ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর। দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে লাখো কণ্ঠে দিনরাত উচ্চারিত হচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি। ঠিক তখনও শাহবাগের আশপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক ছাত্রাবাসে চলছে শিবিরের গোপন কার্যক্রম।
রাজধানীতে হরতালসহ শিবিরের নানা কর্মসূচিতে এ সকল মেস থেকে শিবির ক্যাডাররা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে অন্তত শতাধিক ছাত্রাবাস রয়েছে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে কোনঠাসা শিবির এ ছাত্রাবাসগুলোতে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ঢাবি সংলগ্ন এলাকায় শিবিরের কার্যক্রম বিষয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল জলিল মÐল বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘নাশকতার জন্য শিবিরের বৈঠক কিংবা মিছিল-মিটিং হলে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। তা প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
তিনি শিবির যদি এ ধরনের মেসে গোপন মিটিং বা জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করে কিংবা নাশকতা করতে পারে এমন সন্দেহ হলে তাহলে নিকটস্থ থানায় খবর দেওয়ার জন্য আহবান জানান সকলের কাছে।
কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে গত ৫ ফেব্রæয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু হয়। মুহূর্তেই এ আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিনত হয়। রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের পাশাপাশি উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ।
এ আন্দোলনের মধ্যেই শিবির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে সরকারকে সরে আসা, যুদ্ধাপরাধীধের অভিযোগে আটক শীর্ষ জামায়াত নেতাদের মুক্তি, ট্রাইবুন্যাল ভেঙ্গে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মর্সূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে হরতালও ছিল।
এ কর্মসূচিগুলোতে শিবির ক্যাডাররা বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
শাহবাগে যখন গণআন্দোলন তুঙ্গে তখনও এর আশেপাশে অন্তত শতাধিক ছাত্রাবাসে চলছে শিবিরের গোপন কার্যক্রম। বিশেষ করে পরীবাগের ফোকাস কোচিংয়ের গলি ও কাটাবন মসজিদ মার্কেটের সামনে কয়েকটি মেসে প্রতিদিনই শিবিরের গোপন বৈঠক চলছে।
আর এসব গোপন বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন কি করে আরো বেগবান করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে পরীবাগ, আজিমপুর, কাটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, পলাশী, স্টাফ কোয়ার্টার, সেগুনবাগিচা, ফার্মগেট, বিজয়নগর, সলিমুল্লাহ এতিমখানা, লালবাগ, চানখারপুল, পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলি এবং বিজিবি ১ নম্বর গেট এলাকায় শিবিরের শতাধিক ছাত্রাবাস রয়েছে। এ মেসগুলোতে স্থানীয় শিবির ক্যাডারের পাশাপাশি বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা থাকে। সম্প্রতি কাওরানবাজার, পান্থপথ, ল্যাব এইড এবং ধানমণ্ডি এলাকায় শিবিরের ঝটিকা মিছিল ও বাস ভাঙচুর হয়েছে, সেগুলোতে এসব এলাকার শিবির ক্যাডাররা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এসব এলাকার মেসগুলোতে শিবির দিনে রাতে গোপন বৈঠক করে থাকে। এসব বৈঠকে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারকে কি করে বাধাগ্রস্ত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যে শিবির ক্যাডারদের আনা হয়, তারা এসব এলাকায়ই অবস্থান করে।
স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, পুলিশের চোখ এড়িয়ে শিবির ক্যাডারদের সক্রিয় অবস্থান আইন-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তারা যে কোনো মুহূর্তে সংঘটিত হয়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। এ এলাকাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও অভিযান পরিচালনার দাবি জানান তারা।
এসব এলাকার শিবিরের কার্যক্রম বিষয়ে ডিএমপি’র রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা এ ধরনের খবরে প্রতি রাতে অভিযান পরিচালনা করছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এসব এলাকা আমরা নজরদারির মধ্যে রাখি। গোয়েন্দা সদস্যদের দিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, কোনটি শিবিরের মেস। এছাড়া কোথায় কোথায় গোপন মিটিং হচ্ছে সে ব্যাপারেও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’’
নূরুল ইসলাম বলেন, ‘‘নিরাপদ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’’
ফেব্রুয়ারি ২১, ২১০৩