সবুজ সবুজ ঢ্যাঁড়স। তার মধ্যে লাল লাল চিংড়ি। এর পাশে রাখা সেদ্ধ শাক। জিভে জল আনা খাবারগুলো একেবারেই তেল-মসলাবিহীন। চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা জীবনে প্রথম নিজহাতে রান্নার এ আয়োজন করেছিলেন কলেজে পড়ার সময়, আদিবাসী ঢঙে রান্না খাবার দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন হোস্টেলের বন্ধুদের কাছে।
আদিবাসী ঐতিহ্যের রান্না করতে ভালোবাসেন তিনি। মায়ের কাছে শেখা সেসব রান্না চলে ঢাকা শহরের ধানমন্ডির বাড়ির রান্নাঘরেও।
কনকচাঁপা চাকমা বলেন, ‘প্রকৃতি অকৃত্রিমভাবেই আমাদের ভালো থাকার উপকরণ দিয়ে আসছে।আমাদের আদিবাসীদের জীবনপ্রণালির মতো রান্নার আয়োজনেও থাকে প্রকৃতির ছোঁয়া।প্রতিটি খাবারে কোনো না কোনো গুণ থাকে। আদিবাসী রান্নায় সে গুণটিকে বজায় রাখা হয়। বেশির ভাগ খাবারই হয় তেল ও মসলাবিহীন। খাবারে তেল ও মসলাযুক্ত করা হলেও তা পরিমাণে থাকে খুব কম। খাবার যেমন স্বাস্থ্যকর হয় তেমনি খেতেও সুস্বাদু হয়।’
কনকচাঁপা চাকমা তেমন কিছু আদিবাসী রান্নার রেসিপি দিয়েছেন।
বিনি ভাত
উপকরণ: বিন্নি চাল ৫০০ গ্রাম, কোরানো নারকেল অর্ধেকটা, সয়াবিন তেল ১ টেবিল-চামচ, লবণ ১ চিমটি।
প্রণালি: চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। হাঁড়িতে অর্ধেক পানি ভরে চুলায় দিন। ফুটন্ত পানিতে চালগুলো ঢেলে দিন। চাল আধা সেদ্ধ হলে মাড় ঝরিয়ে ফেলুন। এরপর ভাতসহ হাঁড়িটি আবার চুলায় দিন। ভাতের সঙ্গে এক টেবিল-চামচ সয়াবিন তেল, কোরানো নারকেল ও পরিমাণমতো লবণ মিশিয়ে নিন। হাঁড়ির নিচে তাওয়া দিয়ে মাঝারি আঁচে চুলায় ১০ মিনিট রাখুন। তারপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন।
চিদোল বেগুন
উপকরণ: চিদোল গুঁড়া (কয়েক রকমের শুঁটকির মিশ্রণ) ২ টেবিল-চামচ। বেগুন বড় আকৃতির ২টি, চালের গুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, অমসৃণভাবে বাটা রসুন ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচবাটা ১ টেবিল- চামচ, লবণ ১ চা-চামচ, হলুদের গুঁড়া ১ চিমটি।
প্রণালি: বেগুন প্রতিটিকে ৬ টুকরো করে কেটে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে চিদোল গুঁড়া গুলিয়ে ছাঁকুনি দিয়ে ছেঁকে পানিটা বেগুনের ওপর দিয়ে দিন। বেগুন ডুবে যাওয়া পর্যন্ত পানি দিয়ে পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিন। এর সঙ্গে কাঁচা মরিচবাটা ও হলুদ মিশিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে দিন। যখন বেগুন অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে আসবে তখন চালের গুঁড়া পানিতে গুলিয়ে বেগুনে ঢেলে দিন। বেগুন সেদ্ধ হয়ে এলে রসুনবাটা দিয়ে নেড়ে নামিয়ে ফেলুন। খোলা পাত্রে ঢেলে রাখুন, এতে পরিবেশনের সময় বেগুনের সবুজাভ ভাবটি থেকে যাবে।
মুলা তাবা
উপকরণ: মাঝারি আকৃতির মুলা ২টি, ছুরি শুঁটকি ৫ টুকরা, পেঁয়াজ ১টি, কাঁচামরিচ স্বাদমতো, লবণ ও ধনেপাতা পরিমাণমতো।
প্রণালি: মুলা মাঝখানে ফেড়ে ছোট ছোট টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। শুঁটকিগুলো ১ ইঞ্চি পরিমাণ কেটে পরিষ্কার করে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে দেড় কাপ পানি দিয়ে এর মধ্যে শুঁটকি ও মুলা দিন। তাতে পেঁয়াজ কুচি, ফাড়া মরিচ ও লবণ দিয়ে চুলায় বসিয়ে ঢেকে দিন। অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে নেড়ে দিন।পুরো সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর ধনেপাতা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
মাছ খলা
উপকরণ: মাঝারি আকৃতির রুই মাছ (যেকোনো বড় মাছ হতে পারে), টমেটো ৩টি, আদা বাটা ১ টেবিল-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ, হলুদ ১ চিমটি, পেঁয়াজ কুচি করা মাঝারি আকৃতির দুটো, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল-চামচ, ধনে পাতা পরিমাণমতো।
প্রণালি: মাছ চাক করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি খোলা কড়াইয়ে আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ কুচি, হলুদ, তেল, লবণ দিয়ে মাছের টুকরোগুলো ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। এবার দেড় কাপ পানি দিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে রান্না করুন। মাছ যখন সেদ্ধ হয়ে আসবে তখন কাটা টমেটো মিশিয়ে নিন। টমেটো সেদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিন।
বাঁধাকপি সেদ্ধ
উপকরণ: একটি বাঁধাকপির তিন ভাগের এক অংশ বড় বড় টুকরো করে কাটা। লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: বাঁধাকপি ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পাত্রে ১ কাপ পরিমাণ পানি পরিমাণমতো লবণ দিয়ে চুলায় ফুটতে দিন। এবার ফুটন্ত পানিতে বাঁধাকপি ঢেলে দিন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট ঢেকে রান্না করুন। অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে সবুজাভ ভাব থাকতে থাকতে নামিয়ে নিন।
বদা কেবাং (ভাপে ডিম)
উপকরণ: ডিম ৫টি, কাঁচা মরিচ ৪টি, টমেটো ১টি, পেঁয়াজ মাঝারি ২টি, ধনেপাতা, লবণ, হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো।
প্রণালি: ডিম একটি পাত্রে ফেটিয়ে নিন। এর সঙ্গে পেঁয়াজ কুচি, মরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, টমেটো কুচি, হলুদ, লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার একটা বড় কলাপাতা দুই ভাঁজ করে তাতে ডিমের মিশ্রণটা ঢেলে দিন। কলাপাতায় মিশ্রণটি পুঁটুলির মতো করে নিয়ে সুতা দিয়ে মুখটা বেঁধে দিন। এবার ভাপ দেওয়ার পাত্রের মুখে অথবা গরম ভাতের ওপরে পুঁটুলিটা দিয়ে দিন। বদা কেবাং হতে সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। হয়ে এলে নামিয়ে নিন। কেকের মতো কেটে বিনি ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩.