স্পোর্টস ডেস্ক:‘সব জায়গাতেই আমরা বার্সেলোনার চেয়ে ভালো দল ছিলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনার চেয়ে ট্যাকটিক্যালি ভালো ছিল রিয়াল। আমি আমার দলকে দশে দশ দেব’—ম্যাচ শেষে মন্তব্যটা একজন দর্শকের। বিশেষ এই দর্শকের পরিচয়—তিনি রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস। চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়া ক্যাসিয়াস পরশুর ‘এল ক্লাসিকো’টি দেখেছেন গ্যালারিতে বসে।
কিন্তু এমন জয়ের পর কি আর তিনি দর্শক থাকতে পারেন! ম্যাচ শেষে ‘দর্শক’ ক্যাসিয়াসও মিশে গেলেন রিয়ালের আনন্দস্রোতে। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও কোচ হোসে মরিনহোর জায়গায় এলেন তিনিই। সেখানে সতীর্থদের প্রশংসায় ভাসাতে গিয়ে ক্যাসিয়াস আসলে এঁকেছেন ম্যাচের আসল ছবিটাই।
পরশু ন্যু ক্যাম্পে সত্যিকার অর্থেই দুর্দান্ত রিয়ালের সামনে উড়ে গেছে বার্সা। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-জাদুতে বার্সেলোনার দুর্গে গিয়ে বার্সাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ অগ্রগামিতা নিয়ে রিয়াল পা রেখেছে কোপা ডেল রের ফাইনালে। নিজেদের মাঠে রিয়ালের কাছে বার্সেলোনা ২ গোলের ব্যবধানে হারল এক দশকেরও বেশি সময় পর! রিয়াল সর্বশেষ ন্যু ক্যাম্পে ২-০ গোলে জিতেছিল ২০০১-০২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে। শুধু তা-ই নয়, ২০০৭-এর মার্চে ৩-৩ ড্রয়ের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে ৩ গোল খেল বার্সা।
রক্ষণভাগ, আক্রমণভাগ—সব জায়গাতেই রিয়াল ছিল শ্রেয়তর দল। বল পজেশনে বার্সেলোনা অনেক এগিয়ে ছিল বটে; তবে আক্রমণের ফিনিশিং টাচটা দিতে পারেনি। মৌসুমের এই শেষ অর্ধে এসে যেন বার্সার পাসিং ফুটবলটাকে অকার্যকরই মনে হচ্ছে! লিওনেল মেসি ছিলেন নিজের ছায়া! পুরো ম্যাচে শট নিয়েছেন হাতেগোনা দু-তিনটি। যার একটি ফ্রি-কিকে।
রোনালদো ছিলেন মেসির ঠিক উল্টো। জোড়া গোল করে ম্যাচটা আসলে শেষ করে দিয়েছেন তিনিই। ১৩ মিনিটে নিজেই পেনাল্টি আদায় করে দলকে এগিয়ে দেন পর্তুগিজ তারকা। আগের টানা ১১ ম্যাচে গোল খাওয়া বার্সেলোনা পরশু ভিক্টর ভালদেজকে বসিয়ে গোলপোস্টে নামায় হোসে ম্যানুয়েল পিন্টোকে। পিন্টোকে রোনালদো পরাস্ত করেন বাঁ দিকের নিচু শটে। এর মধ্য দিয়ে এই নিয়ে ন্যু ক্যাম্পে টানা ছয় ম্যাচে গোলে পেলেন পর্তুগিজ তারকা। ৫৭ মিনিটে রোনালদোই করেন ২-০।অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার শট পিন্টো ঠেকালেও ফিরতি বলকে ঠান্ডা মাথায় জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো। এর পরও হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর একটা ক্ষীণ আশা বার্সার ছিল।৬৮ মিনিটে সেই আশায় জল ঢালেন রাফায়েল ভারান। প্রথম লেগে ফরাসি এই তরুণই সমতাসূচক গোল করে রিয়ালকে রেখেছিল লড়াইয়ে। কর্নারের বলে ভারানের হেড পোস্টের কানায় লেগে ঢুকে যায় জালে, ৩-০! ৮৯ মিনিটে বার্সার সান্ত্বনার গোলটি করেছেন ডিফেন্ডার জর্ডি আলবা।
ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা সার্জিও রামোস দল ও রোনালদোর প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। রোনালদোর কথা, ‘ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে কীভাবে আটকানো যায়, সেই উপায় আমরা পেয়ে গেছি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যা করেছিলাম তার চেয়েও আমরা তাদের মাঠে ভালো খেলেছি।ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের আগে বার্সেলোনাকে হারানোটা বড় অনুপ্রেরণা।’ আগামী মঙ্গলবারই ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ রিয়ালের।
কদিন আগে মিলানের কাছে ২-০ গোলে হেরে আসার পর রিয়ালের কাছে এই হার। বার্সার সহকারী কোচ জর্ডি রৌরার কণ্ঠে তাই অসহায়ত্ব, ‘এই হার আমাদের যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে হবে।’ শনিবারই লিগের এল ক্লাসিকো এবং ১২ মার্চ মিলানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফিরতে ম্যাচ। রয়টার্স, এএফপি।
রিয়াল মাদ্রিদ ৩, বার্সেলোনা ১
সামগ্রিক ফলে ৪-২-এ জিতে ফাইনালে রিয়াল
৮ন্যু ক্যাম্পে খেলা সর্বশেষ ছয় ম্যাচেই গোল করলেন রোনালদো। গোল সংখ্যা ৮।
১২দুর্বল রক্ষণ টানা ১২ ম্যাচে গোল খাওয়াল বার্সেলোনাকে
৩৮এই নিয়ে রেকর্ড ৩৮ বার কোপা ডেল রের ফাইনালে উঠল রিয়াল মাদ্রিদ।
২৮ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম