১ মার্চ, ২০১৩।।
রাজধানীর স্বল্প আয়ের হতদরিদ্র মানুষের আবাস বস্তিতে একের পর এক আগুন লাগছে। একটি বস্তি পুড়ে যাওয়ার পর শত শত মানুষের ঠাঁই হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে ফুটপাথে। সমাজের স্বল্প আয়ের এই মানুষের আবাসন নিয়ে সরকারি ও বেসরকারিপর্যায়ে কোনো উদ্যোগ নেই। কেন এই বস্তিগুলোতে একের পর এক আগুন লাগছে তার কোনো অনুসন্ধান হয় না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমি দখলের উদ্দেশ্য নিয়ে এই বস্তিগুলোতে আগুন দিয়ে থাকে। রাজধানীর বস্তিগুলোর বেশির ভাগই সরকারি বা খাস জমির ওপর। বস্তিগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দখলে চলে যায়। স্থানীয়পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত মাস্তানেরা বস্তির ঘর ভাড়া থেকে আয় করে থাকেন। এ কারণে বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে থাকে।
আমরা লক্ষ করছি, গত কয়েক মাসে রাজধানীর বড় বেশ কয়েকটি বস্তিতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার কল্যাণপুর বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় শতাধিক ঘড়বাড়ি। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। বস্তিতে এভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ রিকশাচালক বা গার্মেন্টকর্মীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তাদের কোনো আশ্রয়ের জায়গা থাকে না। অথচ বস্তিগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা নেই। এমনকি এসব বস্তিতে পানি বা গ্যাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ সমাজের এসব নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেয়াও রাষ্ট্রের কর্তব্য।
আমরা মনে করি, সরকারিপর্যায়ে সমাজের স্বল্প আয়ের এসব মানুষের আবাসন সমস্যা দূর করার পরিকল্পনা না নেয়া পর্যন্ত বস্তিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। বস্তিগুলোতে পানি, গ্যাসের মতো ন্যূনতম নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা দরকার। মনে রাখতে হবে, সমাজের সব নাগরিকের বাসস্থানের সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কর্তব্য।
বস্তি পুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করা বা স্বার্থান্বেষী মহলের দখলবাজি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি উচ্ছেদ করতেই হয় তাহলে অবশ্যই তাদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত।