ঢাকা: ব্রিটেনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাইদা ওয়ার্সি বলেছেন, “শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে চলমান আন্দোলন যদি ফাঁসির দাবিতে হয়, তবে তাতে ব্রিটেনের সমর্থন নেই। কারণ ব্রিটেন মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে।”
বুধবার বিকেলে রাজধানীতে ব্রিটিশ হাইকমিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ করে নয়, আদর্শিকভাবে দলটিকে মোকাবিলা করতে হবে।”
বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারোনেস ওয়ার্সি বলেন মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে ব্রিটেন সারা বিশ্বে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ফাঁসির মত মাত্র একটি ইস্যু নিয়ে আন্দোলন না করে শাহবাগে বিস্তারিত আরো অনেক ইস্যুও সামনে আনা যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোন গণতান্ত্রিক দেশে কাউকে নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নই আমি। আপনি যদি কাউকে অপছন্দ করেন তাহলে ব্যালটের মাধ্যমেই তার জবাব দেওয়া উচিৎ।’
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে টানা ১৬ দিনের মতো আন্দোলন চলছে। এতে ছাত্র-শিক্ষক-ব্লগার, শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা নির্বিশেষে সবাই অংশ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো সাইদা ওয়ার্সি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের যে বিচার বাংলাদেশে চলছে তা গোটা বিশ্বে এই বার্তাই পৌঁছে দেয় যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে চাইছে। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত যে ৪০ বছর আগেও যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তারও বিচার হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিচার কার্য সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও আইনের শাসনের দ্বারা পরিচালিত হবে এটিই সবার চাওয়া। বিচার শুধু করলেই হবে না, বিচার যে হয়েছে সেটাও দৃশ্যমান হতে হবে।’
শাহবাগের আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এটি খুবই বড় বিষয় যে, তরুণ সমাজ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়েছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে। সবারই শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে। এ জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই।’
তবে, ‘শাহবাগে তরুণরা ফাঁসির দাবি নিয়ে যে আন্দোলন করছে তাকে আমি সমর্থন করি না’ উল্লেখ করে নিজের অবস্থানের পক্ষে তিনি বলেন ‘ব্রিটেন মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণরা ফাঁসির জন্য আন্দোলন করবে এ বিষয়ে আমি একমত নই। আমি মনে করি তরুণরা আন্দোলন করবে, তাদের ভবিষ্যতের জন্য, দেশের উন্নয়ন কামনায়।’
তিনি বলেন, ‘তারা আন্দোলন করবে, রাজনীতিকদের তাদের কথা শুনানোর জন্য, তারা বলবে দেশের জন্য তারা ভিন্ন কিছু করবে। পাশাপাশি তারা দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রাখার কথা বলবে নিজেদের উজ্জল ভবিষ্যতের স্বার্থে।’
আগামী নির্বাচন প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওয়ার্সি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন কোন ধরণের সরকারের অধীনে হবে তা যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশ বলে দেবে না। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল আলোচনা করেই এটি ঠিক করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ওয়ার্সি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি যে ধারণা পেয়েছেন তা হলো কমনওয়েলথভুক্ত গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথ চলা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনকে সবাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। তারা সবাই মনে করেন, নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন।’
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ নিরসণে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য মধ্যস্থতা করবে কিনা জানতে চাইলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ, এ দেশের জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলের বন্ধু। তবে আমি মনে করি না বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করা যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব। মধ্যস্থতা করার মতো ব্যক্তি এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই আছেন।’
যুক্তরাজ্য জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করে কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ব্যারোনেস ওয়ার্সি বলেন,‘কোনো রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা তা বিবেচনা করা আমার কাজ নয়। এটি বিবেচনা করা সংশ্লিষ্ট দেশের দায়িত্ব। আমি মনে করি, নিরাপরাধ বেসামরিক জনগণের ক্ষতিসাধনকারী, দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী ও সংঘাতে জড়িত সন্ত্রাসী-উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমার ভিন্নমত নেই। তবে তাদের মোকাবিলার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো ভোট।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আমি একমত। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ সকল সুবিধা নিশ্চিত করা মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব।’
বুধবার সাইদা ওয়ার্সির তিনদিনের বাংলাদেশ সফর শেষ হচ্ছে। রাতেই তিনি ব্রিটেনে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৩