স্পোর্টস ডেস্ক: ফুটবল-যাত্রারপ্রথম স্টেশনে নেমে পড়েছেন ওঁরা। কিন্তু নতুন অভিযানে নামলে যে উত্তেজনাথাকে, সেটি কোথায়? নতুন জমানার ফিতে কাটার অপেক্ষায় একঝাঁক শৌখিন ফুটবলারচাপমুক্ত ফুরফুরে সময়ই কাটাচ্ছে কাঠমান্ডুতে।
এটা নর্দার্ন মারিয়ানাআইল্যান্ড ফুটবল দল। ফিফার সদস্যপদ পায়নি তারা এখনো। এএফসির সহযোগী সদস্যইহয়েছে এই সেদিন, ২০০৯ সালে। এর আগের বছর ইস্ট এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনেরসদস্য হয়েছে। এএফসির কোনো ‘মাহফিলে’ এই প্রথম যোগ দেওয়ার সুযোগ মিলল।
এএফসিচ্যালেঞ্জ কাপে আগামীকাল নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। কিন্তু মাঠে নামার৭২ ঘণ্টা আগেও এঁরা নির্ভার। কাঠমান্ডুর গ্র্যান্ড হোটেলের লবিতে দিব্যিঘুরে বেড়াচ্ছেন কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনে।
সবাই অপেশাদার ফুটবলার।ফুটবল খেলে কানাকড়িও পান না। ২৪ বছর বয়সী অধিনায়ক স্ট্রাইকার জো বোবারিএকটা হোটেলে কাজ করেন। অর্ধেকের মতো খেলোয়াড়ই স্কুল-কলেজপড়ুয়া। কিছুখেলোয়াড় চাকরি টাকরিও করেন। খণ্ডকালীন পেশার এই ফুটবলাররা ৬ মার্চ সামনেদাঁড়াবেন বাংলাদেশের।
অধিনায়ক জো শিহরিত তা ভেবে, ‘আমরা ফুটবল সবে শুরুকরেছি। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে পরিচিত হওয়াই এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়েবড় চাওয়া।’
সেটিই স্বাভাবিক। আঁতুড়ঘর থেকে বেরোনো সদ্যোজাত ‘শিশু’ হাঁটাশেখে অনেক পরে। তবে এরই মাঝে দলটা খেলেছে বেশ কটি ম্যাচ। অবশ্য সবগুলোতেইহার। গত বছর ইস্ট এশিয়ান কাপে ম্যাকাওয়ের কাছে হেরেছে ১-৫ গোলে ও গুয়ামেরকাছে ১-৩-এ। গুয়ামের বিপক্ষে এর আগে হেরেছে ৬-০ ও ৮-০ গোলে।
ভূগোল ঘেঁটেদেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরে পশ্চিম প্রান্তে ১৫টি দ্বীপের সমষ্টি এইনর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ড। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং ফিলিপাইনের মাঝখানেএকটা বিন্দুর মতো, আয়তন মাত্র ১৮৩.৫ বর্গমাইল। ঢাকা শহরের অর্ধেকও না।জনসংখ্যা মাত্র ৭৫ হাজার!
আসল তথ্যটা এখনো বলা হয়নি। নর্দার্ন মারিয়ানাআইল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটা ‘দেশ’। যাদের আলাদাসংবিধান আছে, তবু এটি স্বাধীন নয়। গভর্নরশাসিত দেশটার রাষ্ট্রপতির নাম কিজানেন? বারাক ওবামা!
ওবামা মারিয়ানা আইল্যান্ডে যান? অধিনায়ক জোর গলায় উত্তেজনা, ‘নো নো নো। ওবামাকে কখনো দেখিনি। বাট হি ইজ আওয়ার প্রেসিডেন্ট।’
এইফুটবলাররা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাগরিক’ও বটে।দলের মিডিয়া ম্যানেজার ওয়েসলি বোগডান জানালেন, ‘আমরা আমেরিকার অধিভুক্ত, তবে স্টেট না। আমেরিকার নির্বাচনে ভোটাধিকার নেই আমাদের।’
তা না হোক, এইদ্বীপে কোনো পূর্ণাঙ্গ ফুটবল স্টেডিয়াম নেই, কথাটা একটু খটকা লাগার মতোই।কিন্তু অধিনায়ক জো সেটাই বললেন, ‘আমরা উন্মুক্ত মাঠে খেলি, লোকজন মাঠেরপাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে।’
১০ দলের সর্বোচ্চ লিগ সেখানে, নাম ‘এম’ লিগ।এই পর্বে ফুটবলারের সংখ্যা শ দুয়েক। গত সেপ্টেম্বর থেকে দলটা একসঙ্গেঅনুশীলন করছে। কোচ লুয়াম খেন কো এতেই খুশি, ‘দেখুন, আমরা একটা অপেশাদার দল।তবে এই টুর্নামেন্টের জন্য মাস পাঁচেক প্রস্তুতি নিতে পারা বেশ খুশিরব্যাপার।’
মজা আছে আরও, এই মালয়েশিয়ান কোচও খেলোয়াড়দের মতো বেতন পান না।আর্থিক চুক্তি-টুক্তি নেই আট বছর আগে গঠিত নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। তাহলে চলেন কী করে?
৬১ বছর বয়সী কো প্রশ্নশুনে রেগেই গেলেন এই প্রতিনিধির ওপর। ‘তোমার দরকার কী এত কিছু জানার’—বলেশেষে একটু শান্ত, ‘আমার ব্যবসা আছে। কাজেই সমস্যা হয় না।’
১৯৭২ মিউনিখঅলিম্পিকে খেলেছেন মালয়েশিয়ার হয়ে। হংকং, মালয়েশিয়ার কোচ ছিলেন। সত্তরেহংকংয়ের পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। কালের পরিক্রমায় এখন ওবামার ‘দেশের’ ফুটবলারদের গুরু। ওবামা কি জানেন এ দলটার কথা?
মনে তো হয় না!
১ মার্চ/নিউজরুম