কৃষি ডেস্ক: মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম কম হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। অবস্থাপন্ন কৃষকেরা বেশি দামের আশায় হলুদ শুকিয়ে সংরণ করতে পারলেও পুঁজি না থাকায় ুদ্র কৃষকেরা অনেক কম দামে হলুদ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এক সময় মাঠজুড়ে যেসব জমিতে ধান দেখা যেত, সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ। আগে শুধু বসতবাড়ির আশপাশে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতে হলুদচাষ হতো। এখন মাঠজুড়ে পরিকল্পিতভাবে হলুদের আবাদ হচ্ছে।বিভিন্ন ফসলের মাঠের এ দৃশ্য এখন সবার কাছে অতি পরিচিত।
উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে হলুদচাষ। হলুদের ছোঁয়ায় উপজেলার ১০ সহস্রাধিক মানুষের জীবন নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন ছিল মনে। ‘হলুদ বিপ্লব’ ভাগ্য ফেরানোর পরিবর্তে এখন পুঁজি বাঁচানোর দুশ্চিন্তা এসব অভাবী মানুষের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, উপজেলায় এবার ৩৫০ হেক্টর জমিতে হলুদের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ হেক্টরে প্রায় দুই টন হলুদ উৎপাদনের আশা করছেন। সেই হিসাবে এবার ৭৫০ টন হলুদ উৎপাদন হবে।
হলুদচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী উপজেলার বেশ কিছু এলাকার কৃষকেরা দীর্ঘ দিন ধরে হলুদচাষ করে আসছেন। দুই বছর আগেও হলুদের চড়া দাম ছিল। কিন্তু গত বছর দাম অনেক পড়ে যায়। হলুদচাষিরা আশা করেছিলেন, এবার ভালো দাম পাবেন। তাই চাষিরা চলতি মওসুমে ব্যাপকভাবে হলুদচাষ করেন।
গত বছর কুকুরমণি জাতের প্রতি মণ হলুদের দাম ছিল ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা। এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর মালুঞ্চা, তারাগঞ্জ জাতের হলুদ ১০০ থেকে ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। হলুদ তোলার শুরু থেকেই দাম কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
হলুদচাষের জন্য প্রথমবার বীজ কিনলেই চলে। পরে নিজের েেতর বীজ দিয়েই আবাদ করা যায়। হলুদে রোগবালাই নেই বললেই চলে, তাই কীটনাশকের খরচ নেই। গড়ে এক শতক জমিতে হলুদচাষে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকার মতো। ওই জমিতে সাড়ে তিন থেকে চার মণ হলুদ পাওয়া যায়। প্রতি মণ হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে এক হাজার আড়াই শ’ টাকায়। এতে পুঁজি বাঁচানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।
রাজাপুর গ্রামের কৃষক আকবর হোসেন জানান ‘গত মওসুমেও পাইকারেরা বাড়ি বাড়ি এসে হলুদ কিনে নিয়ে যেতেন। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।এবার বিক্রির জন্য হলুদ নিয়ে ক্রেতাদের পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।’
ধোয়াইলের গ্রামের হলুদ ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত বছর উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় হলুদ বিক্রি করতে পারিনি। টাকা আটকে আছে। এবারো হলুদের দাম কম।শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি। তাই এবার হলুদ কেনার সাহস পাচ্ছি না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফউদ্দিন আহম্মেদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় চাষিরা হতাশ।
২৬ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম