কৃষি ডেস্ক: নীলফামারীতে এ বছর ব্যাপক হারে চাষ হয়েছে বাউকুল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। ইতোমধ্যে নীলফামারীর ১৫-২০টি আড়তে জমে উঠেছে কুল কেনাবেচা। এখানকার উৎপাদিত কুল আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর নীলফামারীতে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি কুল কেনাবেচার সম্ভাবনা রয়েছে ।
বছর তিনেক আগেও বাউকুলের চাষ নিয়ে নীলফামারীর চাষিদের মধ্যে তেমন একটা আগ্রহ না থাকলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে বাউকুল। নেহাতই শখের বশে যারা দু-এক টুকরা পতিত জমিতে বাউকুলের চারা রোপণ করেছিলেন তারা আজ সবাই বাণিজ্যের পথে পা বাড়িয়েছেন। প্রথম বছর খুব একটা লাভ না হলেও পরের বছর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।
নীলফামারী শহরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেওয়ান কামাল আহমেদ বছর তিনেক আগে অনেকটা শখের বশেই শহরের হাড়োয়া এলাকায় প্রায় ৩ একর জমির ওপর বাউকুলের চাষাবাদ শুরু করেন।প্রথম বছর তেমন একটা লাভের মুখ না দেখলেও এ বছর তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বাউকুল বিক্রি করছেন বাগান থেকে। তিনি বলেন পাঁচ বছরে এক একর বাউকুল েেত খরচ হয় দুই লাখ টাকা। আর বাউকুল বিক্রি করে পাওয়া যায় প্রায় আট লাখ টাকা। সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাগান মালিক আবু সাঈদ জানান, তিনি তার ৪ বিঘা জমিতে আপেলকুল ও বাউকুলের চাষ করেন প্রায় দুই বছর আগে। ওই জমিতে এবারের কুল উৎপাদন করে এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন এবং গাছে আরো প্রায় তিন লাখ টাকা মূল্যের কুল রয়েছে বলে জানান তিনি।
কুল আড়তদার ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, বর্তমান মওসুমে এ অঞ্চলের কৃষকেরা প্রতিযোগিতামূলক কুল আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। এ যাবৎ আড়াই কোটিরও বেশি টাকার কুল কেনাবেচা করেছেন। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত আরো প্রায় আড়াই কোটি টাকা কুল কেনাবেচা হতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সৈয়দপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১ নম্বর রেল ঘুমটিসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি কুলের আড়ত। এসব আড়তে সিদ্দিক নামের এক ফল ব্যবসায়ী জানান, নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেই বাগান মালিকেরা আপেলকুল, বাউকুল, থাইকুল নিয়ে আসছেন সৈয়দপুরে। তিনি জানান, এখানকার উৎপাদিত কুল আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
ফারুক ও বাদশা নামের আড়তদার জানান, মান অনুসারে এক মণ কুল কেনাবেচা হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা মণ্ডল জানান, দীর্ঘদিন থেকে এ অঞ্চলের কৃষকদের কুল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছিল। এর ফলে তারা দু’বছর আগে থেকে কুলগাছ লাগাতে শুরু করে। তিনি জানান, প্রথম দুই বছর লাভের অঙ্ক কম গুনলেও এ মওসুমে আশানুরূপ ফলনসহ বেশি লাভ পাওয়ায় আগামী মওসুমে কৃষকেরা কুল চাষে বেশি ঝুঁকে পড়বেন।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এস এম সিরাজুল ইসলাম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষিদের প্রশিণ, চারা সরবরাহ ও ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলে বাউকুল অবহেলিত নীলফামারীর মঙ্গা মোকাবেলায় যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
২২ ফেব্রুয়ারী/নিউজরুম