কালজয়ী গানের একজন

0
259
Print Friendly, PDF & Email

একটা সময় ছিল যখন বাংলা চলচ্চিত্রে খুরশীদ আলমের গান ছিল অপরিহার্যসে সময়এখন আর নেইকিন্তু সেই খুরশীদ আলম আজও আছেন, আজও গান করছেনকেমন আছেনতিনি? বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাদিহা মাহনূর
স্বর্ণযুগে খুরশীদ আলমের গান ছিল চলচ্চিত্রের প্রাণতার গান মানেইশ্রোতা-দর্শকের মনে এক অন্যরকম দ্যোতনা সৃষ্টি করতস্বর্ণযুগের নায়কদেরমধ্যে শুধু ফারুক ছাড়া আর সবার কণ্ঠে বেশ সাবলীলভাবেই শোভা পেত খুরশীদআলমের গানবাবুল চৌধুরী পরিচালিত আগন্তুকচলচ্চিত্রে ডা. আবু হায়দারসাজেদুর রহমানের লেখা বন্দী পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে’—গানটি দিয়েইপ্লে-ব্যাকে খুরশীদ আলমের যাত্রা শুরু হয়সময়টা ছিল ১৯৬৯এই গানটিনায়করাজ রাজ্জাকের লিপে গিয়েছিলএক গান দিয়েই জয়পুরহাটের ছেলে খুরশীদ আলমচলচ্চিত্রের শ্রোতা-দর্শকের মন জয় করে নেনসেই থেকে শুরু হলো চলচ্চিত্রেখুরশীদ আলমের সফল সঙ্গীত জীবনতারও আগে ১৯৬৭ সালে তত্কালীন বেতারে আধুনিকগানের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে শুরু হয় তার পথচলাসে সময় খুরশীদ আলমেরগাওয়া দুটি আধুনিক গান কবি সিরাজুল ইসলামের লেখা তোমার দুহাত ছুঁয়ে শপথনিলামএবং জেবুন্নেসা জামালের লেখা চঞ্চল দুনয়নে বল না কি খুঁজছিব্যাপকশ্রোতাপ্রিয়তা পায়এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশচলচ্চিত্রে গান গেয়েছেনখুরশীদ আলমতিনি বলেন, ‘আগন্তুকদিয়ে শুরু আমারএরপর রবিন ঘোষের সুরেপিচঢালা পথ’, ইআর খানের সাধারণ মেয়েথেকে যে শুরু হলো, তা শেষ হয়নায়করাজ রাজ্জাকের কোটি টাকার ফকিরছবিতে গান করেএখন অনেক ছবিতে গানগাওয়ার অফার পাইকিন্তু গানের কথা যেমন ভালো লাগে না, সুরও ঠিক তেমন কানেবা হৃদয়ে দোলা দেয় নাসত্যি বলতে কি, একটা অসাধারণ সময় আমরা পার করেএসেছিখুব সুরেলা একটা সময় আমরা পার করে এসেছিস্বর্ণযুগ পেছনে ফেলেএসেছি আমরাসেই সময় মনে হয় আর ফিরবে নাতবে তরুণ কিছু ছেলে চেষ্টা করছেভালো করারতারাও আবার নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেনজয়পুরহাটেখুরশীদ আলমের জন্ম হলেও পুরনো ঢাকাতেই তার বেড়ে ওঠাচাচা ড. আবু হায়দারসাজেদুর রহমানের কাছেই মূলত তার গানে হাতেখড়িএরপর শেখ আবুল ফজল, জায়েদুররহিম, শেখ লুত্ফর রহমান, আমিনুল ইসলাম শারকী এবং ওস্তাদ বারীন মজুমদারেরসঙ্গীত বিদ্যালয়ে গানে তালিম নিয়েছিলেন তিনিতবে তার কণ্ঠ বিশেষ কারও মতোমনে হতো বলে পরবর্তী সময়ে ছায়ানটে তার কণ্ঠের নিজস্বতা আনতে সহায়তাকরেছিলেন বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক আজাদ রহমানএকজন খুরশীদ আলম সবসময় শুধুগানই গেয়েছেনসঙ্গীত পরিচালনায় তাকে কখনোই পাওয়া যায়নিএ প্রসঙ্গে তিনিবলেন, ‘আমি কণ্ঠশিল্পীগীতিকবিতাকে নিজের কণ্ঠে ধারণ করাই আমার কাজসুরনিয়ে ভাবা বা সুর সৃষ্টি করা আমার কাজ নয়যখন আমি সঙ্গীত পরিচালনার কাজশুরু করবতখন কিন্তু আমি অন্য আরেক সঙ্গীত পরিচালকের প্রতিযোগী হয়ে উঠবযেমন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ভাই ভালো গান করতেন, কিন্তু পরে যখন তিনিসঙ্গীত পরিচালক হলেন, তখন কিন্তু অনেকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেনকমে গেলতার গানতাই আমি আমার গান গাওয়া নিয়েই সবসময় ভেবেছিগাওয়া ছাড়া অন্যকিছুনিয়ে ভাবিনিযে কারণে অন্য কোনো ক্ষেত্রে আমাকে একেবারেই পাওয়া যায়নিঅনেক চলচ্চিত্রে গান গাইলেও এখনও গুণী এই শিল্পী কোনো জাতীয় পুরস্কারেভূষিত হননিএমনকি মিলেনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারঅবশ্য পুরস্কারের আশায়তিনি প্লে-ব্যাক করেননিজীবনের প্রয়োজনে, নিজের ভালো লাগা আরশ্রোতা-দর্শকের কথা চিন্তা করেই তিনি গান গেয়েছেন একের পর এককোন গান কীপুরস্কার এনে দিবেএটা নিয়ে তার মাঝে তেমন কোনো ভাবনাই ছিল নাখুরশীদ আলমবলেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনিএ নিয়ে কখনোই আমার দুঃখও হয় নাকারণ আমি জানি, এ দেশ প্রকৃত অর্থে গুণীর কদর করতে শেখেনিআমার সরাসরিশিক্ষক ছিলেন অজিত গুহতিনি প্রয়াত হয়েছেন আজ থেকে ২০ বছর আগেঅথচ তাকেদেয়া হয় মরণোত্তর সম্মাননাঠিক এমনই সম্মাননা আরও অনেককেই দেয়া হয়এটাকোন ধরনের ভণ্ডামি আমি বুঝি নাআমার আজও মনে আছে গোলাম মুস্তাফা ভাইকেএকবার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া হয়েছিলতিনি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মঞ্চে উঠে সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানকরেছিলেনমুস্তাফা ভাইয়ের মতো এমন সাহসী মানুষ আমি দেখিনি আজওতো যেবিষয়টি বলতে চাচ্ছি, সেটা হলোএখানে সত্যিকারের গুণী মানুষের কদর করা হয়নাতাই এ ধরনের স্বীকৃতিকে আমি ঘৃণা করিকারণ, যারা জুরিবোর্ডে থাকেনতারা নিজেরাই তো শুদ্ধ ননতারা আমার বিচার করবেন কী করে!

 

২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩.

 

শেয়ার করুন