ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: সাম্প্রতিককালে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা এবং এর কয়েকটি শাখা, এটিএম বুথ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের বৃহদাঙ্কের শেয়ার ধারণকারী ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আইডিবিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংকে ৭০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ, বাংলাদেশ সরকারের ৫ শতাংশ, স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ১৫ শতাংশ এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।সারাদেশে ব্যাংকটির ২৭৬টি শাখা ও ১৯৪টি এটিএম বুথ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী। দেশের অতিরিক্ত ১৬ শতাংশ রিজার্ভের শতকরা ৯ ভাগই ইসলামী ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংকেরই রয়েছে ৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানী শাহবাগের তথাকথিত তরুণ প্রজন্মের চরমপত্রে ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান অভিহিত করে বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারদলীয় ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথগুলোতে হামলা ও ভাংচুর চালায়। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এককভাবে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখায় ইসলামী ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ আমার দেশ-কে বলেন, ইসলামী ব্যাংক একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাংকে ১২ হাজার লোক চাকরি করে, ৪৩ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে এবং ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়—এ রকম কোনো প্রচার চালানো ঠিক নয়। তবে ইসলামী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংকের যে অবদান, তাতে এ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এ ব্যাংকের নেতিবাচক প্রচারণায় অনেক আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা ক্ষতির মধ্যে পড়বে। ইসলামী ব্যাংক আমাদের জাতীয় সম্পদ। একে রক্ষা করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
গভর্নরের কাছে লেখা চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে সাম্প্রতিক কিছু নেতিবাচক প্রচারণার জের ধরে গত কয়েক দিনে কয়েকটি শাখা ও এটিএম বুথে হামলা এবং ভাংচুর করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকদের নিরাপত্তাহীনতা ও জনমতে আস্থার সঙ্কট তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের সুশৃঙ্খল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুনাম ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। চিঠিতে দেশের ব্যাংকিং খাতের সুযোগ্য অভিভাবক হিসেবে গভর্নরের সদয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইসলামী ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা কামনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১১ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক এক প্রতিবেদেনে দেখা যায়, দেশের সব ব্যাংক ব্যবস্থায় সম্পদের ১৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, মূলধনের ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আমানতের ১৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ, বিনিয়োগ বা ঋণের ১৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, প্রভিশনের ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং অবলোপন করা ঋণের ৫ দশমিক ১২ শতাংশ এককভাবে ইসলামী ব্যাংকের।ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের ৪৫ শতাংশ শিল্প খাতে। তৈরি পোশাক শিল্পের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে দেশের মোট বিনিয়োগের ২১ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশের মোট বিনিয়োগের ১৭ শতাংশ অবদান এককভাবে এ ব্যাংকটির।
সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে পরিচালন মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।আমদানি-রফতানিতে ভালো ব্যবসা এবং উচ্চ রেমিট্যান্সসহ নানা কারণে এ ব্যাংকের কর ও প্রভিশন-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, এর আগের বছর যা ছিল ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা।
২৭ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম