২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩. মেধাবৃত্তি নিয়ে বাণিজ্য
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড ছাড়া কোনো প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি ঘটতে পারে না। তবে এ শিক্ষা হতে হবে প্রকৃত শিক্ষা, যুগোপযোগী, বিজ্ঞানভিত্তিক। আর সব শিক্ষার মূলে থাকতে হবে সত্য, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা।তাহলেই কেবল সেই শিক্ষা আসবে নিজের কল্যাণে তথা জাতির কল্যাণে। দিন কয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে জেএসসি ২০১২-এর মেধাবৃত্তির ফলাফল। যা দেখে আমার মতো অনেকেই হয়তো বিস্মিত হয়েছেন কিংবা মন খারাপ করেছেন। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই।
আমার ছেলে পিএসসি ২০০৯-এর পরীক্ষায় ঢাকার কাফরুলের একটি নামকরা বিদ্যালয় থেকে মেধাবৃত্তি (ট্যালেন্টপুল) পেয়েছিল। যথারীতি সে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ২০১২-এর একজন পরীক্ষার্থী। তার ভাষ্যমতে, তার পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছে। পাস ফল ছিল জিপিএ-৫। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে এবার বৃত্তি পায়নি। তার সঙ্গের অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর একই দশা। মেধা মূল্যায়নের মানদণ্ড জানতে প্রথমে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু তাঁরা কিছুই বলতে পারলেন না। কোনো কোনো শিক্ষক বললেন, লটারি হয়েছে।নিরুপায় হয়ে যোগাযোগ করলাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার বৃত্তি শাখায়। জনৈক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন, ‘বিষয়টি গোপনীয়, আমি আপনাকে বলতে পারব না, আপনি বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
তাঁর পরামর্শমতো বোর্ডের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত)/সচিব মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পাইনি। গুঞ্জন শোনা গেল, এ বিষয়ে দেশব্যাপী কাজ করেছে বিরাট একটা সিন্ডিকেট (স্কুলের প্রাইভেট পড়ানো শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক), যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এ জন্যই কি তাহলে মেধা মূল্যায়নের মানদণ্ড গোপন রাখা হয়েছিল? হয়তো বা যেনতেন একটা মানদণ্ড রেখেছে, যা দিয়ে সাধারণ মানুষ কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারবে না। কারণ, পরীক্ষায় প্রাপ্ত বিষয়ভিত্তিক নম্বর তো আর প্রকাশিত হয় না, যা উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে তো মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার উৎসাহ হারাবে, দেশ মেধাশূন্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
দেশকে বাঁচাতে দেশের মেধার সঠিক মূল্যায়ন খুবই জরুরি।তাই এ প্রজন্মকে তথা দেশের শিক্ষাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা দরকার। যদি কোনো ভুল কিংবা দুর্নীতি হয়েই থাকে, তাহলে শিগগিরই তা শুধরে সঠিকভাবে (মেধানুসারে) পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে সংশোধিত মেধাবৃত্তির ফলাফল প্রকাশ করা যেতে পারে।
ডা. মো. আবুল বাতেন
ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, ঢাকা।
আমলাতন্ত্র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান হলেও বাংলাদেশ সরকার এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় করে থাকে। ২০০৪ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে।বর্তমান সরকারের মাননীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের আন্তরিকতায় এ প্রতিষ্ঠান আরও ভালোভাবে সুনাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বিষয়টি আজও সুরাহা হয়নি। ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নামে একটি আইন পাস করা হয়। ২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সম্মতি প্রদান করেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা আজও আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
জানা যায়, মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। কোনো আমলা বা আমলাতন্ত্রের কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেন কষ্ট করবেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি একটু সুদৃষ্টিতে দেখবেন—এই আমাদের প্রত্যাশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার।
যুদ্ধাপরাধী
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজ বাংলাদেশ এক নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটছে। বায়ান্ন, উনসত্তর আর একাত্তরের রক্তভেজা সংগ্রামের পথ পেরিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী ৩০ লাখ বীর শহীদ এবং অগণিত নির্যাতিতা নারীর আত্মত্যাগের ফলে পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এত বেশি নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসস্তূপ দেখতে হতো না, যদি তৎকালীন জামায়াত-শিবিরের দোসর রাজাকারেরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা না করত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিত এবং সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, লুটপাটের মতো ঘৃণ্য কাজ করত।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুখোশধারী রাজাকারেরা ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যায়। পরবর্তী সময়ে এসব যুদ্ধাপরাধী যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই তারা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিহিংসা থেকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যদি মুক্তিযুদ্ধের পরপরই এসব যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি রাজাকার দালালদের কঠোর শাস্তি দেওয়া যেত, তাহলে বর্তমানে তারা ধ্বংসাত্মকমূলক কার্যকলাপ চালানোর সাহস পেত না।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজ আবার সাধারণ মানুষের মধ্যে শুভ সংগ্রামী চেতনা জেগে উঠেছে।জামায়াত-শিবিরের দালালদের নির্মূল করার এটাই উপযুক্ত সময়। সব রাজাকারের বিচার অবশ্যই হতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকদের এখন একটাই চাওয়া—তা হলো, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক এবং তাদের সমূলে নির্মূল করতে হবে।
উজ্জ্বল দাস পোদ্দার
ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা
বইমেলায় নিমন্ত্রণ
বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। যদি কোনো দিন নেশার জগতে যেতে চাও, তাহলে বইয়ের নেশার যাও। বই এমন এক বন্ধু, যে কোনো দিন কখনো প্রতারণা করে না—বই সম্পর্কে এমন অনেক প্রবাদ চালু রয়েছে। আর বই কেনার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান হলো বইমেলা, যাকে বলা হয় প্রাণের মেলা। বছরজুড়ে আবার শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, প্রতিযোগিতার পুরস্কার, গুরুজনদের ও ছোটদের উপহার হিসেবে বই শ্রেষ্ঠ উপহার। উপহার হিসেবে বই পেয়ে খুশি হয় না, এমন মানুষ নেই।
গত কয়েক মাসে বা আগামী কয়েক মাসে যাঁরা দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা করেছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা ফেব্রুয়ারির এই অমর একুশে বইমেলায় এক দিনের জন্য হলেও আসুন। আমার বিশ্বাস, এখানে এলে আপনি যে নির্মল আনন্দ পাবেন, তা আর কোথাও পাবেন না। আর যদি সঙ্গে নিয়ে আসেন আপনার পরিবার, তাহলে সে আনন্দ ছুঁয়ে যাবে আকাশ। এই ফেব্রুয়ারির ২৮ দিনের এক দিন আপনার কাছের মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিন শ্রেষ্ঠ বন্ধুদের আত্মার আত্মীয়দের।
রফিক
রাজা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা