২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: চোরের কোনো রিটায়ারমেন্ট নেই। ৭২ বছর বয়সের তোতা মিয়ার বিশ্রাম নেই। এইবয়সে পুলিশের মার কিছুটা সহ্য হলেও ক্ষিপ্ত জনতার মার গায়ে একটুও সয় না।দমটা বেরিয়ে যেতে চায়। একটা সময় আসে, যখন মনে হয়—আর পারছি না খোদা, তাড়াতাড়ি আজরাইলকে পাঠাও।
কিন্তু আজরাইলের তো নির্ধারিত কাজ রয়েছে। সুতরাং, দেহের কোনো খোপের ভেতর আত্মাটা আটকে থাকে।
তোতা মিয়া আকুল হয়ে বলে, যা না বাপ, যা। যেদিক দিয়ে ইচ্ছে বেরিয়ে যা। তাহলে বাঁচি।
আত্মা তবু যায় না।
বড়মানুষের স্ত্রীর মতো চোরের স্ত্রীর তো আলাদা কোনো স্ট্যাটাস নেই।ধর্মপ্রাণ মানুষের কন্যা হলেও চোরের স্ত্রী হওয়ার কারণে সবাই ভাবে, লাইলিনিশ্চয়ই একটা কিছু হাতিয়ে নিতে এসেছে। উপেক্ষা ও ঘেন্নার এ জীবন তারওভালো লাগে না। সেও ভাবে, চোরের বউয়ের কি মরণ নেই? আজরাইল তাকে দেখে নাকেন?
তোতাকে ধরতে না পেরে একবার লাইলিকে গ্রেপ্তার করে, রিমান্ডে নেয়।লাইলির তখন বয়স কম। সেখানে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।ছাড়া পেয়ে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আজরাইল এখানেও তার সহায় হয়নি।
পরোয়ানাকাঁধে নিয়ে তোতা সবার অলক্ষ্যে মধ্যরাতে বাড়ি ফেরে। দরজায় টোকা দিয়েপাড়া জাগানোর সুযোগ না দিয়ে জানালাপথে ঘরে ঢোকে। ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশেশুয়ে ফিসফিস করে বলে, লাইলি, আমি তোতা। আমার জন্য তোমার এত কষ্ট।
কষ্টযতই হোক, সে রাতের যে আবেগঘন মধুর মিলন, হানিমুনেও তো তা হয়নি। স্ট্রোকেনিথর লাইলি স্মৃতিটা মনে করে, ভালো লাগে, কিন্তু শরীর এতটুকুও সাড়া দেয়না।
তোতা কেবল পালিয়ে বেড়ানোর মানুষ নয়, এ সময়ও গোটা তিনেক অপারেশনকরে চার-পাঁচ মাস চলার মতো টাকা বানিয়ে নিল। যদি কিছুদিন জেল খাটতেই হয়, লাইলিটার যেন অর্থকষ্ট না হয়, খাওয়াদাওয়ার যেন অভাব না পড়ে। লাইলিটারএখনো যে কাঁচা বয়স। কষ্ট সইতে পারবে না।
তোতা মনে করে বিয়ের রাতেরকথা, তার পরের দিনের কথা। চোরের আবার হানিমুন। নারীসঙ্গ কাজের মানুষকেবেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না। তোতা দ্বিতীয় দিন মধ্যরাতে নতুন স্ত্রীকেআধোঘুমে রেখে বলে, লাইলি, মাত্র দুরাত। পরশু ফিরব।
তোতার অপারেশন সফল।বড় অপারেশন। সঙ্গী ছিল মামাতো ভাই চুন্নু। সাহস তার দুর্দান্ত। নিজেই বলে, মানুষের যত না ভূতের ভয়, চোরের ভয় তার চেয়ে অনেক বেশি। অবস্থাপন্নইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারের বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরি। রেডিও, ঘড়ি, কিছুসোনাদানা, দামি কাপড়চোপড় ভালোই জড়ো করতে পেরেছে। চুন্নু তার ভাগ নেয়নি।বলেছে, ভাবিকে দিলাম।
একসঙ্গে এত সম্পদ লাইলি কখনো পায়নি, পাওয়ারকথাও নয়। হোক চুরির মাল, সবই তো সমর্পণ করেছে লাইলির হাতে। একটি পশমি চাদরগায়ে জড়িয়ে বলেছে, আপনি কিন্তু সাবধানে থাকবেন। নুরানি হুজুরের কাছথেকে একটা তাবিজ এনে দেব, যাতে ধরা না পড়েন। বিয়ের সপ্তম দিন লাইলি বলল, দুটি প্রশ্নের জবাব দিন। এটা কি ঠিক, গৃহস্থের যাতে ঘুম না ভাঙে, সে জন্যআপনারা মানে চোরেরা ঘরের চালে কবরের শুকনো মাটি ছড়িয়ে দেন। আর চুরি করতেযাওয়ার সময় আপনারা সবাই শরীরে সরষের