‘‘যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকর করা হবে’’ : প্রধানমন্ত্রী

0
161
Print Friendly, PDF & Email

শরীয়তপুর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের রায়ও কার্যকর করা হবে।

‘‘সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে। সিঙ্গাপুরে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী কি ‘মোচা’ নিয়ে এসেছেন আমরা জানিনা। তিনি যদি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়ে থাকেন তাহলে আমরা তার সুস্থতা কামনা করি’’। কিন্তু বিদেশে গিয়ে তিনি কোন প্রভুদের কাছ থেকে কি নিয়ে এসেছেন যে দেশে এসেই তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন’’।

শনিবার (২ মার্চ) পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এর নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারে করে জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় নদী ভাঙন আক্রান্ত এলাকায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করন। এরপর সেখানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এজন্য আমরা আগামী বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি। এছাড়া মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনা চলছে’’।

‘‘পর্যায়ক্রমে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হচ্ছে। এখন শাসন বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচের কাজ শুরু হবে’’।

এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে নানা উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা হন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর ও  মাদারীপুর বর্ণিল সাজে সেজেছে। তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুন ও শুভেচ্ছা বার্তায় ছেয়ে গেছে পদ্মার পারসহ সর্বত্র।  পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আবারো নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। তার আগমন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী দুপুর ৩টায় মাদারীপুর শহরের এ আর হাওলাদার জুট মিল মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। এরপর ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদারীপুর-শরিয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কাজীরটেকে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর ৭ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুসহ আরো ৩টি সেতু কার্যক্রম উদ্বোধন, মাদারীপুর পৌরসভায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ মাদারীপুর সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, ডাসার থানার উদ্বোধনসহ জনসভাস্থলের পাশে স্থাপিত ডিজিটাল সিস্টেমে সুইচ টিপে অন্তত ১৫টি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করবেন।

শরীয়তপুর সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মৌজায় ২০০৮ সালে ২৬০ একর ভূমি হুকুম দখল করে জেলা প্রশাসন। জায়গাটি পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙন কবলিত। এ জায়গাটা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সেতু বিভাগ ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ মিটার প্রস্থ নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য ২৯ জানুয়ারি ভারতীয়া-এম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং যৌথ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৯৭ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে ১৮০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজটি শেষ করতে হবে। নাওডোবা মৌজার লতিফ ফকির কান্দি হতে ছাত্তার মাদবর-মঙ্গলমাঝির ফেরি ঘাট পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হবে।

অন্যদিকে, ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানস্থলে ৬০ হাজার কর্মী সমর্থক উপস্থিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোক নেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ১৩৫টি বাস, ৪০টি ট্রাক, ৫টি লঞ্চ ও ৩০০ ট্রলার ভাড়া করেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সারা শরীয়তপুরে কয়েক হাজার ব্যানার ও তোড়ন স্থাপন করেছে।

শুক্রবার শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নদীর তীর রক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে আসবেন। এ উপলক্ষে প্রায় ৬০ হাজার নেতা কর্মী সমর্থক উপস্থিত করার প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। তাদের অনুষ্ঠানস্থলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করেছি’।

পদ্মা সেতুর নদী শাসন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শারফুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকার নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছি। উদ্বোধনের পর দ্রুত গতিতে কাজটি শেষ করা হবে’।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুর রব মুন্সী জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন এ সরকারের একটি বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জাজিরায় আসছেন। সাধারণ মানুষ পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

 মার্চ ০২, ২০১৩

শেয়ার করুন