শিক্ষা ডেস্ক:‘চতুর্থ সার্ক ইয়ুথ ক্যাম্প ২০১৩’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারতের তামিলনাড়ুতে।সার্কভুক্ত আটটি দেশের তরুণদের মহামিলনের আসর বসেছিল ১১ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি। গ্রুপ ওয়ার্ক, কান্ট্রি প্রেজেন্টেশন, ফিল্ড ভিজিট আর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা—ছিল এই পাঁচ দিনের অনুষঙ্গ। প্রথম দিন ছিল উদ্বোধন আর সার্কভুক্ত দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরিচিতি পর্ব। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাসহ সব সার্কভুক্ত দেশ থেকেই চার-পাঁচজন ডেলিগেট ছিলেন।ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি—১৭ জন ছিলেন। বাংলাদেশ থেকেই শুধু আমরা দুজন ছিলাম।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আমি, আর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ঢাকার এলএলবির শিক্ষার্থী রাহাতুল আশেকিন।
প্রতিবেশী দেশগুলোর তরুণদের কাছে আমরা বাংলাদেশের যুবসমাজের বর্তমান অবস্থা, তাঁদের সংগ্রাম ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেছি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের স্বপ্ন আর বাংলাদেশের যুবনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভুলে যাইনি বিদেশি বন্ধুদের কাছে বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বলতে। বলেছি, কীভাবে বাংলাদেশের তরুণেরা বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তরে লড়েছেন।
চতুর্থ সার্ক ইয়ুথ ক্যাম্পে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান ছিল যথেষ্ট ভালো। ক্যাম্পের শেষদিনে বন্ধুদের অনেককেই বলতে শুনেছি, ‘বাংলাদেশি গাইজ আর ভেরি স্মার্ট। দে প্রেজেন্টেড দেয়ার ইয়ুথ পলিসি স্মার্টলি।’ বিদেশি বন্ধুদের মুখে দেশের প্রশংসা শুনে মনটা ভরে গিয়েছিল। ক্যাম্পজুড়ে ছিল বন্ধুত্ব আর তারুণ্যের জয়গান। কেউ কারও ভাষা জানি না, সংস্কৃতি বুঝি না, অথচ বন্ধুত্বের বাঁধনে আবদ্ধ ছিলাম- সবাই এককাট্টা ছিলাম। আমরা সেখানে বাংলা গান গেয়েছি, শুনেছি মালে, জংখা, সিনহালা ভাষার গান। কখনো কখনো সবাই একসঙ্গে হাত ধরে উচ্চ স্বরে গেয়েছি ইংরেজিতে সাম্যের গান।
সার্ক ইয়ুথ ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাহাতুল জানান, ‘এটা স্বীকার করতেই হবে যে ভারতীয়রা অনেক অতিথিপরায়ণ ছিল। এ আয়োজন দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে।’
আমাদের এই পাঁচ দিন ভ্রমণের জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সার্কের পতাকাবাহী দুটি বাস দেওয়া হয়েছিল। আমরা ভারতের তামিলনাড়ু, চেন্নাই, পন্ডিচেরিসহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছি। আমরা বিখ্যাত মন্দিরগুলো, অরবিন্দ আশ্রম, মাতৃমন্দির আর মেডিটেশন সেন্টার দেখতে গিয়েছি। পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। আমরা তিনটি সমুদ্রসৈকতও দেখে এসেছি।আমরা ভারতের সুনামিদুর্গত এলাকাও পরিদর্শন করেছি। আর ১৫ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের জাতীয় পোশাক পরেছিলাম।অদ্ভুত এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন ছিলাম সবাই।
সার্ক ইয়ুথ ক্যাম্প শেষে যে যার দেশে ফিরে গেছি আমরা। কিন্তু যে সামাজিক সম্প্রীতি ও শুভবোধ আর বন্ধুপ্রতিম মনোভাব নিয়ে ফিরে গেলাম আমরা, তা আগামীর স্থিতিশীল ও উন্নত দক্ষিণ এশিয়া বিনির্মাণে পাথেয় হয়ে উঠবে। আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন পতাকা নিয়ে গেলেও, ফিরে এসেছি একটি পতাকা নিয়ে। আর সেটা হলো সার্কের সৌহার্দ্যের পতাকা।
২৪ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম