স্পোর্টস ডেস্ক: ন্যু ক্যাম্পে কালকের রাতটি ছিল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার উঠোনে তাদের ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারানো তো স্বপ্নতুল্যই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দুর্দান্ত ফর্ম।কাতালানদের বল দখলে রাখা ফুটবলের বিপরীতে কোচ হোসে মরিনহোর প্রতি-আক্রমণনির্ভর পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়ে কোপা দেল রে’র ফাইনালে উঠে গেল তারা।
কাল রাতে রিয়াল যে অন্য গ্রহের ফুটবল খেলেছে, সেটা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু বার্সেলোনাকে ভড়কে দিয়ে গোল বের করে আনতে যা করা দরকার, তার সবটাই সফলভাবে প্রয়োগ করেছে তারা। চিরাচরিত ‘টকি-টাকা’ ফুটবলের বিপরীতে ‘হিট অ্যান্ড রান’জাতীয় প্রতি-আক্রমণ গড়ে বার্সার রক্ষণমুখ খুলে দেওয়ার কাজটি দারুণভাবে করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তিনি তাঁর গতি দিয়ে বরাবর ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন বার্সেলোনার রক্ষণব্যুহকে।ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে লিওনেল মেসি বিপুল ব্যবধানে পরাজিত—এ কথা বলে দেওয়াই যায়।
ম্যাচের শুরুতে হয়তো বার্সেলোনার সমর্থকেরা কাল ভাবতে পারেননি যে একটা বড় পরাজয় অপেক্ষা করছে তাদের কপালে। বার্সার শুরুটা ছিল দারুণ আশাজাগানিয়া। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারত তারা। পেদ্রো দারুণ ক্যারিশমায় ফ্যাবিও কয়েন্ত্রাওকে বোকা বানিয়ে বল ঠেলে দেন লিওনেল মেসির দিকে। কিন্তু দুরূহ কোণ থেকে মেসির নেওয়া শটটি অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
খেলার ধারার বিপরীতে ম্যাচের ১২ মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। দারুণ গতিতে বল নিয়ে বার্সেলোনার ডি বক্সে রোনালদো ঢুকে পড়লে তাঁকে বাধা দেন জেরার্ড পিকে। বিধির বাইরের সেই বাধায় পেনাল্টি পেয়ে যায় রিয়াল। পেনাল্টি থেকে দারুণ কুশলতায় বল গোলে পাঠান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
কালকের ম্যাচে রিয়ালের কৌশলের দারুণ একটা প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় প্রথম গোলের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করলে। বার্সেলোনার স্বভাবসুলভ বল দখলে রাখা ফুটবলের বিপরীতে রিয়াল কোচ হোসে মরিনহোর কৌশলটি ছিল বল পেয়েই প্রচণ্ড গতিতে প্রতি-আক্রমণে যাওয়া। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিন্তু অমন একটি পরিস্থিতিতেই বল নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন বার্সেলোনার গোলমুখে। তাঁর অসম্ভব গতির সঙ্গে পেরে না উঠে ‘বিধির বাইরে’ যেতে হয়েছিল জেরার্ড পিকেকে। ন্যু ক্যাম্পে কাল পুরো ৯০ মিনিট রিয়াল মাদ্রিদ একই কৌশলে খেলে বের করে এনেছে তিনটি গোল। তাদের আঁটসাঁট ম্যাচের ৮৯ মিনিটের আগপর্যন্ত চিড় ধরাতে পারেনি বার্সেলোনার ছোট ছোট পাসের আক্রমণগুলো। ৮৯ মিনিটে জরদি আলবার পা থেকে একটি গোল এলেও ততক্ষণে ম্যাচে ৩-০ গোলে পিছিয়ে বার্সেলোনা।
রেফারি আলবার্তো উনদিয়ানো মালেনকো কাল অনেকটা চাপের মধ্যে ছিলেন। এমনিতেই বার্সেলোনার বিপক্ষে পেনাল্টি দিয়ে ন্যু ক্যাম্পের দর্শকদের বিরাগের পাত্র হয়েছিলেন তিনি।কিন্তু সেস ফ্যাব্রিগাস ও পেদ্রোর দুটি পেনাল্টির আবেদন খারিজ করে দিয়ে তিনি হয়তো ন্যু ক্যাম্পে চিরদিনের জন্যই খলচরিত্রে পরিণত হয়েছেন। তবে নিরপেক্ষ দর্শকদের দৃষ্টিতে আলবার্তো উনদিয়ানোর সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক।
রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ম্যাচের ৫৭ মিনিটে। এর আগে অবশ্য বিরতির ঠিক আগ দিয়ে মেসির দারুণ একটি ফ্রি-কিক অল্পের জন্য লক্ষ্য হারায়। বিরতির ঠিক পরপরই সার্জিও বুসকেটস ও ফ্যাব্রিগাসের মিলিত প্রয়াস ব্যর্থ করে দেন রিয়াল গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজ। রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটিও ছিল একটি প্রতি-আক্রমণ থেকে। স্যামি খেদিরার পাস থেকে বল পেয়ে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া গোলে বল মারলে তা প্রতিহত করেন হোসে পিন্টো। ফিরতি বলে ঠান্ডা মাথায় বার্সেলোনার জালে বল ফেলেন রোনালদো।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কাল রিয়ালের হয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে করলেন নিজের দ্বাদশ গোলটি। ২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর ১৮টি ম্যাচে রোনালদো এই ১২ গোল করলেন। কাল রোনালদো আরও এক দারুণ রেকর্ডের রঙে রাঙিয়েছেন নিজেকে। রোনালদো একমাত্র ফুটবলার যিনি টানা ছয়টি এল ক্লাসিকোয় প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করেছেন। ‘সিআর-৭’ প্রমাণ করেছেন যে তিনি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর চেয়ে ন্যু ক্যাম্পে অনেক বেশি বিপজ্জনক।
ম্যাচের ৬৮ মিনিটে রাফায়েল ভারানে আরও একবার বার্সেলোনার জন্য দুঃখের কারণ হয়ে দেখা দেন। বার্নাব্যুর প্রথম লেগের ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে থাকা বার্সেলোনাকে জিততে দেয়নি এই ভারানের গোলই।কালও ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছেন এই ভারানে রিয়ালের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করে। মেসুত ওজিলের কর্নার থেকে বার্সেলোনার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের মাথার ওপরে লাফিয়ে হেড করে করা ভারানের গোলটি ছিল দারুণ দৃষ্টিনন্দন।
৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে আর কী-ইবা করার ছিল বার্সেলোনার। কিন্তু তার পরও ৮৯ মিনিটে জরদি আলবা রিয়ালকে ফিরিয়ে দিয়েছেন একটি গোল। বার্সেলোনার সমর্থকদের কাছে জরদি আলবার গোলটি সান্ত্বনার ছিল কি না, বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক, আলবার গোলটি ম্যাচের স্কোরলাইনকে দিয়েছে একটু ভদ্রোচিত চেহারা। রিয়াল-বার্সার ম্যাচের স্কোরলাইন কাল আলবার গোলের আগে যে বড় একপেশে দেখাচ্ছিল। রয়টার্স।
২৭ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম