জাইকার সাথে ঋণচুক্তি স্বার পদ্মার পরিণতি যেন না হয় মেট্রোরেলের

0
216
Print Friendly, PDF & Email

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।

গত বুধবার চারটি প্রকল্পে ছয় হাজার ৩১১ কোটি টাকা (৭৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার) অর্থায়নের জন্য তিনটি ঋণচুক্তি ও একটি অনুদানচুক্তি স্বাক্ষর হয় জাইকার সাথে। এর মধ্যে মেট্রোরেলে পরামর্শক নিয়োগে অর্থায়নও রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি) বা মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ৯২৪ কোটি টাকা (১১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার) ঋণ দেবে জাইকা। জাপানের তিনটি ঋণচুক্তি ১০ বছরের রেয়াতি সময়সহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এই ঋণে বছরপ্রতি সুদের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ২২ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে, যার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকাই দেবে জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগাবে সরকার। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। মেট্রোরেল চালু নিয়ে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সমীা শুরু হয় এবং বর্তমান সরকারের আমলে তা এগিয়ে চলে। তবে প্রথম নকশায় বিজয় সরণি রুট নিয়ে বিমান বাহিনীর আপত্তির কারণে ঝুলে যায় এ প্রকল্পটি। সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে এই প্রকল্প অনুমোদন হয়। তিন পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০২২ সালের মধ্যে। এই মেট্রোরেল চালু হলে এ রুট ব্যবহার করে ঘণ্টায় ৬০ হাজার মানুষ চলাচল করতে পারবে। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এই রেলপথ উত্তরা তৃতীয় পর্যায় থেকে শুরু হয়ে পল্লবী হয়ে সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট দিয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলবে তিন ধাপে। প্রথমে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ২০১৯ সালের মধ্যে, দ্বিতীয় পর্যায় সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ২০২০ সালের মধ্যে এবং তৃতীয় পর্যায় পল্লবী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।

ঢাকার ক্রমবর্ধমান যানজটে দিশেহারা মানুষের জন্য মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি স্বপ্নের মতো। প্রতিদিন যানজট রাজধানীর লাখ লাখ মানুষের কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট করে। আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতে লেগে যায় ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির বিষয়টি বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থার অবসান ঘটানো মোটেই কঠিন ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ উদ্যোগের কথা রাষ্ট্রের কর্তারা যতটা বলেছেন ততটা বাস্তবে রূপ পায়নি। ঢাকার মতো জনবহুল মহানগরী রয়েছে পৃথিবীতে আরো অনেক। কিন্তু এসব শহরে যোগাযোগের রয়েছে বহুমুখী ব্যবস্থা। বিশ্বের প্রতিটি বড় শহরে মেট্রো বা মনোরেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে। পৃথিবীর রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউ ইয়র্কের পাতালরেলে শত কিলোমিটার দূরের গন্তব্যেও ১ ঘণ্টার কম সময়ে পৌঁছা যায়। এ ধরনের পাতালরেল চালুতে বিনিয়োগ করতে হয় কিছুটা বেশি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হয় না।

আমরা মনে করি, রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাতায়াত সুবিধা বাড়াতে পাতালরেলের বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি ঢাকার চার পাশে নৌরুট চালুর বিষয়টিও নতুন করে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তবে এসব উদ্যোগ যাতে পদ্মা সেতুর মতো টানাপড়েনে না পড়ে, সে জন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। একই সাথে অকারণে বিলম্ব ও দুর্নীতির অক্টোপাস যেন প্রকল্প বাস্তবায়নকে আচ্ছন্ন না করে, সে দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।

শেয়ার করুন