আম চাষীদের করনীয়

0
214
Print Friendly, PDF & Email

কৃষি ডেস্ক: আমকে ফলের রাজা বলা হয়বাংলাদেশে আমই হচ্ছে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফলআমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণকাঙ্খিত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্যআম চাষ করতে গিয়ে আমচাষিরা যেসব সমস্যায় পড়েন তার মধ্যে আমের গুটি ঝরা অন্যতমগুটি আসার পর নানা কারণে গুটি ঝরে যায়এসবের কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো :

 

প্রাকৃতিক কারণ : সাধারণত আমগাছে প্রতি মুকুলে এক হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকেতার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র এক থেকে দুটি গুটি থাকেবাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে যায়তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচি চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়এ েেত্র আমের আকার ছোট হয়

 

করণীয় : অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড ¯েপ্র করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়আবার ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে ¯েপ্র করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়

 

মাটিতে রসের অভাব হলে : মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থা মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত হয়ফলে আমের গুটি ঝরে যায়

 

 

 

করণীয় : মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবেআমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবেপ্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবেসেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে ¯েপ্র করলে গুটি ঝরা কমে যায়

 

পোকার আক্রমণ হলে : গুটি আসার পর প্রাথমিক পর্যায়ে আমের গুটিতে হপার পোকার আক্রমণ হতে পারে পোকার আক্রমণে ২০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত আমের উপাদন কমে যেতে পারেমুকুল আসার সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যেতে পারেএ পোকার পূর্ণবয়স্ক মথ ও কিড়া গুটির রস শোষণ করে খায়, ফলে আমের গুটি শুকিয়ে ঝরে যায়মুকুল আসার পরপরই হপার পোকার আক্রমণ হতে পারেসে েেত্র মুকুলের ফুল শুকিয়ে যায় এবং কোনো ফল ধরে নাএ পোকা যখন মুকুলের রস চুষতে থাকে তখন এদের মলদ্বার দিয়ে প্রচুর আঠালো রস নিঃসরণ হয়এ রস মুকুলের ফুল ও পাতায় আটকে যায়এতে শুটি মোল্ড নামে  এক প্রকার ছত্রাক জন্মে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে পাতার উপরিভাগ ছেয়ে ফেলেফলে পাতা কালো দেখায়সবুজ পাতা কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উপাদন ব্যাহত হয়ফলে গাছ দুর্বল হয় এবং ফলন কমে যায়

 

এ ছাড়াও আমের গুটি মার্বেল আকৃতির হলে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পারেএ েেত্র পূর্ণবয়স্ক পোকা আমের নিচের অংশে খোসার ওপরে ডিম পাড়েকয়েক দিনের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং লার্ভা খুব ছোট বিন্দুর মতো ছিদ্র করে আমের ভেতর ঢুকে পড়েপ্রথমে শাঁস ও পরে আঁটি খাওয়া শুরু করেপরে আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায় এবং কোনো কোনো সময় আম ঝরে পড়ে

 

করণীয় : আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবেহপার পোকা থেকে আমের গুটি রার জন্য দুইবার কীটনাশক ¯েপ্র করতে হবেপ্রথমবার আমের মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বে এবং দ্বিতীয়বার আমের গুটি মটরদানার মতো হলেকীটনাশক পানিতে মিশিয়ে গুটিতে ¯েপ্র করতে হবেকীটনাশকের মধ্যে সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি (রিপকর্ড, ফেনম, বাসাড্রিন) বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে ¯েপ্র করতে হবে  ডেল্টামেথ্রিন (ডেসিস) বা একতার ¯েপ্র করেও হপার থেকে আমের মুকুলকে রা করা যায়

 

রোগের আক্রমণ হলে : সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আমগাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসেআমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত নানা রোগের আক্রমণে উপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারেএসব ছত্রাকজনিত রোগের পাউডারি মিলডিউ অন্যতমআক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো একপ্রকার জিনিস দেখা যায়রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়েএ ছাড়াও অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণেও আমের গুটি ঝরে যেতে পারেমুকুল বা ফুল এ রোগে আক্রান্ত হলে তা কালো হয়ে ঝরে পড়েগুটি বা ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে ধূসর বাদামি বা কালো দাগ পড়েবেশি আক্রান্ত হলে এগুলোও ঝরে পড়েআমের মুকুলে এ রোগের আক্রমণ হলে গাছের সব মুকুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে

 

করণীয় : পাওডারি মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করতে হয়অ্যানথ্রাকনোজ রোগের েেত্র প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি প্রোপিকনাজল (টিল্ট) বা এক গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (ব্যাভিস্টিন) বা দুই গ্রাম ডাইথেন এম৪৫ মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে ¯েপ্র করতে হবে

 

আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করেপ্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়প্রতিটি পর্যায়েই আমগাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজনতবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজনকেননা, মকুল ঝরে পড়েই আমের উপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়

 

লণীয় বিষয় : কৃষকদের মনে রাখতে হবে যে, গাছে মুকুল আসার আগে যেমন ¯েপ্র করার প্রয়োজন নেই তেমনি মকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই ¯েপ্র করা ঠিক নয়এ সময় প্রচুরসংখ্যক উপকারী পোকা আমবাগানে আসে এবং পরাগায়ণে সহযোগিতা করেমনে রাখতে হবেÑ গাছে মুকুল আসার পর সঠিকভাবে দুইবার ¯েপ্র করতে পারলে গাছে প্রচুর আম থাকবে। ।

 

২২ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম

 

শেয়ার করুন