ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক

0
226
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক: কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, সেচ সঙ্কট, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের কারণে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ নিয়েহতাশায় দিন কাটছে কৃষকেরঅনেক কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেনতারাধানের পরিবর্তে সবজি কিংবা অন্য ফসল আবাদে ঝুঁকছেনবিস্তারিত খবরপাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
পাবনা : চলতি বোরো মৌসুমে পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার ৫০০হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছেআবাদ করা জমিথেকে প্রায় দুই লাখ আট হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন বোরো ফসল উত্পাদন সম্ভব বলেকৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছেএরই মধ্যে জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই বোরোফসল রোপণ শেষের দিকেঅনেক জায়গায় আবাদ কার্যক্রম পিছিয়ে পড়েছেতবে বোরোফসলের আবাদের সফলতানির্ভর করে প্রয়োজনানুপাতে সার প্রয়োগ ও সুষ্ঠু সেচকার্যক্রমের ওপরসার সংকট কাটিয়ে নিতে কৃষকরা সচেষ্ট হলেও সেচের জন্যপাবনায় কৃষকদের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে
সূত্র জানায়, বছরে তিন ফসল আবাদ কার্যক্রম চালু থাকা বিশেষ করে বোরো মৌসুমেসারা দেশের মতো পাবনায়ও সেচ সঙ্কট দেখা দেয়সেচ সঙ্কটের কারণে সময়মতোজমিতে পর্যাপ্ত পানি দিতে না পেরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো আবাদ এখনহুমকির মধ্যে পড়েছেকৃষকরা জানান, মাঘ মাস থেকে বোরো ফসল আবাদ শুরু করতেহয় এবং চৈত্রের প্রথম দিকে শেষ হয় বোরো আবাদঋতুপ্রকৃতির বৈচিত্র্যে ঠিক এসময়ে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ পানি দেয়ার প্রধান মাধ্যম গভীর নলকূপগুলোর ওপরকৃষকরা নির্ভরশীল হলেও নানা জটিলতায় বর্তমানে পাবনার প্রায় অধিকাংশ গভীরনলকূপ অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছেঅথচ ঠিক প্রয়োজনের এই সময়টিতেই গভীরনলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় বোরো চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে
পাবনায় সেচ সঙ্কটের কারণ হিসেবে জানা যায়, প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর জমিআবাদের জন্য পাবনা জেলায় রয়েছে মাত্র এক হাজার ৪৫টি গভীর নলকূপকাগজে-কলমেএই সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি গভীর নলকূপ থাকলেও মাঠের চিত্র পুরোটাই ভিন্নবর্তমানে পাবনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ৪৫টি গভীর নলকূপ থাকলেও এরমধ্যে চালু করার উপযোগী নলকূপ রয়েছে মাত্র ৮৬৫টি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালু করার উপযোগী এসব গভীর নলকূপের মধ্যে বর্তমান সচলঅবস্থায় রয়েছে মাত্র ৪৪১টিবিআরডিবি, কৃষি বিভাগ, বিএডিসিসহ সরকারেরবিভিন্ন নলকূপ থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় জেলার প্রায় ৪২৫টি গভীর নলকূপ বন্ধথাকায় সৃষ্টি হয়েছে সেচ সঙ্কটচালু করা ৪৪১টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ৩০হাজার হেক্টরের বেশি জমি আবাদ সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়বিভিন্ন বিভাগের আওতাধীন অধিকাংশ গভীর নলকূপই চালানো হয় মাঠপর্যায়ে সমিতিরমাধ্যমে
সমিতিগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বকেয়া বিদ্যুত্ বিল, ব্যাংক ঋণসহ নানা ধরনেরসঙ্কটে জেলার প্রায় ৪২৫টি গভীর নলকূপ বর্তমানে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছেএছাড়া জেলার প্রায় ১৬ হাজার অগভীর নলকূপ থাকলেও তার মধ্যে প্রায় পাঁচহাজারেরও বেশি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছেঅধিকাংশ অগভীর নলকূপ ডিজেলচালিতহওয়ায় খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরাসব মিলিয়ে অপর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থাআর সেচ সংকটের কারণে পাবনায় চলতি মৌসুমে বোরো ফসল আবাদ মারাত্মক হুমকিরসম্মুখীন হয়ে পড়েছে
সদরপুর (ফরিদপুর) : তেলের মূল্য ও বিদ্যুত্ বিল দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলেউত্পাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় ও বাজারে ধানের মূল্য ন্যায্য নাপাওয়ায় এ বছর ফরিদপুরের সদরপুরে ইরি-বোরো চাষ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছেফলে আগামী মৌসুমে এই উপজেলায় দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য ধান চাষের ওপরপ্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদেরধানের ন্যায্য মূল্য অথবা ভর্তুকিনা দেয়া হলে আগামী বছর ধান চাষে চাষীদের আগ্রহ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছেবলেও তাদের ধারণা
জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে মোট ৫টি গভীর, ৮০৬টি অগভীর ও ৯টিএলপি পাম্পচালিত ব্লকে মোট তিন হাজার ৬৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষেরটার্গেট ধরা হয়েছিল
সেক্ষেত্রে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাষ হয়েছে মাত্র এক হাজার ৪২১ হেক্টরজমিতেএখনও প্রায় অর্ধেক জমিতে চাষীরা ইরি-বোরো চাষ করতে যাচ্ছে না বলেসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছেসূত্রটি আরও জানায়, বিদ্যুত্চালিত তিনটি গভীর ও৬৬টি অগভীর নলকূপেরও অধিকাংশ ব্লকে চাষীরা ধান চাষ করছে না
শেরপুর (বগুড়া) : ধানচাষে অব্যাহত লোকসান কাটিয়ে উঠতে কৃষকরা তাদের আবাদতালিকায় পরিবর্তন অব্যাহত রেখেছেনএরপরও সামাল দিতে পারছেন নাধানচাষেতারা অব্যাহতভাবে মার খেয়েই চলছেনসবকিছুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও ধানেরবাজার কমতির দিকেই থেকে যাচ্ছেফলে কৃষক তার উত্পাদন খরচ তুলতে পারছেন নাতাই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তারা বোরোর জমিতে আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ চলতিমৌসুমের রকমারি ফসল চাষ ও পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেনএসব ফসল থেকে তারাগেল রোপা-আমনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেনসেমোতাবেক তারা আলুসহ অন্য ফসল তুলে ওইসব জমিতে বোরো লাগানোর টার্গেট নিয়েএগুচ্ছেনএক্ষেত্রে অনেকটা দেরিতে ধান লাগাতে হবেফলে স্বাভাবিকভাবেইওইসব জমি থেকে বোরোর ফলন কম আসবেএরপরও জেনে-বুঝেই কৃষকরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিনিয়েই মাঠে ছিলেনকিন্তু সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম নতুনভাবে বেড়েযাওয়ায় তারা সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়েছেন
উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরোরলক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিগত বছরের হিসাবথেকে দেখা যায়, গত বছর ডিজেলচালিত গভীর ১১টি, অগভীর ৮ হাজার ২০০টি ও এলএলপি২০১টি পাম্পের আওতায় ১১ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে কেবল ধান চাষ হয়েছিলসেমোতাবেক ডিজেল লেগেছিল ২৭ লাখ ১১ হাজার ৭১৮ লিটারএবারও যদি ওই পরিমাণজমিতে বোরোর চাষ করা হয় তাহলে একই পরিমাণ ডিজেলে কৃষকদের বতর্মানবাজারমূল্য অনুযায়ী অতিরিক্ত অন্তত এক কোটি ৮৯ লাখ ৮ হাজার ৯৯০ টাকা গুনতেহবেএছাড়া বিদ্যুত্, সারসহ অন্য কৃষি সামগ্রী তো রয়েইঅপরদিকে এ বছর একহাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা, দুই হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে আলু, একহাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, দুই হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১২৫হেক্টর জমিতে গম ও বিভিন্ন জমিতে রকমারি সবজিজাতীয় ফসল চাষ করা হয়েছে বলেকৃষি অধিদফতর সূত্র জানা গেছে

 

২ মার্চ/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন