স্পোর্টস ডেস্ক: চোটের কারণে খেলবেন না মাহেলা জয়াবর্ধনে। অনিশ্চয়তা আছে কুমার সাঙ্গাকারার খেলা নিয়েও। এ নিয়ে বাংলাদেশ দলের ভেতর অনুচ্চারে হলেও একটা স্বস্তি ছিল এত দিন। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সফরের আগে চোটাঘাত যে এখন মুশফিকুর রহিমের দলের জন্যই বড় দুশ্চিন্তার কারণ!
এনামুল হক জুনিয়র আর নাঈম ইসলাম ঝরে পড়েছেন আগেই। এবার অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন শাহরিয়ার নাফীসও। কাল সকালে মাঠে এসেছেন হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে। ব্যান্ডেজ ‘রহস্য’র ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন, আগের রাতে উত্তরার বাসায় ব্লেড দিয়ে ব্যাট চাঁছতে গিয়ে কেটে ফেলেছেন বাঁ হাতের তালু। রাতেই কাছের এক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, সেলাই লেগেছে পাঁচটা।
নিজের শ্রীলঙ্কা সফরটাকে অবশ্য শাহরিয়ার নিজেই ঝুলিয়ে রেখেছেন।কোচ শেন জার্গেনসেন তাঁকে চাচ্ছেন। ফিজিও বিভব সিংও আশাবাদী, প্রথম টেস্ট খেলার জন্য ‘মেডিক্যালি ফিট’ থাকবেন তিনি। বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীরও একই মত, ‘এটা খুবই সামান্য একটা ইনজুরি। এর সঙ্গে খেলতে না পারার কোনো সম্পর্ক নেই। শাহরিয়ারকে আমরা সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছি।’
কিন্তু কাল রাত পর্যন্তও শাহরিয়ার বোঝেননি। তাঁর মনে শঙ্কা, কাটা হাত নিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যারিয়ারটাই না যায়! ‘জাতীয় দলের হয়ে খেলতে কে না চায়! কিন্তু আমি যদি শ্রীলঙ্কা যাই-ও, প্রথম টেস্টের আগে তো অনুশীলনই করতে পারব না। সেলাই কাটতে কাটতে ৫-৬ তারিখ। খেললে প্রস্তুতি ছাড়া খেলতে হবে। সমস্যাটা হাতের তালুতে হওয়াতেই বেশি সমস্যা’—টেলিফোনে বলছিলেন শাহরিয়ার। ফিজিও-চিকিৎসকের কথায় আশ্বস্ত হয়ে নির্বাচকেরাও শ্রীলঙ্কায় পাঠাতে চাইছেন শাহরিয়ারকে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা ছেড়ে দিয়েছেন শাহরিয়ারের ওপরই। যদিও কাল রাত পর্যন্ত শাহরিয়ার দ্বিধান্বিত, ‘বুঝতে পারছি না কী করব। কাল (আজ) প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ সে আলোচনায় যদি শ্রীলঙ্কায় তাঁর না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ জনের দলে তৃতীয় পরিবর্তক হয়ে আসবেন কে? নির্বাচক কমিটি কাল কিছু না বললেও জানা গেছে, শাহরিয়ার না গেলে তাঁর জায়গায় শ্রীলঙ্কা যাবেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
দল ঘোষণার দুই দিনের মধ্যে একটার পর একটা চোটজনিত দুঃসংবাদ আকরাম খানের নির্বাচক কমিটিকে ফেলে দিয়েছে জটিল এক পরিস্থিতিতে। আজ এনামুলের পরিবর্তক ঠিক করছেন তো কাল শাহরিয়ার বলছেন ‘আমি যাব না’। প্রধান নির্বাচকের কণ্ঠে হতাশা, ‘শুরু থেকেই টেস্ট দল নিয়ে সমস্যা। প্রথমত সাকিবকে পাইনি। তামিম পুরোপুরি ফিট ছিল না।যদিও আশা করি, খেলার আগে ফিট হয়ে যাবে। এনামুল জুনিয়রকে নিলাম, সে-ও চোট পেল। নাঈম গেল, এখন শাহরিয়ার নাফীসও…দিনে দিনে শক্তির জায়গাগুলো কমে যাচ্ছে।’
তামিম ইকবালের কবজিতে এখনো অল্প ব্যথা আছে। এ ছাড়া এনামুল-নাঈমের ঘটনায় আশঙ্কা জাগে, বিপিএলের ‘গোপন ব্যথা’ আরও অনেকের শরীরেই লুকিয়ে থাকতে পারে। কাল অবশ্য অন্য একটা আলোচনাও ভেসে বেড়াল ক্রিকেটাঙ্গনে। ৭ ও ৮ মার্চ দলবদল হয়ে আগামী ১৫ বা ১৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। বিপিএল লোভ বাড়িয়ে দেওয়ায় এখন ঢাকা লিগেও অনেক টাকা। কোনো কোনো ক্রিকেটার নাকি তাই শ্রীলঙ্কা সফরের চেয়ে এবার ঢাকা লিগ খেলাটাকেই বেশি লাভজনক মনে করছেন।
কারণ যা-ই হোক, শ্রীলঙ্কা সফরের দলে সফর শুরুর আগেই তিনটি পরিবর্তন। দল শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে দেশ ছাড়বে কাল, এরপর সফরটা এক মাসেরও বেশি লম্বা। নির্বাচকদের আরও কতবার যে জরুরি সভায় বসতে হয়, কে জানে!
২৭ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম