বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অনেক প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে

0
358
Print Friendly, PDF & Email

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো: মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ফাইলটি রাষ্ট্রপতি অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

এখন ফাইলটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে এবং তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। বিচারপতি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফটোকপি তিনি তার স্টাফের মাধ্যমে অন্য বিচারপতিদের কাছে পাঠিয়েছেন। এই প্রতিবেদনে ব্লগার রাজীব তার থাবা বাবা  নামের ব্লগে রাসূল সা:-এর ব্যক্তিগত জীবন ও স্ত্রীদের নামে নোংরা কুৎসা রটনার জন্য তাকে ধর্মদ্রোহী বা মুরতাদ বলে উল্লেখ করা হয়।

এই প্রতিবেদনটি অন্য বিচারপতিদের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টিকে বিচারপতি মিজানের বিরুদ্ধে রাজীবের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হিসেবে অভিযোগ আনা হয়। বিচারপতি মিজানুর রহমান গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রের ওই প্রতিবেদন বিলি করার পরদিন সংসদ অধিবেশনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘ওই বিচারপতি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। হত্যার নায়ক হিসেবে এ বিচারপতি কাজ করেছে। তাকে ইন্টারোগেশনের আওতায় আনা  হোক।

’ এরপর স্পিকার আবদুল হামিদ এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চান। পরে আইনমন্ত্রী সংসদকে জানান, ওই বিচারকের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পদপে নেয়া হবে। সংসদ সদস্যদের সাথে একমত পোষণ করে ব্যারিস্টার শফিক বলেন, এই বিচারক যে কাজটি করেছেন তা একেবারে জঘন্য ধরনের ও নিন্দনীয় কাজ। কাজটিকে এবং তার আচরণকে অসাংবিধানিক বলা যায়।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংসদ সদস্যরা দাবি জানানোর ছয় দিন পর সোমবার রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের অনুমোদন দেন। এসংক্রান্ত বিধান অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পর তারা বিষয়টি শুনানি করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করবেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি উঠেছিল। এর মধ্যে স্পিকারের সাথে একজন বিচারপতির তিক্ত বক্তব্য বিনিময়ের পর সংসদ সদস্যদের অনেকে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। স্পিকার প্রধান বিচারপতির বিবেচনার কাছে ছেড়ে দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। আরেকজন বিচারপতির বিচারিক বিষয় নিয়ে স্কাইপের মাধ্যমে এক প্রবাসীর সাথে কথোপকথন নিয়ে দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় তার পদচ্যুতির জন্য আইনজীবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি ওঠে। এ দু’টি ক্ষেত্রে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

এবার এমন এক স্পর্শকাতর বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নতুন উদ্যোগ সমাজ ও রাষ্ট্রের এই সংবেদনশীলতাকে আরো ছড়িয়ে দেবে কি না, ভাবার অবকাশ রয়েছে। এ নিয়ে পদক্ষেপে সমাজে নানা প্রশ্নও দেখা দিতে পারে।

আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে যারা দায়িত্ব পালনরত থাকেন তারা সব ধরনের অনুরাগ-বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেন। বিবেচ্য উদ্যোগটি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছে কি না এবং তা রাষ্ট্রের স্থিতি নষ্টের কোনো কারণ হয় কি না, বিষয়টি আবারো বিবেচনায় আনার প্রয়োজন রয়েছে।

শেয়ার করুন