় নামমাত্র মূল্যে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নরসিংদী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর সবজি চাষ হয়। শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় বেশি সবজি উৎপাদিত হয়। এবার শীত মৌসুমে চাষিরা লাউ, শিম, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পুঁইশাক, ডাঁটা, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। চাষিরা বেলাব উপজেলার বারৈচা পাইকারি বাজার, নারায়ণপুর; রায়পুরা উপজেলার জংগী শিবপুর; শিবপুর উপজেলার পালপাড়া, যোশর বাজারে বিক্রি করতে আনেন। এসব বাজার থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক শাকসবজি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ প্রায় ২৫টি জেলায় সরবরাহ করা হয়।
গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে জংগী শিবপুর সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, সবজিচাষিরা ভ্যান, রিকশা ও মাথায় করে বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রকম শাকসবজি নিয়ে বাজারে আসছেন। কিন্তু হরতালের কারণে জেলার বাইরে থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসতে না পারায় অনেক চাষির সবজি বিক্রি হচ্ছে না। যা বিক্রি হয়েছে, তাও অর্ধেক দামে।
জংগী শিবপুর বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের চাষি রুবেল মিয়া বলেন, ‘গত বাজারেও লালশাক বেচছি ৮-৯ টেহা। আর শিম বেচছি ২০-২২ টেহা। আইজ হরতালের লাইগা লালশাকের দাম কেউ জিগায়ই না। এক পাইকার আইসা লালশাক দুই টেহা কেজি কয় আর শিম কয় ১২ টেহা। পরে আরেকজনের কাছে লালশাক তিন টেহা কেজি বেইছা দিছি।’
শুধু রুবেল মিয়া নন, হরতালের কারণে এমন দশা অধিকাংশ সবজিচাষির। ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে জংগী শিবপুর বাজারে আসা পাইকার ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ হরতালের কারণে গতকাল (শনিবার) চলে আসছি। মনে করছিলাম, হরতালে অল্প পরিমাণে হলেও গাড়ি চলব। কিন্তু কোনো গাড়ি ঢাকায় যেতে রাজি হচ্ছে না। বড় বিপদে আছি।’
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। তাঁরা বলছেন, হরতালের কারণে কম দামে সবজি কেনার লোকও নেই হাটবাজারে। গতকাল উপজেলায় সবজির সবচেয়ে বড় বাজার ফুলবাড়ীতে গেলে কৃষকেরা এসব কথা বলেন। সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, হরতালের কারণে বাইরে থেকে কোনো ক্রেতা (পাইকার) আসেনি।
সকাল ১০টায় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শতাধিক কৃষক সবজি নিয়ে বসে আছেন। কৃষকেরা জানান, এই বাজার থেকে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ক্রেতারা সবজি কিনে নিয়ে যান। টানা তিন দিনের হরতালের কারণে বাজারে পাইকার নেই। স্থানীয় পাইকারেরাও বাজারে না আসায় কৃষকদের সবজি বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
উপজেলার বারোদুয়ারী হাটের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, ঘন ঘন হরতালের কারণে স্থানীয় সবজিচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেক কৃষক সময়মতো সবজি বিক্রি করতে না পারায় তা খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
৪ মার্চ/নিউজরুম