তোতা মিয়ার নিয়তি

0
215
Print Friendly, PDF & Email

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: চোরের কোনো রিটায়ারমেন্ট নেই৭২ বছর বয়সের তোতা মিয়ার বিশ্রাম নেইএইবয়সে পুলিশের মার কিছুটা সহ্য হলেও ক্ষিপ্ত জনতার মার গায়ে একটুও সয় নাদমটা বেরিয়ে যেতে চায়একটা সময় আসে, যখন মনে হয়আর পারছি না খোদা, তাড়াতাড়ি আজরাইলকে পাঠাও
কিন্তু আজরাইলের তো নির্ধারিত কাজ রয়েছেসুতরাং, দেহের কোনো খোপের ভেতর আত্মাটা আটকে থাকে
তোতা মিয়া আকুল হয়ে বলে, যা না বাপ, যাযেদিক দিয়ে ইচ্ছে বেরিয়ে যাতাহলে বাঁচি
আত্মা তবু যায় না
বড়মানুষের স্ত্রীর মতো চোরের স্ত্রীর তো আলাদা কোনো স্ট্যাটাস নেইধর্মপ্রাণ মানুষের কন্যা হলেও চোরের স্ত্রী হওয়ার কারণে সবাই ভাবে, লাইলিনিশ্চয়ই একটা কিছু হাতিয়ে নিতে এসেছেউপেক্ষা ও ঘেন্নার এ জীবন তারওভালো লাগে নাসেও ভাবে, চোরের বউয়ের কি মরণ নেই? আজরাইল তাকে দেখে নাকেন?
তোতাকে ধরতে না পেরে একবার লাইলিকে গ্রেপ্তার করে, রিমান্ডে নেয়লাইলির তখন বয়স কমসেখানে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ছাড়া পেয়ে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেআজরাইল এখানেও তার সহায় হয়নি
পরোয়ানাকাঁধে নিয়ে তোতা সবার অলক্ষ্যে মধ্যরাতে বাড়ি ফেরেদরজায় টোকা দিয়েপাড়া জাগানোর সুযোগ না দিয়ে জানালাপথে ঘরে ঢোকেঘুমন্ত স্ত্রীর পাশেশুয়ে ফিসফিস করে বলে, লাইলি, আমি তোতাআমার জন্য তোমার এত কষ্ট
কষ্টযতই হোক, সে রাতের যে আবেগঘন মধুর মিলন, হানিমুনেও তো তা হয়নিস্ট্রোকেনিথর লাইলি স্মৃতিটা মনে করে, ভালো লাগে, কিন্তু শরীর এতটুকুও সাড়া দেয়না
তোতা কেবল পালিয়ে বেড়ানোর মানুষ নয়, এ সময়ও গোটা তিনেক অপারেশনকরে চার-পাঁচ মাস চলার মতো টাকা বানিয়ে নিলযদি কিছুদিন জেল খাটতেই হয়, লাইলিটার যেন অর্থকষ্ট না হয়, খাওয়াদাওয়ার যেন অভাব না পড়েলাইলিটারএখনো যে কাঁচা বয়সকষ্ট সইতে পারবে না
তোতা মনে করে বিয়ের রাতেরকথা, তার পরের দিনের কথাচোরের আবার হানিমুননারীসঙ্গ কাজের মানুষকেবেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে নাতোতা দ্বিতীয় দিন মধ্যরাতে নতুন স্ত্রীকেআধোঘুমে রেখে বলে, লাইলি, মাত্র দুরাতপরশু ফিরব
তোতার অপারেশন সফলবড় অপারেশনসঙ্গী ছিল মামাতো ভাই চুন্নুসাহস তার দুর্দান্তনিজেই বলে, মানুষের যত না ভূতের ভয়, চোরের ভয় তার চেয়ে অনেক বেশিঅবস্থাপন্নইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারের বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরিরেডিও, ঘড়ি, কিছুসোনাদানা, দামি কাপড়চোপড় ভালোই জড়ো করতে পেরেছেচুন্নু তার ভাগ নেয়নিবলেছে, ভাবিকে দিলাম
একসঙ্গে এত সম্পদ লাইলি কখনো পায়নি, পাওয়ারকথাও নয়হোক চুরির মাল, সবই তো সমর্পণ করেছে লাইলির হাতেএকটি পশমি চাদরগায়ে জড়িয়ে বলেছে, আপনি কিন্তু সাবধানে থাকবেননুরানি হুজুরের কাছথেকে একটা তাবিজ এনে দেব, যাতে ধরা না পড়েনবিয়ের সপ্তম দিন লাইলি বলল, দুটি প্রশ্নের জবাব দিনএটা কি ঠিক, গৃহস্থের যাতে ঘুম না ভাঙে, সে জন্যআপনারা মানে চোরেরা ঘরের চালে কবরের শুকনো মাটি ছড়িয়ে দেনআর চুরি করতেযাওয়ার সময় আপনারা সবাই শরীরে সরষের

 

শেয়ার করুন