সিরাজগঞ্জ: বুধবার রাতে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার কথিত মাদক পল্লী মাহমুদপুর মহল্লায় পুলিশের মারপিটে ফরিদ আহমেদ (৩২) নামের এক মাদকসেবীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।ফরিদ মাহমুদপুর মহল্লার মাদক ব্যবসায়ী রহিজ উদ্দিনের ছেলে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং সদর থানার অভিযুক্ত দু’উপ-পরিদর্শকের বিচারের দাবিতে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসি লাশ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ-মিছিল শেষে বাজার স্টেশন মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা জেল সুপারের জিপসহ কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করে।
এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধরা পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করলে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, আ’লীগ, যুবলীগ ও অটোরিক্সা শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বুধবার রাত ১০টায় এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের খালা হাসিনা বেগম জানান, রাতে সদর থানার দারোগা আব্দুস সালাম ও দারোগা সেলিম ভাগ্নে ফরিদের বাড়িতে ঢোকে। পুলিশ দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই দুই দারোগা পুকুর পাড়ে ফরিদকে ধরে কিলঘুষি ও লাথিসহ বেধড়ক পেটাতে থাকে।
এক পর্যায়ে ভাগ্নে ফরিদ অচেতন হয়ে পড়লে তার স্ত্রীকে খোঁজার নাম করে ওই দুই দারোগা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। ফরিদকে উদ্ধার করে হাসপাতলে নেওয়ার পথেই সে মারা যায়। ঘটনার পর পরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশসহ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনস্থালে পৌঁছেন সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম খান। তিনি নিহতের স্বজন ও এলাকবাসীর কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে অবগত হন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এ অবস্থায় বিক্ষুদ্ধ জনতা রাত সোয়া ১১টার দিকে লাশ নিয়ে শহরে মিছিল বের করে।
মিছিলটি শহরের বাজার স্টেশন ও চামড়া পট্টি প্রদক্ষিণকালে কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
নিহতের বোন শিল্পী ও তাদের প্রতিবেশী রুবেলসহ অনেকেই জানান, রাত ৯টার দিকে ওই দুই দারোগা ওই এলাকার বাবু নামে এক মহিলার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। এরপর তারা ফরিদের বাড়িতে ঢোকে। পুলিশকে ঘুষ দিয়েই অনেকে মাদকের ব্যবসা করে। ঘুষ না পেলেই এভাবে মারপিট করা হয় বলে তাদের অভিযোগ।
ফরিদের পিতা মাদক ব্যবসায়ী রহিজ উদ্দিন জানান, সকাল সোয়া ১১টার দিকে এসআই সেলিম মোবাইল ফোনে তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন জানান, ঘটনার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪