শাহবাগের আড়ালে ভারতের করিডোর পাওয়ার চেষ্টা অস্থিরতা সৃষ্টি করে স্বার্থসিদ্ধি কাক্সিত নয়

0
170
Print Friendly, PDF & Email

১ মার্চ, ২০১৩।।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাংলাদেশে সৃষ্ট অস্থির অবস্থার মধ্যে প্রতিবেশী দেশ তার বিভিন্ন স্বার্থ আদায়ে বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভারতকে করিডোর দেয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে সরকার। ‘কোস্টাল অ্যান্ড মেরিটাইম শিপিং’ চুক্তির আওতায় ভারতকে বাড়তি ফি ছাড়াই এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত উপকূলীয় সমুদ্র ও সংশ্লিষ্ট বন্দরগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এরই মধ্যে যৌথভাবে প্রতিবেদন, খসড়া চুক্তি ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করেছে। চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আসাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে সরাসরি চলে যাবে। ভারতীয় বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাহাজ বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্রসীমায় অবাধে চলাচলের সুযোগ পাবে। এতে পণ্য পরিবহনে ভারতের সময় ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয় হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনের সুবিধা না দেয়ার জন্য সরকারের একটি সংস্থার আপত্তি উপো করে রাজনৈতিক বিবেচনা ও ভারত সরকারের আবদার পূরণে এ সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগেও মাশুল ছাড়াই ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট সুযোগ দেয়া হয়। তিতাস নদীসহ ১৮ নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে তার ওপর দিয়ে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম পরিবহন করেছিল ভারত। এতে ওই এলাকার অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। অথচ নৌ-প্রটোকলভুক্ত নৌপথ শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ-চিলমারী-দৈ খাওয়া রুটের রণাবেণে প্রতিশ্রুত ১০ কোটি টাকা দেয়নি ভারত। ভারতের নদীতে বাংলাদেশের জাহাজ চলাচলে নাব্যতা সঙ্কট, বাংলাদেশী নাবিকদের ভারতের মাটিতে নামতে না দেয়াসহ উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধানও করা হয়নি।

কোস্টাল শিপিং ও মেরিটাইম চুক্তির আড়ালে মূলত ভারতকে করিডোর সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। বিনিময়ে ভারতের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আমদানির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে অনেক বেশি পথ ঘুরে কাঁচামাল পণ্য বাংলাদেশে আসছে। কোস্টাল শিপিং ও মেরিটাইম চুক্তির প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে সরকার। দুই দেশের কর্মকর্তারা কোস্টাল শিপিংয়ের সম্ভাব্যতা স্টাডি করে যৌথভাবে প্রতিবেদন, খসড়া চুক্তি ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করেছে। ভারতে অনুষ্ঠেয় সচিবপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রথমত, পাঁচ বছরের জন্য এ চুক্তি করা হচ্ছে। তবে দুই বছর পর চুক্তির রিভিউ হবে। রিভিউ বৈঠকের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন হয়ে যাবে বলে খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছে। ভারত বা বাংলাদেশ ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে চুক্তি বাতিল করতে পারবে। খসড়া চুক্তি অনুযায়ী ভারতের অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় ও সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ পাঁচটি রুটে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে। এ রুট ব্যবহার করে তৃতীয় দেশের বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেয়া করতে পারবে। এ েেত্র ভারত চাইলে অন্য কোনো দেশের পতাকাবাহী জাহাজে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে। তবে যুদ্ধজাহাজ, সামরিক ও আধা সামরিক জাহাজ, গবেষণা জাহাজ ও মাছ ধরা নৌযান এ সুযোগ পাবে না। এ চুক্তির ফলে ভারতকে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে। আমাদের দেশে চলাচলকারী নৌযানগুলো যে হারে ফি প্রদান করে, একই হার ভারতের েেত্রও প্রযোজ্য হবে।

কোনো দেশের সরকারের মেয়াদের শেষপর্যায়ে এসে স্বাক্ষরিত কোনো চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হয় না।  ট্রানজিট বা করিডোরের মতো ইস্যু কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করে করা সঙ্গত নয়। শাহবাগ ও অন্যান্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তার নেপথ্যে যে প্রতিবেশী দেশটির মদদ রয়েছে সেটি সে দেশের পত্রিকার খবরেই বলা হচ্ছে।

আমরা মনে করি, ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপীয় বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না করে এখনই ভারতের সাথে কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্ট না করার পে বিশেষজ্ঞদের মতকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আর বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সঙ্গত হবে নতুন নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর।

শেয়ার করুন