২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: রাত ১২টা থেকে শুরু হবে শো, ভোর অবধি চলবে। একটা শেষে বাথরুম বিরতি, তারপরইশুরু হবে অন্যটা। অস্কার অনুষ্ঠানের আগেই দেখতে হবে মনোনয়ন পাওয়া সবছবি। আজ চলুক সিলভার লাইনিংস প্লেবুক ও আরগো। কাল হবে জ্যাংগো আনচেইনড, জিরো ডার্ক থার্টি। জ্যাংগো দেখে যদি মাথা আউলা হয়ে যায়, তখন না হয় একটাঅ্যানিমেটেড সিনেমা দেখে নেওয়া যাবে। এ সপ্তাহে কি আর সারা রাত জাগাযাবে? আরও মোটামুটি দুই সপ্তাহ তো লাগবেই নয়টা সিনেমা শেষ করতে।
অন্ধকার ঘরে জ্বলছে শুধু ল্যাপটপের আলো, কানে হেডফোন। পপকর্ন না-ই হলো, চা তো আছে।
আজকালসিনেমা দেখা চলছে যেন এভাবেই। সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবিটিরমাস্টারপ্রিন্ট ডিভিডি এখনো আসেনি, তাতে কী? ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আছে না!নামিয়ে (ডাউনলোড) নেব। ভিনভাষার সিনেমা, সমস্যা নেই। সাব-টাইটেল আছে না!
খুবসিরিয়াস কিছু নয়, আজ হয়তো মন চাইছে হালকা কোনো সিনেমা দেখতে। আইএমডিবির(ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেইস) তালিকা দেখে নিন না একবার। হাসির ছবি, রোমান্টিক ছবি, হরর ছবি, থ্রিলার—কোনো কিছুর কমতি নেই। সেরা তালিকার কোনটিচাই? সেই ছবিটি হয়তো সংগ্রহে নেই। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিন। বন্ু্লরতালিকায় মুভিপাগল কেউ না-কেউ তো আছেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবেন ছবিনামানোর ওয়েব ঠিকানা।কিংবা ব্লগ পড়ার অভ্যাস আছে? মুভিপাগল ব্লগার কারা, তাঁদের পেজে গিয়েই দেখুন। তাঁদের দেখা সিনেমার রিভিউ, ডাউনলোড লিংক—সবইমজুত।
স্কাইফল দেখে হয়তো ভাবছেন পুরোনো বন্ড ছবিগুলো দেখা গেলে মন্দহতো না। চলে যান সীমান্ত স্কয়ারে (আগের রাইফেলস স্কয়ার) কিংবা বসুন্ধরাশপিং কমপ্লেক্সে। পেয়ে যাবেন সব বন্ড সিনেমার ডিভিডি সংগ্রহ। ৬০ থেকে ৭০টাকার একটি ডিভিডিতে চার বা পাঁচটি সিনেমা।
অভিনয়শিল্পী ধরে সিনেমাসংগ্রহ যেমন আছে। অ্যানিমেশন, হরর ও ক্লাসিক—এসব বিভাগ ধরেও সিনেমারসংগ্রহও আছে। খুব বেশি প্রিয় কোনো সিনেমা হলে না হয় সিঙ্গেল ডিভিডিই কিনেনিলেন।
এই হলো একালের সিনেমা দেখা। তাই বলে কি তরুণেরা হলে গিয়েসিনেমা দেখেন না? তা-ও না। স্পাইডারম্যান থ্রিডির মজা তো আর বাড়িতে পাওয়াযাবে না। চোরাবালি, টেলিভিশন কিংবা হালের দেবদাস—এসব ছবি তো হলে গিয়েইদেখা চাই। সে বন্ধুবান্ধব মিলে হোক বা প্রিয় মানুষটিকে নিয়েই হোক। হলেসিনেমা দেখার আবেদন ফুরায়নি।
উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া সাকিব জানালেন, হলেটিকিট, খাওয়াদাওয়া—সব মিলে খরচটা জোগাতে একটু প্রস্তুতি লাগে আমাদেরবয়সী ছেলেমেয়েদের। চাইলেই তো প্রতি সপ্তাহে গিয়ে সিনেমা দেখা যায় না।আর ডিভিডি এত সহজে পাওয়া যায়। বন্ধুদের সঙ্গে অদলবদল করেও দেখা যায়।ডিভিডিতেই তাই বেশি সিনেমা দেখা হয়।
নাইমুল হক-সাদিয়া তাহসীন দম্পতিদুজনই চাকরিজীবী। বাড়িতে বড় পর্দার এলসিডিতে সিনেমা দেখা হয় বলেজানালেন। ‘ছুটির দিন রাতেই সাধারণত দেখা হয়। পরের দিনটা একটু দেরি করে ঘুমথেকে উঠতে পারি। কখনো আমার পছন্দে, কখনো ওর পছন্দের সিনেমা দেখি।’ বললেনসাদিয়া।
কলেজের এক শিক্ষিকা একবার বলছিলেন তাঁর দীপ জ্বেলে যাইসিনেমাটি দেখার অভিজ্ঞতা। বন্ধুদের সঙ্গে দেখতে গিয়েছিলেন সেবার, সুচিত্রাসেনের কায়দায় শাড়ি-ব্লাউজ বানিয়ে, তাঁর ঢঙেই চুল বেঁধে যাওয়া। সেজন্য প্রস্তুতি আবার সপ্তাহ খানেক ধরে নেওয়া। বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা যেতেপারেননি, তাঁদের কী আফসোস! পুরো কাহিনি শোনাতে হয়েছিল তাঁদের।
এইপ্রজন্ম এত আগের সেসব সিনেমা দেখার গল্পই শুনেছে শুধু। একটু একটু বোধ হয়মনে করতে পারে ভিসিআর বা ভিসিপিতে সিনেমা দেখার কথা। নব্বইয়ের দশকে বাসাবদল করে জরুরি একটা কাজই ছিল, পাড়ার ক্যাসেট ভাড়া দেওয়ার দোকান খুঁজেবের করা। এখন যেমন ডিশের সংযোগ নেওয়া হয়। তবে একাল আর সেকালে ধরন যতইবদলাক, রূপালি পর্দার প্রতি আকর্ষণ তো এতটুকু কমেনি।