২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।।
বর্তমান এই সময়ে দেশে রাজনৈতিক দলবিশেষকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি একটি বহুল আলোচিত বিষয়ে রূপ নিয়েছে। সরকারি দল ও সরকার সমর্থক দলগুলোর নেতানেত্রীদের বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, এই নিষিদ্ধকরণের কাজটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এবং সরকার শিগগিরই সেই নিষিদ্ধ করার ঘোষণাটি দিতে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। শাহবাগের বামপন্থী ব্লগারদের পরিচালিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও দলবিশেষকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও উচ্চারিত হয়েছে। ফলে ইসলামি দলগুলোকে কিংবা ভিন্ন প্রেক্ষাপট দাঁড় করিয়ে কোনো একটি দলবিশেষকে নিষিদ্ধ করা-না-করার বিষয়টি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি। তার এই সফরের সময় তিনি বলেছেন, ‘নিষিদ্ধ করে নয়, জামায়াত-শিবিরকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা উচিত’। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে তার কার্যালয়ে বৈঠক শেষে ওয়ারসি বলেন, ‘আমি একজন ডেমোক্র্যাট। তাই ব্যান বা নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই আমি।’
মোট কথা, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ধারণাকে সমর্থন করে না ব্রিটেন। সাঈদা ওয়ারসি মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে না। ব্রিটেন আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। ডা. দীপু মনির সাথে সাক্ষাতের সময় সাঈদা ওয়ারসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সমর্থনযোগ্য নয়। আমি মনে করি, এটি একটি আদর্শিক লড়াই। এ লড়াইয়ে আদর্শ দিয়েই আপনার প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে। এ আদর্শিক দিকগুলো সাধারণ জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। জনগণই ঠিক করবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এরা কোন আদর্শকে গ্রহণ করবে।’
গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবে গণসমর্থন আদায়ের জন্য। জনগণই তখন ঠিক করে নেবে কোন রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক আদর্শ তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তাই কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিসিদ্ধ হতে পারে না। এ ধরনের নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ বরং নতুন নতুন রাজনৈতিক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা থেকে এ ধরনের সত্যেরই প্রতিফলন পাওয়া গেছে।
অতএব আমরা মনে করি, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি গণতন্ত্রের সেই মূল কথাটিই বলে গেছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে। সরকার এই গণতন্ত্রের মূল কথা যত বেশি অনুধাবন করবে, দেশ-জাতির মঙ্গল ততই বেশি হবে। গণতান্ত্রিক নিয়ম-নীতির পথ ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, দেশে গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতা মজবুত হোক, সেই কামনা রইল আমাদের পক্ষ থেকে।