কর্মশালার মাধ্যমে সৃজনশীলতার চর্চা ও সেই অনুশীলনের ফলাফল হিসেবেশিল্পকর্মের প্রদর্শনী বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের চারুশিল্পের একটি বিশিষ্টলক্ষণে পরিণত হয়েছে। ঢাকার উত্তরায় স্থিত গ্যালারি কায়া আয়োজিত প্যাশনঅ্যান্ড ইম্প্রেশন নামের গ্রাফিক প্রিন্ট ওয়ার্কশপ যার একটি। ১ থেকে ৬ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ছয়জন ও ভারতের তিনজন ছাপচিত্রীরঅংশগ্রহণের কারণে এটি দুই দেশের এক যৌথ কর্মশালার অর্থ খুঁজে পেয়েছে।আনিসুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, নগরবাসী বর্মণ, রফি হক, শেখ মোহাম্মদরোকনুজ্জামান ও সুজিত সরকারের সঙ্গে ছিলেন অতীন বসাক, জয়ন্ত নাসকার ওরমেন্দ্র নাথ কাষ্ঠ।
কর্মশালা ধারণাটির মধ্যেই যূথবদ্ধ হয়ে সৃজনশীলতারবিভিন্ন ভঙ্গি ও ভাষা আবিষ্কারের উদ্দেশ্যটি জারি আছে। গ্যালারি পরিচালকগৌতম চক্রবর্তী তাই-ই বললেন। ভাবনা বিনিময়ের জন্য কর্মশালাকে তিনি যৌথপাটাতন আখ্যা দেন। ছাপচিত্রের এচিং মাধ্যমকেন্দ্রিক কেন এই কর্মশালা? উত্তরে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে যেহেতু একটি মৌলিক কাজের অনেকগুলো ছাপ নেওয়াযায়, তাই ড্রয়িং বা পেইন্টিং থেকে তুলনামূলক কম দামে একেকটি শিল্পকর্মসংগ্রহের সুযোগ ঘটে। অর্থাৎ চারুশিল্পের মাধ্যমগত আভিজাত্যকে ছাপচিত্রচ্যালেঞ্জ করে। এর ফলে শিল্পসংগ্রহের অর্থনৈতিক সূচকের স্থানান্তর হয়।বিত্তশালী কলারসিকের সংগ্রহাগার থেকে মধ্যবিত্তের বসার ঘরেও শিল্পের শোভাদেখার সম্ভাবনা জাগে।
এই ছাপচিত্র কর্মশালার আর্থসামাজিক তাৎপর্যতালাশের ভাবনাগুলো একপাশে রেখে, আমরা বিশেষভাবে তর্ক হাজির করতে পারি, শিল্পচর্চা ও এর ফলাফল চাক্ষুষের প্রক্রিয়ার সঙ্গে, কর্মশালার উদ্যোগ আদতেকি কার্যকর ভূমিকা রাখে? গ্যালারি কায়ার ঘাসবহুল উঠানে যখন শিল্পীআনিসুজ্জামান, আশরাফুল ও রোকনুজ্জামান শীতবিকেলের নিরুত্তাপ রোদে বসে কাজকরছিলেন, তখন তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে খুচরো আলাপেও মেতেছিলেন। কাজের অবকাশে না, কাজের ভেতরে শিল্পীদের এই আলাপচারিতা শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেইনব্যমাত্রা দেয়। সৃজনপ্রক্রিয়ার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী স্বার্থপরভাবধারার বিপরীতে পরার্থপর চিন্তাধারা এতে সম্মুখে চলে আসে। এ প্রসঙ্গেলালনের ভাষ্য স্মরণীয়, কেননা সৃষ্টি করলে শরিক আছে।
২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩.