ঢাকা: বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অধীন নিষ্ঠুরভাবে নির্দয় নির্বিচারে মানুষ হত্যা হচ্ছে। পাখির মত মানুষ মারা চলবে না। এটা পাকিস্তানের মতো নিষ্ঠুর আচরণ। কেউ অন্যায় করলে তাকে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করা হোক।
নিহতরা জামায়াতের সদস্য হলেও তাদের হত্যা করার কোনো অধিকার নেই। শনিবার জাতীয় প্রেস কাব মিলনায়তনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অবস্থান তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন ট্রাইব্যুনালের উপর কারোই আস্থা নেই। সাঈদীর যে রায় হয়েছে, যে অবস্থায় রায় হয়েছে এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠবে। ফাঁসি না দিলে রায় মানা হবে না, শাহবাগের এমন দাবির পর রায় হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাও এ দেশের মানুষ। তারা সাক্ষী নিয়ে সেই বিবেচনায় বিচার করবেন। সাঈদীকে যে দু’টি অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আনা হলে এবং ওই দু’টি অভিযোগ থেকে খালাস পেলে বাকি অভিযোগ থেকেও খালাস পেয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মহা-রাজাকার। তার নেতৃত্বে রাজাকার ও শান্তিকমিটি গঠন হয়েছে। তিনি রাজাকার আল-বদরদের বেতন-ভাতা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সরকারের অধীনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাজাকার-শান্তিকমিটির ১০ স্তর উপরে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বহু রাজাকার তৈরি করেছেন, এ জন্য আমি তাকে মহা-রাজাকার হিসেবে অখ্যায়িত করছি। রাজাকারের ফাঁসি হলে তার ১০ গুণ বেশি শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই শুধু রাজাকারদের নয়। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ময়মনসিংহের ডিসি থাকা অবস্থায় তার সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেভাবে গণহত্যা করেছে, আজ ঠিক সেভাবেই এখন বাংলাদেশে ওই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে নির্বিচারে মানুষ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এটা আমার কাছে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে।
এই মুহূর্তে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সপর্দ করা হোক। একজন সাধারণ সাক্ষীর সাক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হতে পারে তা হলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছি, আমাদের অভিযোগে কেন মামলা রজ্জু করা হবে না।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। এডিসি, ডিসি ছিলেন। এটা পূর্ব পাকিস্তান গেজেটে আছে, বাংলাদেশ গেজেটেও আছে। একজন এডিসি হিসেবে ট্রইব্যুনাল একজন চিহ্নিত মহা-রাজাকারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা। রাজাকারদের মন্ত্রী করে বিএনপি যে অপরাধ করেছে বর্তমান সরকার ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মন্ত্রী করে তার চেয়ে বড় অপরাধ করেছে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ব্লগার রাজিবের জানাজা হয়েছে শাহবাগে। আমি বলেছি জানাজা যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। তার জানাজা মসজিদে হলে মানুষ ওজু করে জানাজায় অংশ নিত। কিন্তু হিন্দু, মুসলমান, বৈদ্য এক সাথে জানাজা হতে পারে না। জানাজা নিয়ে তামাশা করা হয়েছে। নারীরা জানাজায় দাঁড়াতে পারে না। এই তামাশা করার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আজ কয়েক দিন শাহবাগ থেকে বলা হচ্ছে তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু শুরুতে কমপক্ষে সাতদিন শাহবাগে বলা হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা হোক। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে অর্থ মুসলমানরা রাজনীতি করতে পারবে না।
শাহবাগ আন্দোলনে ডা. ইমরান এইচ খান নামে এক নেতা বেরিয়ে এসেছে। ইমরান স্বাধীন চিকিৎসা পরিষদের সাথে জড়িত। ইমরান সরকার যেভাবে আদেশ নির্দেশ দিচ্ছেন তাতে আর কিছুদিন পর নতুন সরকার আসবে। তিনি প্রিয় দেশবাসী বলে নির্দেশ দিচ্ছেন। দেশবাসী বলার অধিকার একমাত্র রাষ্ট্রপতির। বর্তমানে ইমরান একের পর এক আদেশ-অধ্যাদেশ জারি করছেন। একের পর এক আদেশ-নির্দেশ জারি করছেন। এটা মানুষের কাছে বেমানান হচ্ছে। আমি দেশবাসীর কাছে, প্রবীণদের কাছে জাতীয় সংলাপ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, শাহবাগীরা আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। আমি বলব শাহবাগের আন্দোলনকারীদের একজন রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে স্মারকলিপি দেয়া ঠিক হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনগতভাবে যার যে শাস্তি তা চাই। সবার ফাঁসি হওয়ার কোনো যোক্তিকতা নেই।
গত বৃহস্পতিবার ইসলামি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তরগেটে তালা দিতে বলেছেন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছেন, মসজিদে তালা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যদি অবিলম্বে তালা না খোলা হয় তা হলে তালা ভেঙ্গে ফেলা হবে। সেজদার ঘরে তালা লাগানো হতে পারে না।
তিনি বলেন, সত্যিই দেশের অবস্থা খারাপ। প্রতিটি মানুষ এখন চিন্তিত। রাজধানীতে মানুষ ছোটাছুটি করছে। পুলিশ বড় বেশি অকৃতজ্ঞ হয়ে গুলি চালাচ্ছে। কথা বলার জন্য আমার নামে চারটি মামলা হয়েছে। চার হাজার মামলা হলেও আমি আমার অবস্থানে থাকব।
দেশের বর্তমান অবস্থাকে মহা দুর্যোগময় উল্লেখ করে এ থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
দেশের দুই প্রবীণ নেতা ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এ জাতীয় সংলাপের ডাক দেয়ার তাগিদ দেন বঙ্গবীর।
তিনি বলেন, আমি এই দুই প্রবীণ নেতাকে বলবো আপনারা সকল প্রবীণ মিলে নবীনদের নিয়ে জাতীয় সম্মেলন করেন। তবে আপনারা ব্যর্থ হলে অন্য কেউ জায়গা দখল করে নিবে। কারণ কোনো জায়গাই খালি থাকে না।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের বর্তমান আন্দোলনে তার দলের কোনো সমর্থন নেই দাবি করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, এ আন্দোলনের শুরুতে আমাদের সমর্থন ছিল। কিন্তু এখন আমাদের একটুও সমর্থন নেই, সম্পৃক্ততা নেই। কারণ আন্দোলনকারীদের সামান্যতম বিবেচনা থাকলে বড় বড় দু’টি হাসপাতাল থাকার পরও তারা এখানে আন্দোলন স্থায়ী করতে পারত না। আন্দোলন করার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করা উচিত ছিল।