ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: অস্তিত্বহীন দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকার স্বীকৃত স্থানীয় বিল করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল শাখা।ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা স্বপ্রণোদিত হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কোনো প্রকার জামানত ছাড়াই এ বিল ক্রয় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ৩০ জানুয়ারি থেকে পাঁচ কর্মদিবসব্যাপী পরিদর্শনে এ অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের অনুকূলে ১৫ কোটি টাকার এলটিআর (লোন অ্যাগেইনেস্ট ট্রাস্ট রিসিট) সীমা অনুমোদন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দুটি এলটিআর ১ কোটি ৭৬ লাখ এবং ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ঋণপত্র (এলসি) সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে এলটিআরের সীমা ১২০ দিন অতিবাহিত হলেও জেরিনা কম্পোজিট ঋণ সমন্বয় করেনি। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ এ ঋণ শ্রেণীকরণ না করে একই প্রতিষ্ঠানের নামে আরও প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এএইচবি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের এবং এ জেড কটন ইয়ার্নের মালিক আশরাফ হোসেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একই ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও দুটি প্রতিষ্ঠান হতে লোকাল বিল ক্রয় করা হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একই ব্যক্তি এ বিষয়টি কারখানা পরিদর্শনকারী বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ কনসালটেম্লট খন্দকার মাহমুদুল হাসান এবং ভিজিলেন্স ডিপার্টমেন্টের কেএম শফিকুল ইসলামের কাছে তথ্য থাকা সত্ত্বেও কারখানা পরিদর্শনের প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি বিলগুলো ক্রয়ের সময় প্রতিষ্ঠান দুটির কাছ থেকে কোনো জামানতও নেয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, এএইচবি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লি.-এর কাছে থেকে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা যেসব বিল ক্রয় করেছে সেগুলোর স্বীকৃতির বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। পরিদর্শন দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিলগুলো ক্রয় করা হয়েছে।
অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণে জানা যায়, বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা গত ২০১২ সালের ২৮ মার্চ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত এএইচবি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং এজেড কটন ইয়ার্ন থেকে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকার বিল ক্রয় করা হয়েছে। এএইচবি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজকে সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্রিন প্রিন্টার্স মোট ২৩টি স্থানীয় ঋণপত্র (এলসি) প্রদান করে। আর এজেড কটন ইয়ার্নকে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার রফতানিকারক নকশী নিট কম্পোজিট ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ১২টি স্থানীয় এলসি প্রদান করা হয়েছে। অর্থাত্ এএইচবি টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের অ্যাপ্লিক্যান্ট গ্রিন প্রিন্টার্স এবং এজেড কটন ইয়ার্নের অ্যাপ্লিক্যান্ট নকশী নিট কম্পোজিট।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার মোট ৩৫টি লোকাল বিল ক্রয়ের সময় ওই প্রতিষ্ঠান দুটির কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদনের গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। এতে ওই শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ কনসালটেম্লট খন্দকার মাহমুদুল হাসান এবং ভিজিলেন্স ডিপার্টমেন্টের কেএম শফিকুল ইসলাম যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি ব্যতিরেকেই কারখানা পরিদর্শন করেন। অথচ ফ্যাক্টরি ভিজিট রিপোর্টে ফ্যাক্টরির অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। ফলে অস্তিত্বহীন দুটি কারখানার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিলগুলো ক্রয় করা হয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল। তাছাড়া বিলগুলোর স্বীকৃতির নিশ্চয়তা নিরূপণে গ্রিন প্রিন্টার্সের ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখা এবং নকশী নিট কম্পোজিটের ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা পরিদর্শনের আবশ্যকতা রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
একই পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ১১ জুন এবং ৩০ জুন বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখা জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইলের অনুকূলে দুটি এলটিআর সুবিধা দেয়। এক কোটি ৭৬ লাখ এবং দুই কোটি ৮৬ লাখ টাকার এলসি সমন্বয়ের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়। জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইলের দুটি এলটিআর মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা সত্ত্বেও সে ঋণ শ্রেণীকরণ করা হয়নি। উল্টো ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর এক লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯ মার্কিন ডলার মূল্যমানের দুটি এলসি স্থাপন করা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ দায় অসমন্বিত রেখে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আরও দায় সৃষ্টি করা বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন রীতিনীতির পরিপন্থী, যা অনভিপ্রেত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এ ধরনের দায় সৃষ্টি অর্থপাচারের সুযোগ সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিতকরণসহ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জিল্লুর রহমান আমার দেশ’কে বলেন, ব্যাংকিং কাজ করতে গেলে দু’-একটি ভুলভ্রান্তি হতে পারে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকে। সেখানে যেসব পর্যবেক্ষণ আসে তার আলোকে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে মাহমুদুল হাসানসহ যেসব কর্মকর্তা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম