কৃষি ডেস্ক: মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ ও রসুন অন্যতম। কৃষক পেঁয়াজ ও রসুন উত্পাদন করতে গিয়ে বিশাল অংশ নষ্ট হয় রোগ ও পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে। পার্পল ব্লচ ও ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শতকরা ৮০-৯০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়। তাই নিচে রোগ দুটির কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো :
পার্পল ব্লচ (Purple blotch/ Blight) : এ রোগে আক্রান্ত পেঁয়াজ ও রসুনের পাতা বলের মতো স্পট পড়ে পার্পল বা লালচে বর্ণ ধারণ করে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।তাই এ রোগের নাম পার্পল ব্লচ বা ব্লাইট হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ রোগ Alternaria porri I Stemphylium নামক ছত্রাক থেকে হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত ফসলের অবশিষ্টাংশে ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এক ফসল থেকে পরের বছরের ফসল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই রোগের জীবাণু সাধারণত (ক) স্পোর যুক্ত মাটি, (খ) ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, (গ) আক্রান্ত বীজ প্রভৃতির মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে।
যখন রোগ ছড়ায় : শীত চলে যাওয়ার পর এ রোগ দেখা যায় : (ক) আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮৫-৯০ শতাংশ, (খ) তাপমাত্রা ২২-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, (গ) দুই-তিন দিন মেঘলা আকাশ বা বৃষ্টি হয়ে থাকলে এই রোগ হয়ে থাকে। সাধারণত শীতের শেষে বা শীত চলে গেলে এ রোগ দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ : (ক) প্রাথমিক অবস্থায় রসালো দাগ দেখা যায় এবং পুষ্পগুচ্ছদণ্ডে ছোট ছোট সোনালি পানিভেজা ও সাদাটে দাগ দেখা যায়; (খ) দাগগুলোর রং শিগগিরই বাদামি হয়ে যায়; (গ) দাগগুলো আকারে বড় হয়ে জোন বা বড় এলাকা তৈরি করে; (ঘ) দাগের কিনারা পার্পল বা লাল বর্ণ ধারণ করে এবং চারদিকে হলুদ রঙে ঘেরা থাকে; (ঙ) আক্রান্ত পাতা কুঁচকে যায়, হলুদ বর্ণ ধারণ করে, শুকিয়ে যায় এবং সংক্রমণ স্থান ভেঙে যায়; (চ) রোগ মারাত্মক হলে বাল্বও পচে যেতে পারে।
দমন ব্যবস্থা : (ক) ফসল ওঠানোর পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে; (খ) শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে পারলে এ রোগ দমন খুবই কার্যকর; (গ) মাঠ সুনিষ্কাশিত রাখতে হবে; (ঘ) যে কোনো বীজশোধক কেমিক্যাল দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে; যেমন— ১. ভিটাভেকস্-২০০ প্রতি ১ কেজিতে ২ গ্রাম হারে মেশাতে হবে অথবা ২. থিরাম প্রতি ১ কেজিতে ২.৫০ গ্রাম হারে মেশাতে হবে; (ঙ) প্রথম রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর থেকেই (রোগ দেখার আগেও করা যেতে পারে) ফানজিসাইড স্প্রে করতে হবে; যেমন— ১. রুভরাল ০.৩ শতাংশ হারে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে; ২. ডাইথেন-এম-৪৫ ও এন্ডোফাইল-এম-৪৫ পানিতে ০.৩ শতাংশ হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে; ৩. কপার ফানজিসাইড ০.৩ শতাংশ হারে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ইত্যাদি।
ব্লাস্ট (Blast)
এই রোগটি বোট্রিটিস (Botrytis sp) নামক ছত্রাকের চারটি প্রজাতির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এ রোগের জীবাণু পেঁয়াজ ও রসুন গাছে প্রবেশ করে কয়েকদিনের মধেই দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ফসল নষ্ট করে ফেলে। তাই এ রোগের নাম ব্লাস্ট হয়েছে। এ রোগ সরাসরি সুস্থ গাছ আক্রমণ করতে পারে না, ভেজা পাতার ওপর ছত্রাকের স্পোর পড়লে তা অঙ্কুরিত হয় এবং বিষাক্ত দ্রব্য ক্ষরণ করে থাকে। এই বিষাক্ত দ্রব্য বিস্তার হয়ে দেহকোষ নষ্ট করে ফেলে এবং পাতা সাদা হয়ে মরে যায়।
রোগের অনুকূল অবস্থা : (ক) মেঘলা আকাশ ও ঘন কুয়াশা হলে; (খ) গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে; (গ) বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হলে; (ঘ) তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রির কাছাকাছি হলে।
রোগের লক্ষণ : ১. প্রাথমিক অবস্থায় পাতায় ছোট ছোট সাদা দাগ পড়ে; ২. পরে স্পোর উত্পাদন হয়ে সাদা অংশ বড় হতে থাকে ও মরে যায়; ৩. সাদা অংশের পরিমাণ পুরো পাতায় বৃদ্ধি পেতে থাকে; ৪. আক্রান্ত পাতা কুঁচকে মরে ঝুলে পড়ে; ৫. রোগের আক্রমণ দ্রুত পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে, তাই একে ব্লাস্ট বলা হয়; ৬. অপ্রাপ্ত বয়সে গাছের পাতা মরে যায়, তাই বাল্ব (পেঁয়াজ) ছোট হয়ে যায়।
দমন ব্যবস্থা : (ক) শস্য পর্যায় অবলম্বন করলে এ রোগ দমন করা খুবই কার্যকর হয়; (খ) পেঁয়াজ-রসুন ওঠানোর পর অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে; (গ) বীজ শোধন করতে হবে, ভিটাভেকস-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম মিশিয়ে বীজ লাগাতে হবে; (ঘ) জমিতে রোগ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে; যেমন— ১. বাভিসটিন ৫০ ডব্লিউপি ১৫ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করা যায়। এভাবে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে; ২. ডাইথেন-এম-৪৫ ও এন্ডোফাইল-এম-৪৫, ০.৩ শতাংশ হারে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে; ৩. রুবরাল-৫০ ডব্লিউপি ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। এভাবে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২৩ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম