কৃষি ডেস্ক: পরপর তিন বছর আলুচাষ করে উত্তরের কৃষকের লোকসান হয়েছিল। তবে এ বছর তারা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন। রাজশাহী-রংপুর বিভাগের আট লাখ আলুচাষির মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতি বিঘায় ১২০ মণের বেশি আলু উৎপাদন হচ্ছে এবং বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘা আলু বিক্রি করে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিট মুনাফা আসছে।
বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, রাজশাহী, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের আলুচাষি ও মাঠপর্যায়ের আলু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে এক সপ্তাহ ধরে লাল দেশী আলু প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সাদা ও সোনালি (গ্যানুলা) ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা ও কার্ডিনাল (হল্যান্ড) জাতের আলু ৪৩০ থেকে ৪৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আরো ২০ দিন পর আলু ব্যবসায়ীরা মজুদের জন্য আলু কেনা শুরু করবেন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া, রংপুর ও জয়পুরহাট জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক সম্প্রদায় ও জেলা কৃষি অফিস। সেখানে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৮০ মণ থেকে ১২৫ মণ পর্যন্ত।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় প্রায় তিন লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন হবে ৬০ লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি। কৃষকেরা জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে আলু চাষ করে ক্রমাগত লোকসান দেয়ার পর এবার তারা আলুর আবাদ কমিয়ে সরিষাচাষে মনোযোগী হয়েছিলেন। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, সরিষাচাষের আওতা বাড়লেও এ বছর আলুর আবাদ কমেনি।
কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, তিন লাখ ১৭ হেক্টর ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করে বিঘাপ্রতি কমপে ২০ হাজার টাকা নিট মুনাফা ধরে মোট ৪৭৫৫ হাজার কোটি টাকা লাভ হবে। আর এক মাসের মধ্যে সব আলু কৃষকের ঘরে উঠে আসবে।
কৃষি বিভাগ এ বছর সারা দেশে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার টন আলুচাষের ল্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং বেশি রোগবালাই না থাকায় ল্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত অর্থাৎ বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।
শিবগঞ্জের সাদুরিয়ার আজাহার এবার ৭৫ বিঘা আলুচাষ করেছেন। কিচকের ইছব শাহ ৩০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। তারা আশা করছেন এ বছর ভালো ফলন ও ভালো বাজার দর পাবেন। বিঘাপ্রতি তারা ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন।
উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা জানিয়েছেন, আলুচাষে বিঘাপ্রতি তাদের খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তাতে কৃষকের নিট লাভ হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ২৩ লাখ ৭৭ হাজার বিঘা জমির আলু তুলতে প্রায় এক মাস ধরে ২০ লাখ নারীশ্রমিক কাজ পাবেন। তাদের দৈনিক ২০ কেজি করে, এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মজুরি দেয়া হচ্ছে। এতে একজন নারীশ্রমিক দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারছেন। এই এক মাস ধরে তারা আলু তোলার মতো বাড়তি কাজ করে নিজে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতা মুনছুর রহমান জানিয়েছেন, কালাই উপজেলায় এখন জমি থেকে আগাম আলু তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। ভালো দাম পাওয়ায় তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঢেউ খেলছে।
জানা গেছে, আলু চাষাবাদের জন্য জয়পুরহাট জেলা সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এবার এলাকার চাষিরা উচ্চ ফলনশীল জাতের গ্যানুলা, কার্টিনাল, অ্যাস্টরিকসহ নানা জাতের আলুচাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছেন।
উপজেলার কীটনাশক ব্যবসায়ী ঝামুটপুরের আফিফা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবদুল আলিম আকন্দ জানান, ‘এবার আবহাওয়া আলুচাষের অনুকূলে থাকায় ব্যাপকহারে রোগবালাই হয়নি’। ঝামুটপুর গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম জানান, এবার এক একর জমিতে উন্নতজাতের আগাম আলুচাষ করে তিনি ১৩০ মণ আলু পেয়েছেন। আলু বিক্রি করে যাবতীয় খরচ বাদে তার প্রায় ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
২২ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম