স্পোর্টস ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট। বাংলাদেশ দলের জন্য এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বোধ হয় আর নেই। আট টেস্ট খেলে সাতটাতেই ইনিংস পরাজয়।অন্যটাতে হার ২৮৮ রানে। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে টেস্ট খেলার কথা শুনলেই তো আঁতকে ওঠার কথা খেলোয়াড়দের!মুশফিকুর রহিম আঁতকে উঠছেন না। বিপিএলের পর কালই প্রথম জাতীয় দলের অুনশীলনে যোগ দিয়ে বরং শোনালেন নতুন আশার কথা। আশার উৎসমূল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত হোম সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজে জয়, টেস্টেও ভালো খেলা শ্রীলঙ্কায় নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে মুশফিককে, ‘শুধু শ্রীলঙ্কায় নয়, বিদেশে গিয়ে ভালো খেলার নজির আমাদের বেশি নেই। বিদেশে আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারি না। দলে অনেক পরিবর্তন থাকে, নতুন খেলোয়াড়েরা আসে। এবারও তরুণ খেলোয়াড় আছে, তবে তারা সবাই যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও ভালো খেলেছে। তরুণ আর অভিজ্ঞরা যার যার কাজটা ঠিকভাবে করলে শ্রীলঙ্কায় ইনশাল্লাহ ভালো খেলব।’ মুশফিকের আশার অনুঘটক শ্রীলঙ্কা দলে মাহেলা জয়াবর্ধনের অনুপস্থিতি এবং কুমার সাঙ্গাকারাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, ‘জয়াবর্ধনের মতো খেলোয়াড় খেলবে না, এটা অনেক বড় ক্ষতি তাদের জন্য।সাঙ্গাকারাও অনিশ্চিত। ১০ হাজার রান করা দুজন খেলোয়াড় না খেললে ওদের শক্তি কমবেই। আর শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণও আহামরি নয়। মুরালি-ভাস যাওয়ার পর ওরা খুব কম টেস্টই জিতেছে। গত সাত-আট বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ শ্রীলঙ্কা গিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলার।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো খেললে ভালো, খারাপটা খুবই খারাপ না হলে অভিযোগ করার কিছু নেই। তবে জিম্বাবুয়ে সফরে ব্যর্থতা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কতটা নাড়িয়ে দেয় সেটা ২০১১-এর সফর শেষেই দেখা গেছে। নেতৃত্ব থেকেই সরে যেতে হয় সাকিব-তামিমকে। শ্রীলঙ্কা সফর শেষে জিম্বাবুয়েতে আবারও সেই পরীক্ষা দিতে যাবে বাংলাদেশ দল। তার আগে মুশফিক শ্রীলঙ্কা থেকেই সংগ্রহ করে নিতে চান চ্যালেঞ্জ জয়ের টনিক, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে তার আগে এ বছর আমরা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব শ্রীলঙ্কায়। আমাদের পরিকল্পনা আছে গতবারের হোম সিরিজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এটাই টার্গেট। শ্রীলঙ্কায় শুরুটা ভালো হলে, আশা করি জিম্বাবুয়েতেও ভালো করব।’
কিন্তু বিপিএলের সুবাদে টেস্ট সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টির অভ্যস্ততা না ভালো খেলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়! মাঝে বিসিএল ফাইনাল হলেও টেস্ট দলের মাত্র চার ক্রিকেটার খেলেছেন চার দিনে সমাপ্ত পাঁচ দিনের ম্যাচটা। টি-টোয়েন্টি থেকে সরাসরি টেস্টে ফেরা মানলেও বিপিএলের ম্যাচ প্র্যাকটিসটা গুরুত্ব পাচ্ছে অধিনায়কের কাছে, ‘ম্যাচ প্র্যাকটিসের ওপর আর কোনো প্র্যাকটিস নেই।স্থানীয়রা অনেক ভালো খেলেছে। এটা ইতিবাচক। তা ছাড়া শ্রীলঙ্কায় গিয়ে একটা প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। হাতে যথেষ্ট সময়ও আছে। আশা করব, তার আগে ছোটখাটো ইনজুরিগুলো কাটিয়ে সবাই ফিট হয়ে যাবে।’
শ্রীলঙ্কায় ভালো খেলার আশায় বড় ‘কিন্তু’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিও। মুশফিক মানছেন, ‘সাকিব না থাকাটা বিরাট ক্ষতি।’ তবে এটিকে নতুনদের জন্য সুযোগ হিসেবেও দেখছেন, ‘সাকিবের জায়গা পূরণ করা কঠিন।তার পরও আশা করব, যারা আসবে তারাও ভালো খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের পারফরম্যান্স ভালো ছিল। কাজেই নতুনদের ওপর আমাদের আস্থা আছে।’ দলে থাকা তিন তরুণের মধ্যে সোহাগ গাজীর টেস্ট অভিষেক হয়ে গেছে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই। শ্রীলঙ্কায় মমিনুলকে ‘ব্যাকআপ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান’ হিসেবে নেওয়া হলেও এনামুল হকের (বিজয়) অভিষেক এক রকম নিশ্চিত।১৫ জনের দলে মমিনুলের আসাটা মূলত সাকিবের অনুপস্থিতিজনিত ব্যাটিং শূন্যতা ভরতে। আর বোলিংয়ে দলের ভরসা হতে পারতেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। কিন্তু কাল জানা গেল দুঃসংবাদ—হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে এনামুল শ্রীলঙ্কা যেতে পারছেন না। তবে মুশফিক হাল ছাড়ছেন না, ‘দুই-আড়াই মাস ধরে আমরা টানা খেলছি। আমার মনে হয়, শুধু ওনার (এনামুল) না আমাদের সবারই টুকটাক সমস্যা আছে। আমার মনে হয় না এতে সমস্যা হবে।’
২৬ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম