২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
ঝুঁকিপূর্ণ নতুন বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সাথে বাংলাদেশে সংস্থার অর্থপুষ্ট চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে কঠোরভাবে তদারকিও করবে প্রতিষ্ঠানটি। সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশিত এসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক কোনো বড় অবকাঠামো প্রকল্পে আর জড়াতে চাচ্ছে না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্পের তিক্ততার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছে এটাকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু অথবা অন্য কোনো বৃহৎ প্রকল্পে স্থানান্তরের জন্য বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের কাছে দেনদরবার করতে ওয়াশিংটন যাত্রার প্রাক্কালে এ খবর দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চালু প্রকল্পগুলো তদারকির জন্য ‘থ্রি এস’ প্রকল্প চালু করেছে। এতে প্রকল্প তদারকির জন্য বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, এ ব্যাপারে সরকারের যে ব্যবস্থা রয়েছে সেটিকে জোরদার করা এবং কোনো রাখঢাক ছাড়া স্বচ্ছভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান ৫০০ কোটি ডলারের প্রকল্পগুলোকে পর্যায়ক্রমে এর আওতায় আনা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর থেকে সর্বাধিক রেয়াতি বা কম সুদ ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ঋণের জোগান দিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের বেশির ভাগের সাথে বিশ্বব্যাংকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক ছিল। রেয়াতি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা এর সাথে সমন্বয় রেখে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কারণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রায় সব দেশ ও সংস্থা থেকে রেয়াতি ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের মতামত বা সঙ্কেত সিদ্ধান্তকারী বিষয় হিসেবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বব্যাংকের সাথে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণদান নিয়ে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে এবং অনাকাক্সিত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে তাতে বিশ্বব্যাংকের বিদায় নেয়া প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বাংলাদেশে ব্যাংকের অফিস বন্ধ করে দেয়ার বিষয় বিবেচনা করেছিলেন। বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের চরম পদক্ষেপ নেয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা সংস্থাটি গ্রহণ না করলেও তাদের ঋণ কর্মসূচিতে সৃষ্ট তিক্ততার নেতিবাচক প্রভাব রয়ে গেছে। বড় কোনো অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ সহায়তা না দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টিতে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, সরকারের চেয়ে দেশ অনেক বড়। সরকার আসবে, সরকার যাবে। কিন্তু দেশ টিকে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করার কারণ নেই। আবার বিশ্বব্যাংকের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা বা তিক্ততাকে উসকে দিয়ে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের চেয়ে এখন সরকারের দলীয় স্বার্থ যেভাবে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটি দেশের জন্য ক্ষতিকর। দেশের স্বার্থে এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাংকের সাথে তিক্ত সম্পর্কের অবসান হওয়া প্রয়োজন। সংস্থাটি যাতে বাংলাদেশে রেয়াতি উন্নয়ন সহায়তা দানের কার্যক্রম সঙ্কুচিত বা গুটিয়ে না নেয়, তার জন্য পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। তা না হলে জনগণের কাঠগড়ায় বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে। কিছু নীতিনির্ধারকের হঠকারিতার জন্য জাতীয় স্বার্থের বিপর্যয়কে কোনোভাবেই মেনে নেবে না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।