নিজের হাতেই সমাধান

0
163
Print Friendly, PDF & Email

মার্চ, ২০১৩, ভুটানেররাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের জন্ম ১৯৮০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতি বিষয়ে ডিগ্রিলাভ করেনজাপানের কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের নভেম্বরে তিনি এবক্তব্য দেন

উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদআমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আমি মাত্র পাঁচ বছর হলো রাজা হয়েছিএই অল্প সময়ের অভিজ্ঞতা আমি তোমাদেরবলতে চাই
প্রথম থেকে আমার একটাই চিন্তা ছিল, কীভাবে ভুটানের মতো দেশেভালো রাজা হওয়া যায়আমরা এমন একটি সময়ের অন্তর্জালে আটকানো, যারগতিশীলতা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় নাএকটি দশকের সঙ্গে পূর্ববর্তীদশকের মিল খুঁজে পাওয়াই এখন বেশ কষ্টকরআজ যা আমরা দেখি, তা গতকাল হয়তোবা জানার বাইরে ছিলমুঠোফোনের কথাই চিন্তা করে দেখোজীবনের প্রতিমুহূর্তের নানা ঘটনা স্মৃতি হিসেবে মুঠোফোনে সংরক্ষণ করি আমরানানাপ্রয়োজনে আমরা বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের খুদে বার্তা প্রেরণ করিএটি কতইনা কাজেরঅথচ আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি শুধুবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতেই দেখা যেততোমরা মুঠোফোন ছাড়া জীবন কি চিন্তাকরতে পারো? কিন্তু কে বলতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অন্য কিছু মুঠোফোনেরজায়গা দখল করে নেবে
আমি সব সময় চিন্তা করি, আমাদের প্রজন্ম কী করছে? আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছি? বৈচিত্র্য আর পরিবর্তনে ভরাআমাদের এই পৃথিবীবিশ্বায়নের কারণে এই পৃথিবী এখন বড় আকারের একটিগ্রামের মতো
আমরা যেখানেই থাকি না কেন, পৃথিবীজুড়ে যেসব সমস্যা দেখাযায়, তার সব কটির বিরুদ্ধে আমাদের সমানভাবে মোকাবিলা করতে হয়সমস্যাসমাধানে অন্যদের যেন উপকার হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরআগামীপ্রজন্মের কথা ভেবে সমাধান খুঁজতে হবেএই পৃথিবীর অন্য প্রান্তে কী ঘটছে, তার প্রতি আমাদের খেয়াল রাখা জরুরিআমাদের চারপাশের পরিবেশের কথা তোমাদেরজানাতে পারিসমুদ্রের বিভিন্ন হিমবাহ দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে, বরফেরপুরুত্ব কমছে আশঙ্কাজনকভাবেজলবায়ু পরিবর্তন হুমকির মুখে ফেলছে সমগ্রমানবজাতিকেপ্রতি সেকেন্ড আমরা ধ্বংস করছি ফুটবল মাঠের সমান আকারেরবনভূমিপৃথিবীর অর্ধেক মানুষ আজ পানির কষ্টে আছেধনী দেশ ও দরিদ্র দেশেরমধ্যে পার্থক্য বাড়ছে২৪ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে প্রতিবছরদরিদ্রদেশগুলো দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা পাচ্ছে প্রতিনিয়তউন্নয়নশীল দেশগুলোয় ঘুষের পরিমাণ বছরে চার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়চিন্তা করে দেখো, এসব বাধা কীভাবে দরিদ্র জনসাধারণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ওঅর্থনৈতিক সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করে১১ কোটি শিশু প্রতিবছরই অপুষ্টি ওরোগাক্রান্ত হচ্ছে৪০ কোটির বেশি লোক মরণব্যাধি এইডসের সঙ্গে লড়াইয়েব্যস্ত
এর উল্টো দিকে আমরা কী দেখি? ধনী ও শক্তিশালী দেশগুলো প্রতিবছরইবাড়াচ্ছে তাদের সামরিক খাতে ব্যয়দরিদ্র দেশগুলোয় শাসকেরা ক্ষমতারদ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তবৈষম্য ও বিক্ষোভ বাড়ছে আমাদের এইপৃথিবীতে প্রতিনিয়তবৈশ্বিক সমস্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছেশুধুবেড়েই চলছে না, প্রতিনিয়ত প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে একেকটি সমস্যা
আমিখুব সংক্ষেপে একটি কথা বলতে পারি, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরকল্যাণে আমরা অনেক অভিনব আবিষ্কার, উদ্যোগ ও শিল্পের কারিশমা দেখতে পাই; যার কারণে আমাদের পৃথিবীরই উপকার হচ্ছেএ জন্য আমরা জীবনমানকে পূর্বপ্রজন্ম থেকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিকিন্তু তার পরও আমরা অনেক বড় বড়বৈশ্বিক সমস্যায় জর্জরিতসামাজিক বৈষম্য, অন্যায় ও পরিবেশগত বিপর্যয়েরকারণে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছেএই সমস্যা সদা বহমানযত দিন নাআমরা সমস্যা সমাধান করব, তত দিন সমস্যা বাড়তেই থাকবেতো আমরা যখন এইসমস্যার সন্ধান পাব, তখন কী করব?
সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের শুধুরাজনীতিবিদ বা নেতাদের জন্য বসে থাকা চলবে না; সমাধান আমাদের সাধারণনাগরিকদের কাছ থেকে নিতে হবেসারা পৃথিবীর নাগরিকেরা একত্র হলে সেটা হবেআমাদের জন্য বড় একটা শক্তিএই শক্তির ভিত্তি হবে মানবতা
আমরা আমাদেরপ্রজন্ম নিয়ে অনেক প্রত্যাশা করিজ্ঞান-বিজ্ঞান, নজরকাড়া উন্নয়ন ওঅতীতের শিক্ষা নিয়ে এই প্রজন্মই খুঁজে বের করতে পারে সব সমস্যার সমাধানমানবতানির্ভর সামাজিক বিপ্লব আনার যোগ্যতা আছে এই প্রজন্মের সদস্যদেরএদেরমাধ্যমে তৈরি সম্ভব টেকসই উন্নয়ন
আমি জানি, যতই দিন যাবে, ততই তোমরা সাধারণ মানুষের জন্য অসাধারণ সব কাজ করবে
তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ
সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে অনুবাদ:
জাহিদ হোসাইন খান

 

শেয়ার করুন