ব্যবসা ও অর্থনীতিডেস্ক(২১ ফেব্রুয়ারী): অর্থনীতিতে প্রস্তাবিত ‘সংস্কার’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এমনটি জানালো ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড- আইএমএফ। বর্ধিত ঋণ সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়কালে এ কথা জানিয়েছে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদ।ওয়াশিংটন সময় বুধবার রাতে সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় কিস্তির ১৩৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করার কথা জানানো হয়। এ সময় নির্বাহী পর্ষদ সভাপতি নায়োউকি সিনোহারা’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে (অর্থনীতির) কাঠামোগত সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে’।এমন পরিস্থিতিতে ঋণের শর্ত লঙ্ঘিত হলেও সরকারের অনুরোধে বর্ধিত ঋণ সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করলো আইএমএফ। ১৩৯.৪ মিলিয়ন ডলারের এই ঋণ কিস্তি এর আগে গত নভেম্বরে ছাড় হবার কথা থাকলেও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সংস্কার না করার কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়েছিল।
আইএমএফের এই বর্ধিত ঋণ সহায়তা কর্মসূচির অন্যতম শর্ত ছিল ‘কঠিন শর্তে’ ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নেয়া যাবে না। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে সমরাস্ত্র কিনতে কঠিন শর্তে দেশটির কাছ থেকেই ১৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চুক্তি সম্প্রতি করেছে সরকার। চুক্তি অনুসারে ২০১৭ সালের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহ শেষ করবে রাশিয়া, আর পরের বছর থেকেই ঋণ পরিশোধ শুরু করবে বাংলাদেশ।গত ১৫ জানুয়ারির ওই চুক্তির পর আইএমএফ এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয়। জবাবে সরকার শর্ত শিথিল করার অনুরোধ জানালেও সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। সবশেষ বুধবারের বোর্ড সভায় স্বস্তির খবর এলো বাংলাদেশের জন্য।শর্ত লঙ্ঘণের বিষয়টিতে ছাড় দিয়ে ঋণের কিস্তি ছাড়ে সম্মতি দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে, জানায় সংস্থাটি।এসময় আইএমএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী পর্ষদ সভাপতি জনাব সিনোহারা বলেন, আইএমএফ প্রস্তাবিত বেশ কিছু অর্থনৈতিক সংস্কার করেছে বাংলাদেশ। বলা হয়, ‘সংস্কারের ক্ষেত্রে বিলম্ব এড়াতে আভ্যন্তরীণ নীতিতে ঐক্যমতে পৌঁছতে আরো বেশি সমন্বয় দরকার’।সিনোহারা বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে নতুন আইন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এর সময়োচিত বাস্তবায়নের জন্য খুব যত্নশীল পরিকল্পনা ও সহযোগিতা, বিশেষত কর সংগ্রহ প্রক্রিয়ার স্বয়ংক্রিয় করার দরকার হবে।ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি এড়াতে, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো থেকে আসা ঝুঁকি মোকাবিলায় আর্থিক খাতে সুশাসন শক্তিশালী করতে ব্যাংকিং আইনে সংশোধনী দরকার’।
অন্য যেসব ক্ষেত্রে সংস্থাটি সংস্কার চায় যেসবও উল্লেখ করেন সিনোহারা। এর মধ্যে রয়েছে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি রাজস্ব প্রশাসন, সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সংস্কার।
সিনোহারা বলেন, অর্থনীতিতে একটি স্থিতিশীল ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক পরিবেশ অর্জনে এবং ঝুঁকি কমাতে ২০১৩ সালে নীতিগত নিরাপত্তার বিষয়টি আরো জোরদার করার দরকার আছে। সেই লক্ষ্যে অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন দরকার এবং ঋণের পরিমান এমন স্তরে ধরে রাখতে হবে যা সামলানো যায়।
প্রসঙ্গত, তিন বছর মেয়াদী বর্ধিত ঋণ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ৯৭৫.৯ মিলিয়ন ডলারের ঋণ গত এপ্রিলে অনুমোদন করে আইএমএফ। ৩ বছরে সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেয়া হবে। বুধবার দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় পাওয়ায় মোট ছাড় পাওয়া ঋণ দাড়ালো ২৭৮.৮ মিলিয়ন ডলারে। সুদমুক্ত এই ঋণ পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
নিউজরুম্