স্পোর্টস ডেস্ক: বিপিএলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট দল ঘোষণার এক দিন পরই দুঃসংবাদ। চোটের কারণে ১৫ জনের দল থেকে কাল নাম কাটা গেল এনামুল হক জুনিয়র ও নাঈম ইসলামের।দলে ঢুকেছেন বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি ও ব্যাটসম্যান মার্শাল আইয়ুব।
বিসিবি কাল সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিশ্চিত করেছে দলে চোটজনিত ওলট-পালটের খবর। বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় দলের ফিজিও বিভব সিং বলেছেন, এনামুলের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট গ্রেড-১ পর্যায়ের। ফিজিওথেরাপি এবং পুনর্বাসনের জন্য ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে তাঁর। নাঈমের ব্যথা ডান ঊরুতে। তাঁর সময় লাগবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কার বিমান ধরবে আগামী পরশু।
প্রায় চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছিলেন এনামুল জুনিয়র। কোথায় নতুন করে সব শুরু করবেন তা না, প্রথম দিন অনুশীলনে নেমেই মাঠ ছাড়লেন বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে। চোটটা পুরোনো। বিপিএলের ফাইনালে সমস্যা আরও বাড়ে। বিসিবির চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল দুই দিন বিশ্রামে থেকে যেন অনুশীলন শুরু করেন। এনামুল তিন দিন বিশ্রাম নিয়ে কালই প্রথম যোগ দিলেন অনুশীলনে।কিন্তু ভাগ্য এমনই খারাপ, ওয়ার্মআপের জন্য রানিংয়ে নেমেই অনুভব করলেন তীব্র ব্যথা। ‘মনে করেছিলাম, বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজ (গতকাল) রানিং করে বুঝলাম ব্যথা লাগছে’—বলছিলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই স্পিনার।তাঁর মনে শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল তখনই, ‘যদি বাদ পড়ে যাই, জীবনে এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হবে না। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল এবার দলে থাকব। সাকিবের ইনজুরির পর সম্ভাবনাটা আরও বেড়ে গিয়েছিল।মনে মনে ঠিক করেছিলাম, দলে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করব।’ নাঈমের চোটও শরীরে বাসা বেঁধেছিল আগেই।সূত্র জানিয়েছে, বিপিএলের পর ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভব সিং। সামনে টেস্ট ক্রিকেট, অথচ মাঝের সময়টাতে নাকি কেউই নিজেদের ফিটনেস টেস্ট ক্রিকেটের পর্যায়ে নিতে পারেননি। চোট নিয়েও অনেকে খেলে গেছেন বিপিএলের ম্যাচ। অভিযোগটা এনামুল স্বীকারও করলেন কাল, ‘আসলে বিপিএলে টানা খেলতে হয়। এক দিন বিশ্রাম নিয়ে হয়তো টানা তিন দিনই খেললাম।টি-টোয়েন্টি হলেও এ রকম একটা বড় মাপের টুর্নামেন্টে রিল্যাক্স থাকা কঠিন।’এনামুল-নাঈমের চোট টেস্ট দলের দরজা খুলে দিয়েছে মার্শাল-সানির জন্য। সানি এর আগেও দলে ছিলেন, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ব্যাটিং এই প্রথম সুযোগ দিল মার্শালকে। অনুভূতি প্রকাশে মার্শাল তাই ভাষাহীন, ‘কী বলব! খুব ভালো লাগছে। আমি খুশি। তবে এই পর্যায়ে টিকে থাকতে হলে এখন আরও বেশি কষ্ট করতে হবে।’ জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ (৬০৪) রান করেছেন। ৪৬৫ রান করে কাল শেষ হওয়া বিসিএলের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টও। জানালেন, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার নেওয়ার সময় প্রধান নির্বাচক আকরাম খানই কানে কানে সুখবরটা দিয়েছেন তাঁকে। এর আগে পরশু দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনেও আকরাম বলেছিলেন, মার্শাল দলে আসার যোগ্যতা রাখে। মিডল-অর্ডারে ডানহাতি-বাঁহাতির ভারসাম্য রাখতেই নিতে হয়েছে মমিনুল হককে।ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের আরেক ক্রিকেটার ইলিয়াস সানিও কাল মাঠ থেকেই গুঞ্জনটা শুনেছেন। পরে এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে চূড়ান্ত সুখবর পেয়ে যেন নতুন করে উদ্বুদ্ধ, ‘আমি তো বাদই পড়ে গিয়েছিলাম…। দলে ফিরেছি শুনে অবশ্যই ভালো লাগছে। চেষ্টা করব যেন জায়গাটা ধরে রাখতে পারি।কিন্তু এনামুলের জায়গায় সানি কেন? দল ঘোষণা করার সময় প্রধান নির্বাচক না বলেছিলেন, দল নির্বাচনী সভায় এনামুলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোশাররফ হোসেন ও সাকলাইন সজীব! প্রসঙ্গটা তুলতেই নতুন ব্যাখ্যা দিলেন আকরাম খান, ‘ওদের কাউকে নিলে স্পিন আক্রমণটা বেশি অনভিজ্ঞ হয়ে পড়ত। এনামুলের জায়গায় মোটামুটি অভিজ্ঞ কাউকে চেয়েছি আমরা। সেজন্যই সানিকে নেওয়া।’
২৬ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম