নিম্নমানের লবণের ছড়াছড়ি

0
245
Print Friendly, PDF & Email

ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক( ফেব্রুয়ারী): বাজারে এখন নিম্নমানের প্যাকেটজাত খাওয়ার লবণের ছড়াছড়িকিছু আমদানিকারক পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবাধে নিম্নমানের লবণ আমদানি করে তা প্যাকেটজাত করে বাজারে ছেড়েছেনএতে ঠকছেন ক্রেতারা
লবণ বাজারজাতকারী বড় প্রতিষ্ঠান এসিআই এবং কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই করে মোড়কজাত নিম্নমানের লবণ বিক্রির প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের নিত্যপণ্য তদারক সেলএ নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ট্যারিফ কমিশনে বৈঠক ডাকা হয়েছে
গত ২০১১-১২ মৌসুমে দেশে চাহিদার তুলনায় কম লবণ উত্পাদিত হয়বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, তখন খাওয়ার লবণের চাহিদা ছিল ১৩ লাখ ২৭ হাজার টনআর উত্পাদিত হয় ১১ লাখ ৬৯ হাজার টনসে কারণে গত বছর হঠাত্ করেই লবণের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত জুনে অবাধে লবণ আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়আমদানির সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোও হয়
অবশ্য লবণের চাহিদা নিয়ে ভিন্নমত আছে ট্যারিফ কমিশনেরসংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দেশে খাওয়ার লবণের চাহিদা ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টনশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে দুই লাখ ৮৪ হাজার এবং হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে চাহিদা আরও দুই লাখ ২৭ হাজার টন লবণসব মিলিয়ে চাহিদা ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন১০ লাখ টন পরিশোধিত খাওয়ার লবণ উত্পাদনে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন অপরিশোধিত লবণ প্রয়োজন বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন
ট্যারিফ কমিশনের তদারক সেলের সদস্য মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি করা নিম্নমানের লবণ প্যাকেটজাত করে বিক্রির প্রমাণ আমরা পেয়েছিএ দেশে বাজাজ এবং টাটার কোনো পরিবেশক না থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের নামেও লবণ বাজারজাত করা হচ্ছেএতে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে
অভিযোগ: কনফিডেন্স সল্ট গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর আমদানি করা নিম্নমানের খাওয়ার লবণ অনুমোদনহীনভাবে বিপণনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে একটি আবেদন করে
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সফিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আবেদনে বলা হয়, দেশের ৩০০ লবণ কারখানার মধ্যে এখন ১৬০টি চালু রয়েছেমাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে লবণ (মিহিদানার) উত্পাদন করছেএগুলো হলো কনফিডেন্স, এসিআই, মোল্লা সল্ট, সোনারগাঁও সল্ট এবং এস এ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডএসব প্রতিষ্ঠান দেশীয় চাহিদার ২৫ শতাংশ উত্পাদন ও বিপণন করছে
আবেদনে বলা হয়, গত বছর লবণ উত্পাদন কম হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লবণ আমদানির অনুমতি দেয়কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে লবণ ব্যবসায় জড়িত নন, এমনকি কারখানাও নেইএমন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে নিম্নমানের পরিশোধিত লবণ আমদানি করে এবং সরকারের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে তা বাজারজাত করেছেনএ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কও নকল করা হয়েছে
ভবিষ্যতে পরিশোধিত লবণ আমদানির সুযোগ না দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছে কনফিডেন্স
এদিকে এসিআই সল্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর স্বাক্ষরিত অপর একটি আবেদন করা হয় ১১ ফেব্রুয়ারিতাতে অভিযোগ করা হয়, সরকার যে পরিমাণ লবণ আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল, কিছু আমদানিকারক তারচেয়ে অনেক বেশি আমদানি করেছেনমিথ্যা ঘোষণায় লবণ আমদানি হওয়ায় সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেতা ছাড়া আমদানি করা হয়েছে খুবই নিম্নমানের এবং আয়োডিনবিহীন লবণএসব লবণ বাজারজাতকরণে বিসিক ও বিএসটিআইয়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি
নিম্নমানের লবণ: দুটো অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে ট্যারিফ কমিশনবাজার থেকে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে সংস্থটি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছেএগুলো হলো পটিয়ার চানখালী সল্ট ক্রাসিং অ্যান্ড রিফাইনারি (ফাইন চয়েস ব্র্যান্ড), ফতুল্লার কাশিপুর সল্ট ওয়াশিং ফ্যাক্টরি (আইসিএল সল্ট), মোস্তফা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ (টাটা গোল্ড), অগ্রণী লবণ ফ্যাক্টরি (গ্লোবাল হোয়াইট সুপার সল্ট), বাজাজ সল্ট, নিউ কোয়ালিটি সল্ট লিমিটেড (তৃপ্তি), বুড়িগঙ্গা সল্ট লিমিটেড, শামা সল্ট লিমিটেড এবং সিকদার সল্ট লিমিটেড
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজাজ ব্র্যান্ডের এক কেজির প্যাকেটজাত লবণের দাম ৩০ টাকাঅথচ কনফিডেন্সের মতো ব্র্যান্ডের লবণের দাম ২৮ টাকাআধা কেজির লবণের প্যাকেট টাটা গোল্ড ব্র্যান্ডের দাম ১৪ টাকা, তৃপ্তি ব্র্যান্ডের দাম ১৫ টাকা, ফাইন চয়েজের দাম ১৬ টাকাআবার দেখা গেছে, ফাইন চয়েজ লবণের মোড়ক হুবহু কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের মোড়কের মতোএকইভাবে আরেকটির মোড়ক এসিআইর লবণের মোড়কের মতো
শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোস্তফা সল্ট আট হাজার, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ (নং-১ প্রিমিয়াম সল্ট) ৪০ হাজার, খুলনার রূপসার রমনা সল্ট রিফাইনারি সাত হাজার টন অবিচূর্ণ (বোল্ডার) লবণ আমদানি করেছে
চিহ্নিত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর লবণ আমদানির কোনো তথ্য কাস্টমস হাউস থেকে পাওয়া যায়নিঅর্থাত্ প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ লবণ আমদানি করেছে
চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অবিচূর্ণ লবণ আমদানিতে ৯১ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং পরিশোধিত লবণ আমদানিতে ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত লাখ ৩৪ হাজার ২৬০ টন লবণ আমদানি হয়েছে
অবশ্য ২০১২-১৫ সালের আমদানিনীতিতে লবণ আমদানি নিরুত্সাহিত করা হয়েছেএতে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ লবণ (পরিশোধিত/অবিচূর্ণ বা বোল্ডার/অন্যান্য) আমদানিযোগ্য হবে না

 

নিউজরুম্

 

শেয়ার করুন