শিশুশ্রম
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চবিদ্যাপীঠ। এই প্রতিষ্ঠানটিকে জ্ঞানের অগাধ রাজ্য বললেও ভুল হবে না। এখানথেকেই বেরিয়ে আসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। শিক্ষার বিস্তার ও মানউন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূমিকা অনন্য। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী এবিশ্ববিদ্যালয়টি জাতির ক্রান্তিকালে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তুদুঃখজনক হলেও সত্য, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুশ্রম একটি আকার ধারণ করেছে।বলা বাহুল্য, এই শিশুদের অধিকাংশই নিরক্ষর আর বাকিরা শিক্ষার প্রাথমিকস্তর থেকে ঝরে পড়া। বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘বাতির নিচে অন্ধকার’।
এই বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে, আবার ঠিক এই স্থানেইএকঝাঁক নিষ্পাপ কোমলমতি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শ্রম বিক্রি করেজীবনের ঘানি টানতে ব্যস্ত। আমি একটা বিষয় দেখে বেশি অবাক হয়েছি যে শিশুগুলোক্রমিক সংখ্যা গণনা করতে পারে না। একটি ছেলে বিভিন্ন রুমে খাবার দিয়েবেড়ায় কিন্তু সে রুম নম্বর দেখে তা শনাক্ত করতে পারে না। সে আমাকে বলে, ‘ভাইয়া, ৫৫২ নম্বর রুম কোনটি?’ যদিও প্রতিটি রুমের দরজায় নম্বর দেওয়া আছে, তবু সে তা পড়তে পারে না। একটা জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টিহলের বিভিন্ন ডাইনিং মেস, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের ক্যানটিনসহ বিভিন্নদোকানে এক হাজার ৫৮৭ জন শিশু কাজ করে। এদের অধিকাংশের বয়স ১৩ বছরের নিচে।এদের রাত-দিন পরিশ্রম করিয়ে এক হাজার-দেড় হাজার টাকা নামমাত্র পারিশ্রমিকদেওয়া হয়। ক্যানটিন মেসের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ খেয়ে আর ছেঁড়া টুকরাকাপড়চোপড় পরিধান করে এরা বেঁচে থাকে। তীব্র শীতে এদের করুণ অবস্থা কি কেউচিন্তা করে? একটা ছেলেকে বললাম, ‘তুমি কি আমার কাছে পড়া শিখতে আসবে?’ সেউত্তরে বলল, ‘ভাই, সময় কোথায়, সব সময় কাম আর কাম।’ বাংলাদেশের সর্বোচ্চবিদ্যাপীঠের শিশুশ্রম পরিস্থিতি যদি এই হয়, তবে না জানি সারা দেশে কতসংখ্যকশিশু আজ শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশুশ্রমের কবলে পড়ছে।
এবিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের কি কোনো খেয়াল আছে? তারা কি পারে না এইকোমলমতি শিশুগুলোকে ক্যানটিনের থালাবাসন ধোয়ার কাজ থেকে মুক্তি দিয়ে তাদেরহাতে বইখাতা তুলে দিতে? শিক্ষা যদি একটি মৌলিক মানবাধিকার হয়ে থাকে, তবেঅবশ্যই এই শিশুরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে শিক্ষার অধিকার পাওয়ার দাবি রাখে।রাষ্ট্রকে অবশ্যই এই অধিকার পূরণে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ, শিক্ষাই উন্নয়নেরপূর্বশর্ত আর শিক্ষাটা এই শিশুদের অধিকারও বটে।
আল শাহিরয়ার
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পাবলিক পরীক্ষায় নৈরাজ্য
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পাবলিক পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য, যেমনপরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, কিছু কিছু পরীক্ষাকেন্দ্র বা হলে অবাধ নকলেরসুযোগ প্রদান, নকলে বাধাদানকারী তথা পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারীশিক্ষক-কর্মকর্তার ওপর দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণে হতাহতের ঘটনা, পরীক্ষাকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে অবৈধ ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশেরমাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা ইত্যাদি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে, যাইদানীং প্রায়শই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পরীক্ষায় নকল একটি মারাত্মকসামাজিক ব্যাধি। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন কারণে পাবলিক পরীক্ষায় নকলেরপ্রবণতা বাড়তে থাকে এবং একসময় তা চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে বিদেশেরনামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েএবং এ দেশের ছাত্রছাত্রীদের ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেএকধরনের অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অবশেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়বিগত প্রায় এক দশক ধরে পরীক্ষাকেন্দ্রে এ ধরনের নৈরাজ্যমুক্ত পরিবেশ ফিরিয়েএনে তা বজায় রাখা সম্ভব হয়। বারবার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বাপরীক্ষাকেন্দ্রে নকলবাজির ঘটনা ঘটতে থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতিআগ্রহ হারায়।
স্বল্প মেধাবী তথা ক্লাসে খারাপ ছাত্র হিসেবে পরিচিত কেউযদি নকলের বদৌলতে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়ে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেভর্তি বা বৃত্তিলাভের সুযোগ পায় এবং প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়, তাতেসাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের মনে ক্ষোভ আর হতাশার জন্ম দেয়।
এ ধরনের পরিস্থিতি মোটেও কল্যাণকর নয়। তাই এমন অবাঞ্ছিত পরিবেশ থেকে যতদ্রুত সম্ভব মুক্তিলাভ প্রয়োজন। তাই দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না এনে এ ধরনেরঘটনায় জড়িত সব অপরাধীকে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরার মাধ্যমে জাতিকে সহজেই এ ধরনের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
শাহীদুল আযম
উত্তর টোলারবাগ, মিরপুর, ঢাকা।
২৮ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম