আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে

0
510
Print Friendly, PDF & Email

ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক: চলতি মৌসুমে দেশে আলুর ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছেআর এ আলু যেন সারা বছর মানুষের চাহিদা মেটায়, সে কাজটি করে যাচ্ছে দেশের ৪০০ হিমাগার
তবে এ বছর সংরক্ষণের জন্য কৃষকেরা হিমাগারে কী পরিমাণ আলু রাখবেন, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হয়েছেকারণ, হিমাগার মালিকদের সমিতি বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এ মাসের শুরুতে হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া বাড়িয়েছেপ্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে এ বছর কৃষকদের আগের চেয়ে ৫০ পয়সা বেশি ভাড়া দিতে হবে
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতটি দেশে অল্প সময়ের মধ্যেই বিকশিত হয়েছেকিন্তু দফায় দফায় বিদ্যু ডিজেলের মূল্য বাড়ানোয় তাঁদেরও আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়াতে হচ্ছেএতে কৃষকেরা হিমাগারে আলু রাখতে তেমন আগ্রহী হবেন নাতাই দেখা দিতে পারে আলুসংকটআবার হিমাগার চালু রাখতে গিয়ে ঠিকই চড়া দামে বিদ্যু বিল ও ডিজেলের ব্যয় বহন করতে হবে মালিকদেরএতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উভয় পক্ষই
১০ বছরে হিমাগার দেড় গুণ: বছর দশেক আগেও দেশে হিমাগারের সংখ্যা ছিল আড়াই শআলুর ভালো ফলন ও আলু প্রক্রিয়াজাত করে নানা খাদ্য তৈরির কারণে বছরব্যাপী আলু সংরক্ষণের চাহিদা বাড়েআর তাই চাহিদা বাড়ে হিমাগারেরওসে কারণেই মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে হিমাগারের সংখ্যা দেড় গুণ বেড়ে এখন ৪০০টিতে দাঁড়িয়েছে
এক বছরে দেশে ১০টির মতো হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছেএর বেশির ভাগই হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে পাঁচটির মতো হিমাগার, যাদের সংরক্ষণ সক্ষমতা অনেক বেশিক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান
তবে এসব হিসাব দেখিয়ে হিমাগার মালিকদের সমিতি বলছে, চাহিদা অনুযায়ী দেশে এখন পর্যাপ্ত হিমাগার রয়েছেনতুন করে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এ খাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে বিদ্যমান হিমাগারগুলোর পাশপাশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেনএ বিষয়ে গত বছর বাজেট ঘোষণার আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) একটি চিঠিও দেওয়া হয়
সমিতির হিসাবে, প্রতিটি হিমাগারে গড়ে কাজ করেন ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিকতবে আলুর মৌসুমের হিমাগারে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চার লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করেছেন কৃষকেরাগত মৌসুমে এর চেয়ে ৩০ হাজার হেক্টর কম জমিতে চাষ করে দেশে ৮২ লাখ টনের বেশি আলু উপাদিত হয়েছিলএবার উপাদন আগের চেয়ে বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা
বছরের মাত্র তিন মাস আলু উপাদিত হয়বাকি সময় যে মানুষ আলু কিনতে পারে, সেটা মূলত হিমাগারের কল্যাণেচলতি মৌসুমে দেশের হিমাগারগুলোতে ৪১ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে হিমাগার মালিক সমিতিসংগঠনটি বলছে, নতুন হিমাগারগুলো এ বছরই চালু হলে ৪৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভবএর মধ্যে ৮ থেকে ১০ লাখ টন বীজ-আলুগত বছর হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত হয়েছিল ৪০ লাখ টন আলু
কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিমাগারে যদি আলু সংরক্ষণ করা না হতো, তাহলে আলু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতোমানুষকে তখন অনেক বেশি টাকা দিয়ে আলু কিনতে হতো
সংরক্ষিত হচ্ছে সবজিও: দেশের হিমাগারগুলো এখন আর শুধু আলুর ওপর নির্ভরশীল নয়আলুর পাশাপাশি অনেক সবজি এবং ফলও এখন নিয়মিত হিমাগারে সংরক্ষণ করা হচ্ছেআর এ কাজের মাধ্যমে মৌসুমের বাইরেও বিভিন্ন সবজি ও ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে
হিমাগার মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের হিমাগারগুলোতে যত সবজি ও ফল সংরক্ষণ করা হয়, তার ৯০ থেকে ৯২ শতাংশই হচ্ছে আলুআর বাকি ৮ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে সবজি ও ফলএর মধ্যে রয়েছে আপেল, মালটা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিজ, তরমুজমূলত শহরকেন্দ্রিক কিছু হিমাগারেই সবজি ও ফল এবং নাটোর ও রাজশাহীর কিছু হিমাগারে আম, আমের জুস ও লিচুর জুস সংরক্ষণ করা হচ্ছে
বাড়ানো হয়েছে ভাড়া: সারা দেশের হিমাগার মালিকদের নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসে চলতি মৌসুমে আলুর সংরক্ষণ ভাড়া নির্ধারণ করে মালিকদের সমিতিআগে ৮০ কেজি আলুর বস্তা হিমাগারে সংরক্ষণ করতে কৃষকের ৩২০ টাকা দিতে হতোএ বছর দিতে হবে ৩৬০ টাকাভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ
হিমাগার মালিকেরা বলছেন, দফায় দফায় বিদ্যু ও ডিজেলের দাম বাড়ানো, চাহিদামতো বিদ্যু না পাওয়া, ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধির কারণেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছেএ কারণে বর্তমানে ৮০ শতাংশ হিমাগার এখন ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেএভাবে চলতে থাকলে হিমাগারশিল্প আরও রুগ্ণ হয়ে যাবেতাঁরা বলছেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প হওয়ার পরও এর কোনো সুবিধাই হিমাগার খাতে দেওয়া হচ্ছে না
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার কোল্ড স্টোরেজে আগে যেখানে বিদ্যু বিল ও ডিজেল খরচ বাবদ প্রতি মাসে চার থেকে আট লাখ টাকা ব্যয় হতো, এখন ব্যয় হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকাতিনি বলেন, হিমাগার চলে বছরের সাত-আট মাসকিন্তু বিদ্যুতের বিল, শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় সারা বছরএ অবস্থায় সরকারের যথাযথ নীতি-সহায়তা না পেলে হিমাগার চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে
হিমাগার সমিতির সভাপতির অভিযোগ, ‘মোট বীজের চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বিদ্যু বিলে ২০ শতাংশ রেয়াত পাচ্ছেঅথচ বেশির ভাগ বীজ-আলু সংরক্ষণের পরও আমরা তা পাচ্ছি না

 

২৩ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন