কৃষি ডেস্ক: চলতি ইরি-বোরো মওসুমে সেচনির্ভর বোরো আবাদের শুরুতেই বিদ্যুৎ সঙ্কটের কবলে পড়েছেন কুড়িগ্রামের হাজার হাজার কৃষক। বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসায় প্রয়োজন অনুযায়ী েেত সেচ দিতে পারছেন না তারা।ফলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দোয়ারিরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার জানান, এবার তিনি ছয় বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। গত সোমবার েেত চারা রোপণ শেষ করেছেন। এখন এ আবাদ নিয়ে তিনি উৎকণ্ঠিত। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমতো না পাওয়ায় দিনরাতে ১৪ ঘণ্টার বেশি সেচযন্ত্র চালাতে পারছেন না। যেটুকু সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে, তা নিরবচ্ছিন্নভাবে নয়, পর্যায়ক্রমে। ফলে েেত পানি রাখা যাচ্ছে না। এক বার পানি দেয়ার পর আরেক বার দেয়ার আগে তা শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ছয় বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে তার ১০ দিন সময় লেগেছে।
কালাইপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল হাকিম, পাইকেরভিটার গ্রামের নওশাদ আলী ও ভুষিরভিটা গ্রামের দবির উদ্দিন জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে তারা েেত প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে না পারায় তাদের তিনজনের ১৭ বিঘা জমির অর্ধেকে চারা রোপণ এখনো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থা এখন হাজার হাজার কৃষকের।বোরো আবাদের শুরুতেই লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতর সূত্র জানায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কুড়িগ্রামের সাত উপজেলায় এবার প্রায় ৭৯ হাজার ৫০০ চাষি তাদের ৩২ হাজার ৬১৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে সাত হাজার ৫৫২টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করছেন। বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের আওতাধীন অর্ধেক পরিমাণ জমিতে এখনো চারা রোপণ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মজনুর রহমান জানান, সদর উপজেলায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ চাষি তাদের পাঁচ হাজার ২০ হেক্টর জমি আবাদে এক হাজার ২৩৭টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করছেন। লোডশেডিংয়ের কারণে দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে এখনো চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সঙ্কটে সেচ ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে অবহিত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, ফুলবাড়ী, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী এবং লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদরসহ ১০ উপজেলার ৫৯৪ গ্রামে তিন হাজার ৩৪৯ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে সমিতির সাতটি সাবস্টেশনের আওতায় ৩৩টি ফিডার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহকসংখ্যা ৮৪ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের গ্রাহক সংখ্যা ১০ হাজার ৭২১ জন।সমিতির বিদ্যুতের চাহিদা এখন গড়ে ৩৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট। তবে এই সরবরাহ কমে এখন ১২ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ফিডারে লোডশেডিং করা হচ্ছে কমপে ১০ ঘণ্টা।কোনো কোনো দিন লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে ১৫ ঘণ্টায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কে বি এম আমিন উল্লাহ পাটোয়ারী জানান, এখন বিদ্যুতের চাহিদা পিডিবির কুড়িগ্রামে সাত মেগাওয়াট, লালমনিরহাটে ১৮ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৬ মেগাওয়াট মোট ৬০ মেগাওয়াট। অথচ গ্রিডের ক্যাপাসিটি ৪২ মেগাওয়াট। গ্রিড লাইনের ক্যাপাসিটি কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নেয়া যাচ্ছে না।
তিনি দাবি করেন, এখন গড়ে প্রতিদিন ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। সমিতির চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাওয়ার পরও রাতে সেচ দেয়ার জন্য এক সাথে ১৫টি ফিডার চালু রেখে পর্যায়ক্রমে ৩০টি ফিডারে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষিরা দিনে এবং রাতে েেত পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারছেন না। এভাবে লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেচযন্ত্রগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম