স্পোর্টস ডেস্ক(২১ ফেব্রুয়ারী):‘চীন-বধ’ কাব্য লিখে নতুন উচ্চতায় উঠল বাংলাদেশের হকি। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ২ গোলে এগিয়েও ৫ গোলের হারের হতাশাও একটু দূর হলো। দিল্লির ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়াম কাল দেখল নতুন এক বাংলাদেশকে। শক্তিশালী চীনকে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিশ্ব হকি লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলেন জিমি-চয়নরা।
র্যাঙ্কিংয়ে চীন ১৮, বাংলাদেশ ৪০। অসম লড়াই-ই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু না, দুর্দান্ত স্টিক ওয়ার্ক ও দলীয় শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে রীতিমতো চমকেই দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্ট্রাইকার রাসেল মাহমুদ জিমির দাপটে চীনারা শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠেতে পারেনি।
ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে ড্র্যাগ ফ্লিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মামুনুর রহমান চয়ন। ১১ মিনিটে ফিল্ড গোলে চীনকে ম্যাচে ফেরান ইয়োবু না। ২৭ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে চীনকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক মি জি।এরপর মাঠে ত্রাস ছড়াতে শুরু করেন জিমি। দু-দুটি গোল বানিয়ে এক অর্থে জয়টা ছিনিয়ে নেন তিনিই।
বিরতির ঠিক আগে জিমির সাজিয়ে দেওয়া বলে স্টিক ছুঁইয়ে স্ট্রাইকার মইনুল ইসলাম কৌশিক করেন ২-২। ৫০ মিনিটে আসে জয়সূচক গোল, জিমির মাপা পাসে পুষ্কর খীসা বাংলাদেশকে এনে দিলেন উল্লাসে মেতে ওঠার গোল।
জিমি নিজে খেলেছেন, মাঝমাঠে নেমে বল নিয়ে উঠেছেন। চীনারা তাই মাঝমাঠে সুবিধা করতে পারেনি। মাঠের অনেকটা জায়গাজুড়ে খেলেছেন অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড।ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তাই তাঁরই হাতে উঠেছে।
চীন বাংলাদেশের পোস্টে হিট নিয়েছে ৯টি, বাংলাদেশ ১১টি। শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রতি-আক্রমণগুলো ছিল দ্রুতলয়ের। এ সময় জিমির একটা হিট বাইরে যায়। একটা সেভ করেন চীনের গোলরক্ষক।
প্রথমার্থে বলের দখলে এগিয়ে ছিল চীন (৬০-৪০)। দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিট পর থেকেই মাঠে অন্য এক বাংলাদেশ। চীনের চমকেই যাওয়ার কথা। তবে ম্যাচের পর ফোনে জিমির কণ্ঠটা ধিরস্থিরই শোনাল, ‘চীনকে হারানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা এসেছিলাম। সেটি রাখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’ আরেক নায়ক চয়নের কথা, ‘এই ম্যাচে জেতার জন্য আমরা নিজেদের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে মাঠে। এটা গোটা দলের জয়। জিমি দুর্দান্ত খেলেছে।’
চীনের সঙ্গে এর আগে বাংলাদেশ খেলেছে ১০ ম্যাচ। কাল একাদশ ম্যাচে এল তৃতীয় জয়। সর্বশেষ ২০০১ সালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী কাপে টাইব্রেকারে (৮-৭)। প্রথম জয় ১৯৯৩ সালে জাপানে, এশিয়া কাপে (২-১)। ১৯৯৯ সালে ১-১ ড্র মালয়েশিয়ায়।বাংলাদেশ ২০০৩ সালে হেরেছে ৮-০ গোলে! সর্বশেষ গুয়াংজু এশিয়াডে বাংলাদেশ হেরেছে ৪-১ গোলে।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করেছে বাংলাদেশ। ব্যাংককে সম্প্রতি জিতেছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ, তারপর সিঙ্গাপুরে এই বিশ্ব হকি লিগের প্রথম রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন। অথচ দলের সঙ্গে একজন ট্রেনার, ফিজিও, ভিডিও বিশ্লেষক পর্যন্ত নেই!
খেলোয়াড়েরা দুর্ভাগাও, সরাসরি বিমানে ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার সৌভাগ্য তাঁদের হয়নি। পত্রিকায় লেখালেখি হওয়ায় শেষে বাসের পরিবর্তে বিমানে কলকাতা নেওয়া হয় খেলোয়াড়দের। সেই দল কিনা দুর্দান্ত হকি খেলল চীনের বিপক্ষে!
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা থাকলে পরের রাউন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের আশা থাকত উঁচুতে। তবে চীনকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ল পরের ম্যাচগুলোর জন্য। আজই বাংলাদেশ নামছে ওমানের বিপক্ষে।
নিউজরুম